পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

; , . " 8bee. রবীন্দ্র-রচনাবলী যতক্ষণ পর্যস্ত মানুষ তার চারি দিকে যে-সকল অভ্যাস রয়েছে, যে-সব প্রথা চিরকাল চলে আসছে, তারই মধ্যে বেশ আরামে থাকে— যতক্ষণ পর্যন্ত ভিতরে যে সত্য রয়েছে তা তার অস্তরে জাগ্রত না হয়— ততক্ষণ তার এই বেদনাবোধ থাকে না। যেমন, যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি তখন ছোটাে খাচায় ঘুমোলেও কষ্ট হয় না, কিন্তু জেগে উঠলে আর সেই খাচার মধ্যে থাকতে পারি না। তখন সংকীর্ণ জায়গাতে আর আমাদের কুলোয় না। ধনমান যখন আমাদের বেষ্টন করে থাকে তখন তো আমাদের কোনো অভাব বোধ হয় না। আমরা সংসারে বেশ আরামে আছি এই মনে করেই নিশ্চিন্ত থাকি। শুধু ধনমান কেন, পুরুষানুক্রমে যে-সব বিধিব্যবস্থা আচারবিচার চলে আসছে তার মধ্যেও নিবিষ্ট থাকলে মনে হয়— এ বেশ, আর নতুন করে কোনো চিন্তা বা চেষ্টা করবার দরকার নেই। কিন্তু, একবার যথার্থ সত্যের পিপাসা জাগ্রত হলে দেখতে পাই যে সংসারই মানুষের শেষ জায়গা নয়। আমরা যে ধুলোয় জন্মে ধুলোয় মিশব তা নয়। জীবন-মৃত্যুর চেয়ে অনেক বড়ো আমাদের আত্মা। সেই আত্মা উদবোধিত হলে বলে ওঠে ; কী হবে আমার এই চিরকালের অভ্যাস নিয়ে, আচার নিয়ে ! এ তো আমার নয়। এতে আরাম আছে, এতে কোনো ভাবনাচিস্তা নেই, এতেই সংসার চলে যাচ্ছে, তা জানি । কিন্তু, এ আমার নয় – সংসারের পনেরো-আনা লোক যেমন ধনমানে বেষ্টিত হয়ে সন্তুষ্ট হয়ে আছে তেমনি যে-সমস্ত আচারবিচার চলে আসছে তারও মধ্যে তার আরামে রয়েছে। কিন্তু, একবার যদি কোনো আঘাতে এই আবরণ ছিন্ন হয়ে যায় অমনি মনে হয়, এ কী কারাগার ! এ আবরণ তো আশ্রয় নয় । এক-একজন লোক সংসারে আসেন র্যাদের কোনো আবরণে অণবদ্ধ করতে পারে না। তাদের জীবনেই বড়ে বড়ে আঘাত এসে পৌছোয় আবরণ ভাঙবার জন্তে, এবং তারা সংসারে যাকে অভ্যস্ত আরাম বলে লোকে অবলম্বন করে নিশ্চিন্ত থাকে তাকে কারাগার বলেই নির্দেশ করেন। আজ র্যার কথা বলছি তার জীবনে সেই ঘটনা ঘটেছিল । তার পরিবারে ধনমানের অভাব ছিল না, চিরাগত প্রথা সেখানে আচরিত হত। কিন্তু, এক মুহূর্তেই মৃত্যুর আঘাতে তিনি যেমনি জাগলেন অমনি বুঝলেন যে এর মধ্যে শান্তি নেই। তিনি বললেন : আমার পিতাকে আমি জানতে চাই – দশজনের মতো করে তাকে জানতে চাই না, তাকে জানতে পারি না । সত্যকে তিনি জীবনে প্রত্যক্ষভাবে জানতে চেয়েছিলেন ; দশজনের মুখের কথায় শাস্ত্রবাক্যে আচারে-বিচারে তাকে জানবার চেষ্টাকে তিনি পরিহার করেছিলেন । সেই যে তার উদবোধন, সে প্রত্যক্ষ সত্যের মধ্যে উদবোধন ; সেই প্রথমযৌবনের প্রারম্ভে যে তার দীক্ষা-গ্রহণ সে মুক্তির দীক্ষা-গ্রহণ। যেদিন পক্ষীশাবকের পাখা