পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*ळ3 Sxoዔ কাচি হাতে অন্তত আধ হাত-খানেক কেটে দিলেম। তখনি জেগে তুমি দাঁড়িয়ে উঠলে, তোমার ঐ কালো চোখ আরো কালো হয়ে উঠল। শুধু বললে-“মনে করেছ। আমাকে জব্দ করবে ?” বলে আমার হাত থেকে কঁচি টেনে নিয়ে ঘাড় পর্যন্ত চুল কেটে ফেললে কচকচ করে। মেসোেমশায় তোমাকে দেখে আশ্চর্য। বললেন “এ কী কাণ্ড।’ তুমি শান্তমুখে অনায়াসে বললে, বড়ো গরম লাগে।” তিনিও একটু হেসে সহজেই মেনে নিলেন। প্রশ্ন করলেন না, ভৎসনা করলেন না, কেবল কাচি নিয়ে সমান করে দিলেন তোমার চুল। তোমারি তো জ্যাঠামশায়। সরলা (হেসে) তোমার যেমন বুদ্ধি, তুমি ভােবছ এটা আমার ক্ষমার পরিচয় ? একটুকুও নয়। তোমাকে । ঠিক কি না বলো। আদিত্য। খুব ঠিক। সেই কাটা চুল দেখে আমি কেবল কঁদিতে বাকি রেখেছিলুম। তার পরদিন তোমাকে মুখ দেখাতে পারি নি লজ্জায়। পড়বার ঘরে চুপ করে ছিলেম বসে। তুমি ঘরে ঢুকেই হাত ধরে আমাকে হিড়ি হিড়ি করে টেনে নিয়ে গেলে বাগানের কাজে, যেন কিছুই হয় নি। আর-একদিনের কথা মনে পড়ে, সেই যেদিন ফালুন মাসে অকালে ঝড় উঠে আমার বিছন লাগাবার ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়েছিল তখন তুমি এসে সরলা। থাক। আর বলতে হবে না। (দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে) সে-সব দিন আর আসবে না। তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল ব্যাকুলভাবে সরলার হাত চেপে ধরে আদিত্য। না, যেয়ে না, এখনি যেয়ে না। কখন এক-সময়ে যাবার দিন আসবে তখন(বলতে বলতে উত্তেজিতভাবে) কোনোদিন কেন যেতে হবে ? কী অপরাধ ঘটেছে ? ঈর্ষা ? আজি দশ বৎসর সংসারা-যাত্রায় আমার পরীক্ষা হল তারি এই পরিণাম! কী নিয়ে ঈর্ষা ? তা হলে তো তেইশ বছরের ইতিহাস মুছে ফেলতে হয়, যখন থেকে তোমার সঙ্গে আমার দেখা। সরলা । তেইশ বছরের কথা বলতে পারি। নে ভাই, কিন্তু তেইশ বছরের এই শেষ বেলাতে ঈর্ষার কি কোনো কারণই ঘটে নি? সত্যি কথা তো বলতে হবে। নিজেকে ভুলিয়ে লাভ কী? তোমার আমার মধ্যে কোনো কথা যেন অস্পষ্ট না থাকে । আদিত্য। অস্পষ্ট আর রইল না। অন্তরে অন্তরে বুঝেছি, তুমি নইলে আমার জগৎ হবে ব্যৰ্থ। ধার কাছ থেকে পেয়েছি তোমাকে জীবনের প্রথম বেলায়, তিনি ছাড়া আর কেউ তোমাকে কেড়ে নিতে পারবে না। সরলা। কথা বোলো না আদিৎদা, দুঃখ আর বাড়িয়ে না। একটু স্থির হয়ে দাও ভাবতে। আদিত্য। ভাবনা নিয়ে তো পিছনের দিকে যাওয়া যায় না। দুজনে যখন জীবন আরম্ভ করেছিলেম মেসোেমশায়ের কোলের কাছে, সে তো না ভেবে চিন্তে। আজ কোনো রকমের নিডুনি দিয়ে কি উপড়ে ফেলতে পারবে সেই আমাদের দিনগুলিকে ? তোমার কথা বলতে পারি। নে সরি, আমার তো সাধ্য নেই। সরলা। পায়ে পড়ি, দুর্বল কোরো না। আমাকে। দুৰ্গম কোরো না উদ্ধারের পথ। আদিত্য। (সরলার দুই হাত চেপে ধরে) উদ্ধারের পথ নেই, সে পথ আমি রাখব না। ভালোবাসি তোমাকে, এ কথা আজ এত সহজ করে সত্য করে বলতে পারছি, এতে আমার বুক