পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন ృNలి কর্মযোগ জগতে আনন্দযজ্ঞে তার যে নিমন্ত্রণ আমরা আমাদের জীবনের সঙ্গে সঙ্গেই পেয়েছি তাকে আমাদের কেউ কেউ স্বীকার করতে চাচ্ছে না । তারা বিজ্ঞানশাস্ত্র আলোচনা করে দেখেছে । তারা বিশ্বের সমস্ত রহস্য উদঘাটন করে এমন একটা জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে যেখানে সমস্তই কেবল নিয়ম । তারা বলছে ফাকি ধরা পড়ে গেছে— দেখছি য-কিছু সব নিয়মেই চলেছে, এর মধ্যে আনন্দ কোথায় ? তারা আমাদের উৎসবের আনন্দরব শুনে দূরে বসে মনে মনে হাসছে। স্বৰ্য চন্দ্র এমনি ঠিক নিয়মে উঠছে, অস্ত যাচ্ছে, যে, মনে হচ্ছে তারা যেন ভয়ে চলছে, পাছে এক পল-বিপলেরও ক্রটি ঘটে। বাতাসকে বাইরে থেকে যতই স্বাধীন বলে মনে হয়, যারা ভিতরকার খবর রাখে তারা জানে, ওর মধ্যেও পাগলামি কিছুই নেই— সমস্তই নিয়মে বাধা । এমন-কি, পৃথিবীতে সব চেয়ে খামখেয়ালি বলে যাকে মনে হয় সেই মৃত্যু, যার আনাগোনার কোনো খবর পাই নে বলে যাকে হঠাৎ ঘরের দরজার সামনে দেখে আমরা চমকে উঠি, তাকেও জোড় হাতে নিয়ম পালন করে চলতে হয়— একটুও পদস্খলন হবার জো নেই। মনে কোরো না এই গৃঢ় খবরটা কেবল বৈজ্ঞানিকের কাছেই ধরা পড়েছে। তপোবনের ঋষি বলেছেন ; ভীষাম্মাদবাত: পবতে । র্তার ভয়ে, তার নিয়মের অমোঘ শাসনে বাতাস বইছে ; বাতাসও মুক্ত নয়। ভাষান্মাদগ্নিশ্চেন্দ্রশ মৃত্যুধাবতি পঞ্চমঃ । তার নিয়মের অমোঘ শাসনে কেবল যে অগ্নি চন্দ্র স্বর্য চলছে তা নয়, স্বয়ং মৃত্যু, যে কেবল বন্ধন কাটবার জন্যেই আছে, যার নিজের কোনো বন্ধন আছে বলে মনেও হয় না, সেও অমোঘ নিয়মকে একাস্ত ভয়ে পালন করে চলছে। তবে তো দেখছি ভয়েই সমস্ত চলছে, কোথাও একটু ফাক নেই। তবে আর আনন্দের কথাটা কেন ? যেখানে কারখানাঘরে আগাগোড়া কল চলছে সেখানে কোনো পাগল আনন্দের দরবার করতে যায় না । \○8 ○