পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা Ridd করিতে পারেন ; যারা জানেন, শক্তস্য ভূষণং ক্ষমা ; যাঁরা ছাত্রকেও মিত্র বলিয়া গ্রহণ করিতে কুষ্ঠিত হন না। যিশুখৃস্ট বলিয়াছেন, “শিশুদিগকে আমার কাছে আসিতে দাও।” তিনি শিশুদিগকে বিশেষ করিয়া শ্রদ্ধা করিয়াছেন। কেননা, শিশুদের মধ্যেই পরিপূর্ণতার ব্যঞ্জনা আছে। যে মানুষ বয়সে পাকা হইয়া অভ্যাসে সংস্কারে ও অহমিকায় কঠিন হইয়া গেছে সে মানুষ সেই পূর্ণতার ব্যঞ্জনা তারাইয়াছে ; বিশ্বগুরুর কাছে আসা তার পক্ষেই বড়ো কঠিন। " ছাত্রেরা গড়িয়া উঠিতেছে ; ভাবের আলোকে, রসের বর্ষণে তাদের প্রাণকোরকের গোপন মৰ্মস্থলে বিকাশবেদনা কাজ করিতেছে। প্রকাশ তাদের মধ্যে থামিয়া যায় নাই ; তাদের মধ্যে পরিপূর্ণতার ব্যঞ্জনা। সেইজনাই, সৎগুরু ইহাদিগকে শ্রদ্ধা করেন, প্রোমের সহিত কাছে আহবান করেন, ক্ষমার সহিত ইহাদের অপরাধ মার্জনা করেন এবং ধৈর্যের সহিত ইহাদের চিত্তবৃত্তিকে উর্ধের্বর দিকে উদঘাটন করিতে থাকেন। ইহাদের মধ্যে পূর্ণমনুষ্যতের মহিমা প্ৰভাতের অরুণরেখার মতো অসীম সম্ভাব্যতার গৌরবে উজ্জ্বল ; সেই গৌরবের দীপ্তি যাদের চোখে পড়ে না, যারা নিজের বিদ্যা পদ বা জাতির অভিমানে ইহাদিগকে পদে পদে অবজ্ঞা করিতে উদ্যত, তারা গুরুপদের অযোগ। ছাত্ৰাদিগকে যারা স্বভাবতই শ্রদ্ধা করিতে না পারে ছাত্রদের নিকট হইতে ভক্তি তারা সহজে পাইতে পরিবে না। কাজেই ভক্তি জোর করিয়া আদায় করিবার জন্য তারাই রাজদরবারে কড়া আইন ও চাপরাশওয়ালা পেয়াদার দরবার করিয়া থাকে। ছাত্ৰাদিগকে কড়া শাসনের জালে যাঁরা মাথা হইতে পা পর্যন্ত বাধিয়া ফেলিতে চান তঁরা ১ধ্যাপকদের যে কত বড়ো ক্ষতি করিতেছেন সেটা যেন ভাবিয়া দেখেন : পৃথিবীতে অল্প লোকই আছে নিজের অস্তরের মহৎ আদর্শ যাহাদিগকে সত্য পথে আহবান করিয়া লইয়া যায়। বাহিরের সঙ্গে ঘাত-প্ৰতিঘাতের ঠেলাতেই তারা কর্তব্য সম্বন্ধে সতর্ক হইয়া থাকে। বাহিরের সঙ্গে বোঝাপড়া আছে বলিয়াই তারা আত্মবিস্মৃত হইতে পারে না। এইজনাই চারি দিকে যেখানে দাসত্ব মনিবের সেখানে দুৰ্গতি, শূদ্র যেখানে শূদ্র ব্রাহ্মণের সেখানে অধঃপতন। কঠোর শাসনের চাপে ছাত্রেরা যদি মানবস্বভাব হইতে ভ্ৰষ্ট হয়, সকলপ্রকার অপমান দুর্ব্যবহার ও অযোগ্যতা যদি তারা নিজীবিভাবে নিঃশব্দে সহিয়া যায়, তবে অধিকাংশ অধ্যাপকদিগকেই তাহা অধোগতির দিকে টানিয়া লইবে । ছাত্রদের মধ্যে অবজ্ঞার কারণ তারা নিজে ঘটাইয়া তুলিয়া তাহাদের অবমাননার দ্বারা নিজেকে অহরহ অবমানিত করিতে থাকিবেন। সর্বজ্ঞার ক্ষেত্রে নিজের কর্তব্য কখনোই কেহ সাধন করিতে পারে না। অপর পক্ষ বলিবেন, তবে কি ছেলেরা যা খুশি তাই করিবে আর সমস্তই সহিয়া লইতে বে? আমার কথা এই ছেলেরা যা খুশি তাই কখনোই করিবে না। তারা ঠিক পথেই চলিবে, Y. ሎ . Yy v. čí

  • তাহদের সঙ্গে ঠিকমতো ব্যবহার করা হয়। যদি তাহাদিগকে অপমান কর, তাহদের জাতি 4া ধর্ম বা আচারকে গালি দাও, যদি দেখে তাহদের পক্ষে সুবিচার পাইবার আশা নাই, যদি অণুভব করে যোগ্যতাসত্ত্বেও তাহদের স্বদেশীয় অধ্যাপকেরা অযোগোর কাছে মাথা হােঁট করিতে *াধা, তবে ক্ষণে ক্ষণে তারা অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করিবেই ; যদি না করে তবে আমরা সেটাকে লাঞ্জা এবং দুঃখের বিষয় বলিয়া মনে করিব।

অপরপক্ষে একটি সংগত কথা বলিবার আছে। য়ুরোপীয়ের পক্ষে ভারতবর্ষ বিদেশ, এখানকার আবহাওয়া ক্লান্তিকর, তঁহাদের পানাহার উত্তেজক, আমরা তঁহাদের অধীনস্থ জাতি, শ'খাদের বর্ণ ধর্ম ভাষা আচার সমস্তই স্বতন্ত্র। তার উপরে, এ দেশে প্রত্যেক ইংরেজই রাজশক্তি