পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় । w. )?ר צ কেবল মানবের ইচ্ছার মধ্যে তিনি আপনাকে সম্পূর্ণ করেন নাই, কারণ তাহা হইলে ইচ্ছার ধর্মই লোপ হইত। ‘ই’ ও ‘না দুই না থাকিলে ইচ্ছা থাকিতেই পারে না। যেখানে না বলিবার সম্ভাবনামাত্র নাই, একেবারেই "ই", সেখানে অন্ধ শাসন ; সেখানে প্রেম নাই, ইচ্ছা নাই। যেমন জড় প্রকৃতি— সেখানে যাহা না ঘটিলে নয় তাহাই ঘটিতেছে ; অতএব সেখানে ঈশ্বরের নিয়ম প্রকাশ পাইতেছে, প্রেম প্রকাশ পাইতেছে না ! প্রেম প্রেমকে চায়, ইচ্ছা ইচ্ছাকে চায় । আমাদের ইচ্ছার মধ্যে না’কে বিপর্যন্ত করিয়া দিয়া যখন তিনি ‘হা’কে জয় করেন তখনই আমাদের ইচ্ছার মধ্যে তাহার ইচ্ছা প্রকাশ পায়। আমরা নিজে ইচ্ছা করিয়া যখন তাহার ইচ্ছাকে স্বীকার করি তখনই ইচ্ছার সঙ্গে ইচ্ছার মিলন হয় । সুতরাং ইহার জন্য র্তাহাকে অপেক্ষা করিতে হয় । একসময় আমাদের যে প্রেম তাহাকে চায় নাই, কেবল বিষয়ের রাজ্যে ঘুরিয়াছিল, সেই প্রেম যখন তাহাকে চায় তখন তাহার চাওয়ার সঙ্গে আমার চাওয়ার মিলন হয় ; তখনই আমার প্রেম তাহার প্রেমকে উপলব্ধি করে এবং চতুর্দিকে প্রকাশ করে। অতএব মানবাত্মার ইচ্ছার মধ্যে পরমাত্মার ইচ্ছার পূর্ণ প্রকাশ জগতে আর কোথাও দেখিতে পাই না, কেবল ভক্তের জীবনে দেখি । এ পর্যন্ত মানব-ইতিহাসে জ্ঞানে প্রেমে ও কর্মে পরিপূর্ণমাত্রায় পরমাত্মার ইচ্ছার সঙ্গে জীবাত্মার ইচ্ছার একান্ত যোগ দেখা যায় নাই ; কোথাও বা জ্ঞান প্রবল, কর্ম প্রবল নহে— কোথাও বা অন্যরূপ। কিন্তু, এই আদর্শ যে অসম্ভব তাহা নহে। বিশ্বমানবের চিত্তে এই ইচ্ছাই গৃঢ়ভাবে নিয়ত কাজ করিতেছে — সে র্তাহাকে আপনার সকল দিয়া উপলব্ধি করিবে ইহাই তাহার সাধনা। মানুষ আপনার বুদ্ধি প্রীতি ও শক্তি এই তিন পাত্র পূর্ণ করিয়া ভরিয়া তাহার অমৃত পান করিবে, এই পরম ইচ্ছাটি জীবাত্মা ও পরমাত্মা উভয়ের মধ্যেই আছে ; ক্রমশ এই ইচ্ছা পূর্ণ হইয়া উঠাই প্রেমের লীলা, এই লীলা কখনোই শেষ হইয়া যাইতে পারে না কিন্তু, তাই বলিয়া এমন কথা বলা যায় না যে এই লীলা কোনো কালে আরম্ভ হইতেও পারে না, অনন্তকাল উহা দূরেই থাকিয়া যাইবে । বাধা-ব্যবধানের ভিতর দিয়া দুই মহাপ্রেমিকের মধ্যে ইচ্ছার লীলা চলিতেছে ; তাহারই মহা আনন্দের রূপ আমরা ভক্তের জীবনের মধ্যে দেখিতে পাই। ইতি ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৩১৮, শিলাইদ, নদিয়া