পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন فیفا হয়, সংযত হয়, তখন তার বুঝতে বাকি থাকে না এই তার এক কাকে খুজছে। তার প্রবৃত্তি খুজে মরে নানা বিষয়কে— কেননা, নানা বিষয়কে নিয়েই সে বঁাচে, নানা বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়াই তার সার্থকতা। কিন্তু, যেটি হচ্ছে মানুষের এক, মানুষের আপনি, সে স্বভাবতই একটি অসীম এককে, একটি অসীম আপনিকে খুজিছে— আপনার ঐক্যের মধ্যে অসীম ঐক্যকে অনুভব করলে তবেই তার মুখের স্পৃহা শাস্তি লাভ করে। তাই উপনিষৎ বলেন— একং রূপং বহুধা য: করোতি’ যিনি একরূপকে বিশ্বজগতে বহুধা করে প্রকাশ করেছেন, তিম্ আত্মস্থং যে অনুপশুস্তি ধীরা: র্তাকে যে ধীরেরা আত্মস্থ করে দেখেন, অর্থাৎ যারা তাকে আপনার একের মধ্যে এক করে দেখেন, তেষাং সুখং শাশ্বতং নেতরেষাম তাদেরই সুখ নিত্য, আরকারওঁ না । আত্মার সঙ্গে এই পরমাত্মাকে দেখা এ অত্যন্ত একটি সহজ দৃষ্টি, এ একেবারেই যুক্তিতর্কের দৃষ্টি নয়। এ হচ্ছে “দিবীব চক্ষুরাততং । চক্ষু যেমন একেবারে সহজেই আকাশে বিস্তীর্ণ পদার্থকে দেখতে পায় এ সেই রকম দেখা । আমাদের চক্ষুর স্বভাবই হচ্ছে সে কোনো জিনিসকে ভেঙে ভেঙে দেখে না, একেবারে সমগ্র করে দেখে। সে স্পেক্ট্রস্কোপ যন্ত্র দিয়ে দেখার মতো করে দেখে না, সে আপনার মধ্যে সমস্তকে বেঁধে নিয়ে আপন করে দেখতে জানে। আমাদের আত্মবোধের দৃষ্টি যখন খুলে যায় তখন সেও তেমনি অত্যন্ত সহজেই আপনাকে এক ক’রে এবং পরম একের সঙ্গে আনন্দে সম্মিলিত করে দেখতে পায়। সেই রকম করে সমগ্র করে দেখাই তার সহজ ধর্ম। তিনি যে পরম আত্মা, আমাদের পরম আপনি । সেই পরম আপনিকে যদি আপন করেই না জানা যায়, তা হলে আর যেমন করেই জানা যাক র্তাকে জানাই হল না । জ্ঞানে জানাকে আপন করে জানা বলে না, ঠিক উন্টো— জ্ঞান সহজেই তফাৎ করে জানে, আপন করে জানবার শক্তি তার হাতে নেই। ஆ উপনিষৎ বলছেন— ‘এষ দেবো বিশ্বকৰ্মা’ এই দেবতা বিশ্বকর্ম, বিশ্বের অসংখ্য কর্মে আপনাকে অসংখ্য আকারে ব্যক্ত করছেন, কিন্তু তিনিই ‘মহাত্মা সদা জনানাং হৃদয়ে সন্নিবিষ্ট: মহান আপন-রূপে পরম এক-রূপে সর্বদাই মানুষের হৃদয়ের মধ্যে সন্নিবিষ্ট আছেন। ‘হৃদ মনীষা মনসাভিক,প্তো য এতৎ’ সেই হৃদয়ের যে জ্ঞান, যে জ্ঞান একেবারে সংশয়রহিত অব্যবহিত জ্ঞান, সেই জ্ঞানে যারা একে পেয়ে থাকেন অমৃতাস্তে ভবস্তি’, র্তারাই অমৃত হন । o আমাদের চোখ যেমন একেবারে দেখে আমাদের হৃদয় তেমনি স্বভাবত একেবারে অনুভব করে— মধুরকে তার মিষ্ট লাগে, রুদ্রকে তার ভীষণ বোধ হয়, সেই বোধের