পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SN8 রবীন্দ্র-রচনাবলী করলুম মন কোন দিকে?” ও বললে-“যে দিকে তপ্ত হাওয়া শুকনো পাতা ওড়ায় সেই দিকে। আমি বললুম— ‘ওটা হল হেঁয়ালি, স্পষ্ট ভাষায় কথা কও ” সে বললে- “সব কথারই কি ভাষা আছে?” আবার দেখি হেঁয়ালি। তখন গানের বুলিটা মনে পড়ল কাহার বচন দিয়েছে বেদন'। নীরজা। হয়তো তোমার দাদার বচন। রমেন। হতেই পারে না। নীরজা। কেন হতেই পারে না ? রমেন। দাদা যে পুরুষমানুষ। সে তোমার ঐ মালীগুলোকে হুংকার দিতে পারে, কিন্তু ‘পুষ্পরাশাবিবাগ্নিঃ”— এও কি সম্ভব হয়? নীরজা। আচ্ছা, বাজে কথা বকতে হবে না। একটা কাজের কথা বলি, আমার অনুরোধ রাখতেই হবে। দোহাই তোমার, সরলাকে তুমি বিয়ে করো। আইবড়ো মেয়েকে উদ্ধার করলে মহাপুণ্য। রমেন। পুণ্যের লোভ রাখি নে কিন্তু ঐ কন্যার লোভ রাখি, এ কথা বলছি তোমার কাছে হলফ করে। নীরজা। তা হলে বাধাটা কোথায় ? ওর কি মন নেই ? রমেন। সে কথা জিজ্ঞাসাও করি নি। বলেছিই তো ও আমার কল্পনার দোসরই থাকবে, সংসারের দোসর হবে না। নীরজা । (হঠাৎ তীব্র আগ্রহের সঙ্গে রমেনের হাত চেপে ধরে) কেন হবে না, হতেই হবে। মরবার আগে তোমাদের বিয়ে দেখবই, নইলে ভূত হয়ে তোমাদের জ্বালাতন করব বলে রাখছি। রমেন। (বিস্মিতভাবে নীরজার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে মাথা নেড়ে) বউদি, আমি সম্পর্কে ছোটাে, কিন্তু বয়সে বড়ো। উড়ো বাতাসে আগাছার বীজ আসে ভেসে, প্রশ্রয় পেলে শিকড় ছড়ায়, তার পরে আর ওপড়ায় কার সাধ্যি। নীরজা। আমাকে উপদেশ দিতে হবে না। আমি তোমার গুরুজন, তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, বিয়ে করো। দেরি কোরো না। এই ফানুনমাসে ভালো দিন আছে। রমেন। আমার পাঁজিতে তিনশো পয়ষট্টি দিনই ভালো দিন। কিন্তু দিন যদি বা থাকে, রাস্তা নেই। আমি একবার গেছি জেলে, এখনো আছি। পিছল পথে জেলের কবলটার দিকে, ও পথে প্ৰজাপতির পেয়াদার চল নেই। নীরজা। এখনকার মেয়েরাই বুঝি জেলখানাকে ভয় করে? রমেন। না করতে পারে। কিন্তু সপ্তপদীগমনের রাস্তা। ওটা নয়। ও রাস্তায় বধূকে পাশে না রেখে মনের মধ্যে রাখলে জোর পাওয়া যায়। রইল চিরদিন আমার মনে। হরলিকস দুধের পাত্রটা টিপাইয়ের উপর রেখে সরলা চলে যাচ্ছিল নীরজা। যেয়ে না, শোনো সরলা, এই ফোটোগ্রাফটা কার, চিনতে পারো ? সরলা ! ও তো আমার । নীরজা। তোমার সেই আগেকার দিনের ছবি । যখন তোমার জ্যাঠামশায়ের ওখানে তোমরা বাগানের কাজ করতে। দেখে মনে হচ্ছে বয়েস পনেরো হবে। মারাঠি মেয়ের মতো মালকেঁচা দিয়ে শাড়ি পরেছ।