পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

's 898 . রবীন্দ্র-রচনাবলী । কেবলই বেড়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে, এমনি করে নিজের কৃত্রিমতার বেড়ার মধ্যে সংকীর্ণ জায়গায় আমরা আবদ্ধ হয়ে রয়েছি, বিশ্বভুবনের আশ্চর্য লীলাকে দেখতে পাচ্ছি না। দেখবার বেলা দেখি উপকরণ, আসবাব, বাধা নিয়মে জীবনধন্ত্রের চাকা চালানো। র্তার অালো আর ভিতরে আসতে পথ পায় না ; ওই-সব জিনিসগুলো আড়াল হয়ে দাড়ায় । তিনি আমাদের কাছে আসবেন বলে বলে দিয়েছেন, তুমি তোমার আসনখানি তৈরি করে দাও, আমি সেই আসনে বসব, তোমার ঘরে গিয়ে বসব। অথচ আমরা যা-কিছু আয়োজন করছি সেসব নিজের জন্যে, তাকে বাদ দিয়ে বসেছি। জগৎ জুড়ে হামল পৃথিবীর সকল সৌন্দর্যের মধ্যে তিনি আপনাকে বিকীর্ণ করে রয়েছেন, কেবল একটুখানি কালো জায়গা, আমাদের হৃদয়ের সেই কালে-কলঙ্কে-মলিন ধূলিতে-আচ্ছন্ন সেই একটুমাত্র কালো জায়গাতে র্তার স্থান হয় নি, সেইখানে তাকে আসতে নিষেধ করে দিয়েছি। সেই জায়গাটুকু আমার, সেখানে আমার টাকা রাখব, আসবাব জমাব, ছেলের জন্য বাড়ির ভিত কাটব। সেখানে তাকে বলি, তোমাকে ওখানে যেতে দিতে পারব না, তোমাকে ওখান থেকে নির্বাসিত করে দিলুম। তাই এই এক আশ্চর্য ব্যাপার দেখছি যে, যে মানুষ সকলের চেয়ে বড়ো, যার মধ্যে ভূমার প্রকাশ, সেই মানুষেরই কি সকলের চেয়ে অকৃতার্থ হবার শক্তি হল। আমাদের যে সেই শক্তি তিনিই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আর-সব জায়গায় আমি রয়েছি, কিন্তু তোমার ঘরে নিমন্ত্রণ না করলে আমি যাব না। তিনি বলেছেন, তোমরা কি আমাকে ডাকবে না। তোমরা যা ভোগ করছ আমাকে তার একটু অংশ দেবে না ? যারা কেড়ে নেবার লোক তারা কেড়ে নেয়, তারা অনাদর সইতে পারে না । আর যিনি দ্বারের বাইরে প্রতীক্ষা করে দাড়িয়ে রয়েছেন তাকেই বলেছি, তোমাকে দিতে পারব না। দিনের পর দিন কি এই কথা বলে আমরা সব ব্যর্থ করি নি। একদিন আমাদের এ সংকল্প নিতেই হবে, বলতে হবে, আমার ধন জন মান, আমার সমস্ত খ্যাতিপ্রতিপত্তি জীবনযৌবন তোমারই জন্যে। প্রতিদিন যদি বা ভুলে থাকি আজ একদিন অন্তত বলি, তোমারই জন্য আমার এই জীবন হে স্বামী ! তোমাকে না দিয়ে কি আমি আমাকে ব্যর্থ করলেম না তোমাকেই ব্যর্থ করলেম ? তুমি যে বলেছিলে আমরা অমৃতস্ত পুত্রা, আমরা অমৃতের পুত্র। তুমি যে বলেছিলে, তুমি বড়ো, তোমার জীবন সংসারের মুখের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে থাকবে না। সেই পিতৃসত্য যে আমাদের পালন করতেই হবে, তাকে ব্যর্থ করলে যে তোমার সত্যকেই ব্যর্থ করা হবে। Ն