পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ماده " কিন্তু এই-সকল খেলার মধ্যে এক-একবার জুলিথার হৃদয়ট হায়-হায় করিয়া উঠিত ; ভাবিত, সম্রাটপুত্রীর জীবনের এই কি পরিণাম | একদিন প্রাতে দালিয়া আসিবামাত্র জুলিখা তাহার হাত চাপিয়া কহিল, ‘দালিয়া, এখানকার রাজাকে দেখাইয়া দিতে পার ? ‘পারি। কেন বলে দেখি ? আমার একটা ছোরা আছে, তাহার বুকের মধ্যে বসাইতে চাহি । প্রথমে দালিয়া কিছু আশ্চর্য হইয়া গেল। তাহার পরে জুলিথার হিংসাপ্রখর মুখের দিকে চাহিয় তাহার সমস্ত মুখ হাসিতে ভরিয়া গেল ; যেন এতবড়ো মজার কথা সে ইতিপূর্বে কখনো শোনে নাই – যদি পরিহাস বল তো এই বটে, রাজপুত্রীর উপযুক্ত। কোনো কথা নাই, বার্তা নাই, প্রথম আলাপেই একখানি ছোরার আধখানা একটা জীবন্ত রাজার বক্ষের মধ্যে চালনা করিয়া দিলে এইরূপ অত্যন্ত অন্তরঙ্গ ব্যবহারে রাজাট হঠাৎ কিরূপ অবাক হইয়া যায়, সেই চিত্র ক্রমাগত তাহার মনে উদিত হইয়া তাহার নিঃশব্দ কৌতুকহাসি থাকিয়া থাকিয়া উচ্চহাস্তে পরিণত হইতে লাগিল । পঞ্চম পরিচ্ছেদ তাহার পরদিনই রহমত শেখ জুলিখাকে গোপনে পত্র লিখিল যে, আরাকানের নূতন রাজা ধীবরের কুটিরে দুই ভগ্নীর সন্ধান পাইয়াছেন এবং গোপনে আমিনাকে দেখিয়া অত্যন্ত মুগ্ধ হইয়াছেন– তাহাকে বিবাহার্থে অবিলম্বে প্রাসাদে আনিবার আয়োজন করিতেছেন। প্রতিহিংসার এমন সুন্দর অবসর আর পাওয়া যাইবে না।’ তখন জুলিখা দৃঢ়ভাবে আমিনার হাত ধরিয়া কহিল, ঈশ্বরের ইচ্ছা স্পষ্টই দেখা যাইতেছে। আমিন, এইবার তোর জীবনের কর্তব্য পালন করিবার সময় আসিয়াছে— এখন আর খেলা ভালো দেখায় না।’ দালিয়া উপস্থিত ছিল, আমিনা তাহার মুখের দিকে চাহিল ; দেখিল সে সকৌতুকে হাসিতেছে । আমিন তাহার হাসি দেখিয়া মৰ্মাহত হইয়া কহিল, 'জান দালিয়া ?—আমি রাজব হইতে যাইতেছি ' ' - وقام দালিয়া হাসিয়া বলিল, “সে তো বেশি ক্ষণের জন্য নয়।’ আমিনা পীড়িত বিস্মিত চিত্তে মনে মনে ভাবিল, ‘বাস্তবিকই এ বনের মৃগ, এর সঙ্গে মানুষের মতো ব্যবহার করা আমারই পাগলামি ।’