পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ge &○> আদিত্য। জীবনে কবিত্বের বালাই প্রথম দেখা দিল যেদিন তোমাকে দেখলুম। তার আগে আমরা দুই বুনো মিলে দিন কাটিয়েছি বনের ছায়ায়, নিজেদের ছিলুম ভুলে। হাল আমলের সভ্যতায় যদি মানুষ হতুমি তা হলে কী হত বলা যায় না। নীরজা। কেন, সভ্যতার অপরাধটা কী ? আদিত্য। এখনকার সভ্যতাটা দুঃশাসনের মতো হৃদয়ের বস্তু হরণ করতে চায়। অনুভব করবার পূর্বেই জানিয়ে দেয় চোখে আঙুল দিয়ে। গন্ধের ইশারা ওর পক্ষে বেশি সূক্ষ্ম, খবর নেয় श्रा०टि छिंख् । নীরজা। সরলাকে তো দেখতে মন্দ নয়। مسع আদিত্য। সরলাকে জানতুম সরলা বলেই। ও দেখতে ভালো কি মন্দ সে তত্ত্বটা সম্পূর্ণ বাহুল্য ছিল। " নীরজা। আচ্ছা সত্যি বলো। ওকে তুমি ভালোবাসতে না ? আদিত্য। নিশ্চয় ভালোবাসতুম। আমি কি জড়পদার্থ যে, ওকে ভালোবাসব না। মেসোেমশায়ের ছেলে রেঙ্গনে ব্যারিস্টারি করে, তার জন্যে কোনো ভাবনা নেই। তার বাগানটি নিয়ে সরলা থাকবে এই ছিল তঁর জীবনের সাধ। এমন-কি, তার বিশ্বাস ছিল, এই বাগানই ওর সমস্ত মনপ্রাণ অধিকার করবে। ওর বিয়ে করবার গরজ থাকবে না। তার পরে তিনি চলে গেলেন। অনাথ হল সরল, ওনাদারের হাতে বাগানটি গেল বিকিয়ে। সেদিন আমার বুক ভেঙে গিয়েছিল, দেখো নি কি তুমি ? ও যে ভালোবাসার জিনিস, ভালোবাসব না। ওকে ? মনে তো আছে একদিন সরলার মুখে হাসিখুশি ছিল উচ্ছসিত। মনে হত যেন পাখির ওড়া ছিল ওর পায়ের চলার মধ্যে। আজ ও চলেছে বুক ভরা বোঝা বয়ে বয়ে, তবু ভেঙে পড়ে নি। একদিনের জন্যে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে নি আমারও কাছে, নিজেকে তার অবকাশও দিলে না। নীরজা। থামো গো থামো, অনেক শুনেছি। ওর কথা তোমার কাছে; আর বলতে হবে না। অসামান্য মেয়ে। সেই জন্যে বলেছি। ওকে সেই বারাসতের মেয়ে-স্কুলের হেডুমিসট্রেস করে দাও । তারা তো কতবার ধরাধরি করেছে। আদিত। বারাসতের মেয়ে-ইস্কুল! কেন, আন্ডামােনও তো আছে? নীরজা। না, ঠাট্টা নয়। সরলাকে তোমার বাগানের আর যে-কোনো কাজ দিতে হয় দিয়ো কিন্তু ঐ আর্কিড-ঘরের কাজ দিতে পারবে না। আদিত। কেন, হয়েছে কী ? নীরজা। আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি সরলা অর্কিড। ভালো বোঝে না। আদিত্য। আমিও তোমাকে বলছি, আমার চেয়ে সরলা ভালো বোঝে। মেসোেমশায়ের প্রধান শখ ছিল অর্কিডে। তিনি নিজের লোক পাঠিয়ে সেলিবিস দ্বীপ থেকে, জাভা থেকে, এমন-কি, চীন থেকে অর্কিড আনিয়েছেন, তার দরদ বোঝে এমন লোক তখন কেউ ছিল না। নীরজা! আচ্ছা, আচ্ছা, বেশ বেশ, ও না-হয় আমার চেয়ে ঢের ভালো বোঝে, এমন-কি, তোমার চেয়েও। তা হােক, তবু বলছি। ঐ অর্কিড়ের ঘর শুধু কেবল তোমার আমার, ওখানে সরলার কোনো অধিকার নেই। তোমার সমস্ত বাগানটা ওকেই দিয়ে দাও-না যদি তোমার নিতান্ত ইচ্ছে হয়, কেবল খুব অল্প একটু কিছু রেখো যেটুকু কেবল আমাকেই উৎসর্গ-করা। এতকাল