পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SRO রবীন্দ্র-রচনাবলী রোশনি। চোখ থাকতেও যদি না দেখে তো কী আর বলব ? নীরজা। জামাইবাবুকে বলিস-নে কেন? রোশনি। বলব! এত বড়ো বুকের পাটা কার! এখন কি আর সে রাজত্তি আছে? মান বঁচিয়ে চলতে হয়। তুমি একটু জোর করে বলোনা কেন খোখী! তোমারি তো সব! নীরজা। হােক-না, হােক না! বেশ তোrAমনি চুলুক-না কিছুদিন, যখন ছারখার হয়ে আসবে আপনিই পড়বে ধরা। তখন বুঝবে মায়ের চেয়ে সৎমায়ের ভালোবাসা বড়ো নয়। ওঁর সরলার চেয়ে বাগানের দরদ কেউ জানে না! চুপ করে থােক-না, দর্পহারী মধুসূদন আছেন। রোশনি। কিন্তু তাও বলি খোখী, তোমার ঐ হল মালীটাকে দিয়ে কোনো কাজ পাওয়া य: का ! নীরজা। আমি মালীকে দোষ দিই নে নতুন মনিবকে ও সইবে কেমন করে? ওদের হল সাতপুরুষে মালীগিরি, আর তোমার দিদিমণির বইপড়া বিদ্যে। ওকে হুকুম করতে আসে। হলা আমার কাছে নালিশ করেছিল, শুধিয়েছিল এ-সব ছিষ্টছাড়া আইন মানতে হবে না কি? আমি ওকে বলে দিলুম-“শুনিস কেন? চুপ করে থাক, কিছু করতে হবে না।” রোশনি। সেদিন জামাইবাবু রাগ করে ওকে ছাড়িয়ে দিতে গিয়েছিলেন। বাগানে গোরু ঢুকেছিল। তিনি বললেন, “গোরু তাড়াস-নে কেন?” ও মুখের উপর জবাব করলে, “আমি তাড়াব গোরু ? গোরুই তো আমাকে তাড়া করে। আমার প্রাণের ভয় নেই?” . . " নীরজা। তা যাই হােক, ও যাই করুক, ও আমার নিজের হাতে তৈরি। ওকে তাড়িয়ে বাগানে নতুন লোক আনিলে, সে আমি সইতে পারব না। তা গোরুই ঢুকুক আর গণ্ডারই তাড়া করুক। কী দুঃখে ও গোরু তাড়ায় নি। সে আমি কি বুঝি নে? ওর যে আগুন জ্বলেছে বুকে - ঐ যে হলা চলেছে দাঁতন করতে করতে দিঘির দিকে। ডাক তো ওকে। । রোশনি। হলা, হলা। নীরজা। কী রে, আজকাল, নতুন ফরমাশ আছে কিছু? গোড়ায় দিতে। আমি বললুম, রোদের বেলা গরম লাগবে গাছের। কান দেয় না। আমার কথায়। নীরজা। বাবুকে বলিস-নে কেন? ; হলা। বলেছিলুম। কাবু ধমক দিয়ে বললে, চুপ করে থােক। বউদিদি, আমাকে ছুটি দাও, আমি তো আর এ সইতে পারি নে। . . . নীরজা। তাই দেখেছি বটে তুই কুড়ি করে রাবিশ বয়ে আনিছিলি। হলা। বউদিদি, তুমিই তো আমার চিরদিনের মনিব- তোমার চোখের সামনে আমার এত নীরজা। আচ্ছা যা, তোদের দিদিমণি বন্ধন তোকে ইটসুরকি বইতে বলবে বলিস। আমি তোকে বারণ করেছি। এখন যা-দাড়িয়ে রাইলি যে ? .