পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"లీవు রবীন্দ্র-রচনাবলী তার গান নয়, অরুণের আলো তার আলো নয়। তার নববর্ষ সংগ্রাম ক’রে আপন অধিকার লাভ করে ; আবরণের পর আবরণকে ছিন্ন বিদীর্ণ করে তবে তার অত্যুদয় ঘটে । বিশ্ববিধাতা স্বৰ্ষকে অগ্নিশিখার মুকুট পরিয়ে যেমন সৌরজগতের অধিরাজ করে দিয়েছেন, তেমনি মানুষকে যে তেজের মুকুট তিনি পরিয়েছেন দুঃসহ তার দাহ । সেই পরম দুঃখের দ্বারাই তিনি মানুষকে রাজগৌরব দিয়েছেন ; তিনি তাকে সহজ জীবন দেন নি। সেইজন্যেই সাধন করে তবে মানুষকে মানুষ হতে হয় ; তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপক্ষী সহজেই পশুপক্ষী, কিন্তু মানুষ প্রাণপণ চেষ্টায় তবে মাতুষ । তাই বলছি আজ যদি তিনি আমাদের জীবনের মধ্যে নববর্ষ পাঠিয়ে থাকেন তবে আমাদের সমস্ত শক্তিকে জাগ্রত করে তুলে তাকে গ্রহণ করতে হবে। সে তো সহজ দান নয়, আজ যদি প্রণাম করে তার সে দান গ্রহণ করি তবে মাথা তুলতে গিয়ে যেন কেঁদে না বলে উঠি ‘তোমার এ ভার বহন করতে পারি নে প্রভু, মনুষ্যত্বের অতিবিপুল দায় আমার পক্ষে দুর্ভর’। প্রত্যেক মানুষের উপরে তিনি সমস্ত মামুষের সাধনা স্থাপিত করেছেন, তাই তো মানুষের ব্রত এত কঠোর ব্রত। নিজের প্রয়োজনটুকুর মধ্যে কোনোমতেই তার নিষ্কৃতি নেই। বিশ্বমানবের জ্ঞানের সাধনা প্রেমের সাধনা কর্মের সাধনা মানুষকে গ্রহণ করতে হয়েছে। সমস্ত মানুষ প্রত্যেক মানুষের মধ্যে আপনাকে চরিতার্থ করবে বলে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এইজন্যেই তার উপরে এত দাবি। এইজন্যে নিজেকে তার পদে পদে এত খর্ব করে চলতে হয় ; এত তার ত্যাগ, এত তার দুঃখ, এত তার আত্মসম্বরণ। कृी মানুষ যখনই মানুষের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছে তখনই বিধাতা তাকে বলেছেন, তুমি বীর। তখনই তিনি তার ললাটে জয়তিলক একে দিয়েছেন। পশুর মতো আর তো সেই ললাটকে সে মাটির কাছে অবনত করে সঞ্চরণ করতে পারবে না ; তাকে বক্ষ প্রসারিত করে আকাশে মাথা তুলে চলতে হবে। তিনি মাহুষকে আহবান করেছেন, হে বীর, জাগ্রত হও । একটি দরজার পর আর-একটি দরজা ভাঙে, একটি প্রাচীরের পর আর-একটি পাষাণপ্রাচীর বিদীর্ণ করো। তুমি মুক্ত হও, আপনার মধ্যে তুমি বদ্ধ থেকে না। ভূমার মধ্যে তোমার প্রকাশ হোক । এই-যে যুদ্ধে তিনি আমাদের আহবান করেছেন তার অস্ত্র তিনি দিয়েছেন। সে তার ব্রহ্মাস্ত্র ; সে শক্তি আমাদের আত্মার মধ্যে রয়েছে। আমরা যখন দুর্বলকণ্ঠে