পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૭ রবীন্দ্র-রচনাবলী করে সংসারে মানবাত্মার স্বষ্টিক্ষেত্রের মধ্যে প্রবেশ করি, যেখানে নানা দিক থেকে নানা অভাবের প্রার্থনা, দুঃখের ক্ৰন্দন, মিলনের আকাঙ্ক্ষা এবং সৌন্দর্যের নিমন্ত্রণ মামাকে আহবান করছে— যেখানে আমার নানাভিমুখী শক্তির একমাত্র সার্থকত। সুদীর্ঘ কাল ধরে প্রতীক্ষা করে বসে আছে এবং যেখানে বিশ্বমানবের মহাযজ্ঞে আনন্দের হোমহুতাশনে আমার জীবনের সমস্ত সুখদুঃখ লাভক্ষতিকে পুণ্য আহুতির মতে সমর্পণ করে দেবার জন্যে আমার অস্তরের মধ্যে কোন তপস্বিনী মহানিস্ক্রমণের দ্বার খুজে বেড়াচ্ছে । ফাল্গুন ১৩১৭ আত্মবোধ কয়েক দিন হল পল্লীগ্রামে কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের দুইজন বাউলের সঙ্গে আমার দেখা হয় । আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলুম, তোমাদের ধর্মের বিশেষত্বটি কী আমাকে বলতে পার ? একজন বললে, বলা বড়ো কঠিন, ঠিক বলা যায় না। আর-একজন বললে, “বলা যায় বৈকি— কথাটা সহজ। আমরা বলি এই যে, গুরুর উপদেশে গোড়ায় আপনাকে জানতে হয় । যখন আপনাকে জানি তখন সেই আপনার মধ্যে র্তাকে পাওয়া যায়। আমি জিজ্ঞাসা করলুম, তোমাদের এই ধর্মের কথা পৃথিবীর লোককে সবাইকে শোনাও না কেন ? সে বললে, ‘যার পিপাসা হবে সে গঙ্গার কাছে আপনি আসবে। আমি জিজ্ঞাসা করলুম, তাই কি দেখতে পাচ্ছ। কেউ কি আসছে। সে লোকটি অত্যন্ত প্রশান্ত হাসি হেসে বললে, সবাই আসবে। সবাইকে আসতে হবে।’ আমি এই কথা ভাবলুম, বাংলাদেশের পল্লীগ্রামের শাস্ত্রশিক্ষাহীন এই বাউল, এ তো মিথ্যা বলে নি। আসছে, সমস্ত মানুষই আসছে। কেউ তো স্থির হয়ে নেই। আপনার পরিপূর্ণতার অভিমুখেই তো সবাইকে চলতে হচ্ছে, আর যাবে কোথায় । আমরা প্রসন্নমনে হাসতে পারি— পৃথিবী জুড়ে সবাই যাত্র করেছে। আমরা কি মনে করছি সবাই কেবল নিজের উদর-পূরণের অন্ন খুজছে, নিজের প্রাত্যহিক প্রয়োজনের চারি দিকেই প্রতিদিন প্রদক্ষিণ করে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে ? না, তা নয়। এই মুহূর্তেই পৃথিবীর সমস্ত মানুষ অন্নের জন্তে, বস্ত্রের জন্যে, নিজের ছোটাে বড়ে কত শত দৈনিক আবশ্বকের জন্যে ছুটে বেড়াচ্ছে— কিন্তু, কেবল তার সেই আহিক গতিতে নিজেকে প্রদক্ষিণ করা নয়, সেই সঙ্গে সঙ্গেই সে জেনে এবং না জেনে একটি