পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミb-br রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী মেয়েরা আপনার স্বভাবের দ্বারাই সমাজে এমন একটা জায়গা পাইয়াছে যেখানে সংসারের কাছে তারা আত্মসমপণ করিতেছে। যদি কোনো কারণে সমাজের এমন অবস্থা ঘটে যাতে এই আত্মসমপণ ভালোবাসার আদর্শ হইতে বহুল পরিমাণে ভ্ৰষ্ট হইয়া থাকে, তবে তাহা মেয়েদের পক্ষে পীড়া ও অবমাননা। . মেয়েরা স্বভাবতই ভালোবাসে এবং একনিষ্ঠ আত্মসমর্পণের আদর্শকেই সামাজিক শিক্ষায় তাদের মনে বদ্ধমূল করিয়া দিয়াছে, এই সুবিধাটুকু ধরিয়া অনেক স্বার্থপর পুরুষ তাদের প্রতি অত্যাচার করে। যেখানে পুরুষ যথার্থ পৌরুষের আদর্শ হইতে ভ্ৰষ্ট সেখানে মেয়েরা আপন উচ্চ আদর্শের দ্বারাই পীড়িত ও বঞ্চিত হইতে থাকে, ইহার দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে যত বেশি এমন আর-কোনো দেশে আছে কিনা আমি সন্দেহ করি। কিন্তু তাই বলিয়া এ কথাটাকে উড়াইয়। দেওয়া যায় না যে, সমাজে মেয়েরা যে ব্যবহারের ক্ষেত্রটি অধিকার করিয়াছে সেখানে স্বভাব্যবশতই তারা আপনিই আসিয়া পৌছিয়াছে, বাহিরের কোনো অত্যাচার তাহাদিগকে বাধা করে নাই। এ কথা মনে রাখিতে হইবে, সমাজে পুরুষের দাসত্ব মেয়েদের চেয়ে অল্প নহে, বরঞ্চ বেশি। এতকালের সভ্যতার সাধনার পরেও মানুষের সমাজ আজও দাসের হাতের খাটুনিতে চলিতেছে । এ সমাজে যথার্থ স্বাধীনতা অতি অল্প লোকেই ভোগ করে। রাজতন্ত্রে বাণিজাতন্ত্রে এবং সমাজের সর্ববিভাগেই দাসের দল প্ৰাণপাত করিয়া সমাজ - জগন্নাথের প্রকাণ্ড রথ টানিয়া চলিতেছে । কোথায় লইয়া চলিতেছে তাহাও জানে না, কাহার রথ টানিতেছে তাহাও দেখিতে পায় না। সমস্ত জীবন দিনের পর দিন এমন দায় বহন করিতেছে। যাহার মধ্যে প্রীতি নাই, সৌন্দর্য নাই ! এই দাসত্বের বারো-আনা ভাগ পুরুষের কাধে চাপিয়াছে। মেয়েদের ভালোবাসার উপরই সমাজ ঝোক, দয়াছে এইজন্য মেয়েদের দায় ভালোবাসার দায় । পুরুষের শক্তির উপরই সমাজ ঝোক দিয়াছে, এইজন্য পুরুষের দায় শক্তির দায়। অবস্থা গতিকে সেই দায় এত অতিরিক্ত হইতে পারে যা217.৩ ভালোবাসা উৎপীড়িত হয় ও শক্তি দুর্বল হইয়া পড়ে। তখন সমাজের সংস্কার আবশ্যক হয় ? সেই সংস্কারের জনা আজ সমস্ত মানবসমাজে বেদন জাগিয়াছে। কিন্তু সংস্কার যতদূর পর্যন্ত যাক, সৃষ্টির গোড়া পর্যন্ত গিয়া পৌছিবে না এবং শেষ পর্যন্ত কবির দল এই বলিয়া আনন্দ করিতে পরিবেন যে, পুরুষ পুরুষই থাকিবে, মেয়েরা মেয়ে থাকিয়া যাইবে বলিয়াই তার “সংকটে সহায়, দুরূহ চিন্তায় অংশ এবং সুখে দুঃখে সহচরী হইয়া সংসারে তাহার প্রকৃত সহযাত্রা হইবেন। gesundhus w ভাদ্র-তাশিল্পনা Σ έύ . . ՀԶ প্রেসিডেন্সি কলেজে ছাত্রদের সহিত কোনো কোনো য়ুরোপীয় অধ্যাপকের যে বিরোধ ঘটিয়াছে তাহা লইয়া কোনো কথা বলিতে সংকোচ বােধ করি। তার একটা কারণ, ব্যাপারটা দেখিতেও ভালো হয় নাই, শুনিতেও ভালো নয়। আর-একটা কারণ, ইংরেজ ও ভারতবাসীর সম্পর্কটার মধ্যে যেখানে কিছু ব্যথা আছে সেখানে নাড়া দিতে ইচ্ছা করে না। ’ কিন্তু কথাটাকে চাপা দিলে চলিবে না। চাপা থাকেও নাই, বাহির হইয়া পড়িয়াছে। মনে মনে বা কানে কানো বা মুখে মুখে সকলেই এর বিচার করিতেছে।