পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 রবীন্দ্র-রচনাবলী হত তা হলে কখনো তার সঙ্গে আমার সত্য বন্ধুত্ব হত না— বন্ধুর বাহিরের প্রকাশটি আমার চেষ্টা আমার কল্পনার নিরপেক্ষ— তেমনি অনস্তস্বরূপের প্রকাশও তো আমার সংগ্ৰহ-করা উপকরণের অপেক্ষা করে নি ; তিনি অনন্ত বলেই আপনার স্বাভাবিক শক্তিতেই আপনাকে প্রকাশ করছেন। যখনই তিনি আমাদের মানুষ করে স্বষ্টি করেছেন তখনই তিনি আপনাকে আমাদের অন্তরে বাহরে মানুষের ধন করে ধরা দিয়েছেন, তাকে রচনা করবার বরাত তিনি আমাদের উপরে দেন নি। প্রভাতের অরুণ-আভা তো আমারই, বনের শু্যামল শোভা তো আমারই– ফুল যে ফুটেছে সে কার কাছে ফুটেছে। ধরণীর বীণযন্ত্রে যে নানা সুরের সংগীত উঠেছে সে সংগীত কার জন্যে। আর, এই তো রয়েছে মায়ের কোলের শিশু, বন্ধুর-দক্ষিণ-হস্ত-ধরা বন্ধু, এই তো ঘরে বাহিরে যাদের ভালোবেসেছি সেই আমার প্রিয়জন ; এদের মধ্যে যে অনির্বচনীয় আনন্দ প্রসারিত হচ্ছে এই আনন্দ যে আমার আনন্দময়ের নিজের হাতের পাত আসন। এই আকাশের নীল চাদোয়ার নীচে, এই জননী পৃথিবীর বিচিত্র আলপনাঅঁাক বরণবেদিটির উপরে আমার সমস্ত আপন লোকের মাঝখানে সেই সত্যং জ্ঞান-মনন্তং ব্রহ্ম আনন্দরূপে অমৃতরূপে বিরাজ করছেন। এই সমস্ত থেকে, এই তার আপনার আত্মদান থেকে, অবচ্ছিন্ন করে নিয়ে কোন কল্পনা দিয়ে গড়ে কোন দেয়ালের মধ্যে র্তাকে স্বতন্ত্র করে ধরে রেখে দেব। সেই কি হবে আমাদের কাছে সত্য, আর যিনি অন্তর বাহির ভরে দিয়ে নিত্য নবীন শোভায় চিরস্থদের হয়ে বসে রয়েছেন তিনিই হবেন তত্ত্বকথা? তারই এই আপন আনন্দনিকেতনের প্রাঙ্গণে আমরা তাকে ঘিরে বসে অহোরাত্র খেলা করলুম, তবু এইখানে এই সমস্তর মাঝখানে আমাদের হৃদয় যদি জাগল না, আমরা তাকে যদি ভালোবাসতে না পারলুম, তবে জগৎজোড়া এই আয়োজনের দরকার কী ছিল। তবে কেন এই আকাশের নীলিমা, অমারাত্রির অবগুণ্ঠনের উপরে কেন এই সমস্ত তারার চুমকি বসানো, তবে কেন বসন্তের উত্তরীয় উড়ে এসে ফুলের গন্ধে দক্ষিনে হাওয়াকে উতলা . করে তোলে। তবে তো বলতে হয় স্বষ্টি বৃথা হয়েছে, অনন্ত যেখানে নিজে দেখা দিচ্ছেন সেখানে তার সঙ্গে মিলন হবার কোনো উপায় নেই। বলতে হয় যেখানে ঙর সদাব্রত সেখানে আমাদের উপবাস ঘোচে না ; মা যে অন্ন স্বহস্তে প্রস্তুত করে নিয়ে বসে আছেন সস্তানের তাতে তৃপ্তি নেই, আর ধুলোবালি নিয়ে খেলার অন্ন যা সে নিজে রচনা করেছে তাইতে তার পেট ভরবে । না, এ কেবল সেই-সকল দুর্বল উদাসীনদের কথা যারা পথে চলবে না এবং দূরে বসে বসে বলবে পথে চলাই যায় না। একটি ছেলে নিতান্ত একটি সহজ কবিতা