পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শাস্তিনিকেতন 8 \ہی اول বলে এসেছি। ইতিহাসবিধাতা সেই স্পর্ধা চুৰ্ণ করবেন না ? মানুষ অন্ধ জড়প্রথার কারাপ্রাচীর যেখানে অভ্ৰভেদী করে তুলবে এবং সত্যের জ্যোতিকে প্রতিহত করবে সেখানে তার বজ্র পড়বে না ? তিনি এ কেমন করে সহ্য করবেন। তিনি কি বলতে পারেন যে তিনি বন্দী । তিনি এ কথা বললে সংসারকে কে বাচাবে । তিনি বলেছেন : সত্য মুক্ত, আমি মুক্ত, সত্যের পথিক তোমরা মুক্ত। এই উদবোধনের মন্ত্র মুক্তির মন্ত্র এখনই নক্ষত্রমণ্ডলীর মধ্যে ধ্বনিত হচ্ছে ; অনস্তকাল জাগ্রত থেকে তারা স্নেই জ্যোতির্ময় মন্ত্র উচ্চারণ করছে। জপ করছে এই মন্ত্র সেই চিরজাগ্রত তপস্বীরা : জাগ্রত হও, জাগ্রত হও ; প্রাচীর দিয়ে বঁধিয়ে সত্যকে বন্দী করে রাখবার চেষ্টা কোরো না । সত্য তা হলে নিদারুণ হয়ে উঠবে ; যে লোহার শৃঙ্খল তার হাতকে বাধবে সেই শৃঙ্খল দিয়ে তোমার মস্তকে সে করাঘাত করবে। - রুদ্ধ সত্যের সেই করাঘাত কি ভারতবর্ষের ললাটে এসে পড়ে নি। সত্যকে ফাসি পরাতে চেয়েছে যে দেশ সে দেশ কি সত্যের আঘাতে মূৰ্ছিত হয় নি। অপমানে মাথা হেঁট হয় নি ? সইবে না বন্ধন ; বড়ো দুঃখে ভাঙবে, বড়ো অপমানে ভাঙবে । সেই উদবোধনের প্রলয়মন্ত্র পৃথিবীতে জেগেছে, সেই ভাঙবার মন্ত্র জেগেছে। বসে থাকবার নয়, কোণের মধ্যে তামসিকতায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে থাকবার নয় – চলবার, ভাঙবার ডাক আজ এসেছে। আজকের সেই উৎসব, সেই সত্যের মধ্যে উদবোধিত হবার উৎসব। আমরা সেই মুক্তির মন্ত্র পেয়েছি। কালের স্রোতে ডুবল না 'সত্যং জ্ঞানমনস্তং ব্ৰহ্ম’, অন্তহীন সত্য, অন্তহীন ব্রহ্মের মন্ত্র। কবে ভারতবর্ষের তপোবনে কোন স্বদূর প্রাচীন কালে এই মন্ত্র উচ্চারিত হয়েছিল— অস্ত নেই তার অস্ত নেই। অন্তহীন যাত্রাপথে সত্যকে পেতে হবে, জ্ঞানকে পেতে হবে । সমস্ত সম্প্রদায়ের বাইরে দাড়িয়ে মুক্ত নীলাকাশের তলে একদিন আমাদের পিতামহ এই মুক্তির মন্ত্র উচ্চারণ করেছিলেন। সেই-যে মুক্তির আনন্দঘোষণার উৎসব সে কি এই ঘরের কোণে বসে আমরা কজনে সম্পন্ন করব, এই কলকাতা শহরের এক প্রান্তে। ভারতবর্ষের এক প্রাস্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত এই মুক্তির উৎসবের আনন্দধ্বনি বেজে উঠবে না ? এই মুক্তির বাণীকে আমাদের পিতামহ কোথা থেকে পেয়েছিলেন। এই অনন্ত আকাশের জ্যোতির ভিতর থেকে একে তিনি পেয়েছেন, বিশ্বের মর্মকুহর থেকে এই মুক্তিমন্ত্রের ধ্বনি শুনতে পেয়েছেন। এই-যে মুক্তির মন্ত্র আগুনের ভাষায় আকাশে গীত হচ্ছে, সেই আগুনকে তারা এই ক'টি সহজ বাণীর মধ্যে প্রস্ফুটিত করেছেন। সেই বাণী আমরা ভুলব? আর বলব সত্য পাচ হাজার বৎসর পূর্বে ইতিহাসের