পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা S&G গড়িয়া উঠিতেছিল। আজ ইংরেজ আসার পর এই কাজে আমাদের চেতনা জাগিয়াছে ; ইতিহাসরচনায় আজ আমাদের ইচ্ছা কাজ করিতে উদ্যত হইয়াছে। এইজন্যই ইচ্ছায় ইচ্ছায় মাঝে মাঝে দ্বন্দ্ব বাধিবার আশঙ্কা আছে। কিন্তু যাঁরা এ দেশের সঞ্জীবনমন্ত্রের তপস্বী রাগদ্বেষে ক্ষুব্ধ হইলে তঁদের চলিবে না। তঁহাদিগকে এ কথা মনে রাখিতে হইবে যে, ইচ্ছায় ইচ্ছায় মিল করাই চাই। কারণ, ইংরেজি ভারতের ইতিহাস-ধারাকে বাধা দিতে আসে নাই, তাহাতে যোগ দিতে আসিয়াছে। ইংরেজকে নহিলে ভারত-ইতিহাস পূর্ণ হইতেই পারে না। সেইজন্যই আমরা কেবলমাত্র ইংরেজের আপিস চাই না, ইংরেজের হৃদয় চাই। ইংরেজ যদি আমাদিগকে অবাধে অনায়াসে অবজ্ঞা করিতে পায় তাহা হইলেই আমরা তার হৃদয় হারাইব । শ্রদ্ধা আমাদিগকে দাবি করিতেই হইবে ; আমরা খৃস্টান প্রিনসিপালের নিকট হইতেও এক গালে চড় খাইয়া অন্য গাল ফিরাইয়া দিতে পারিব না। ইংরেজের সঙ্গে ভারতবাসীর জীবনের সম্বন্ধ কোথায় সহজে ঘটিতে পারে ? বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নয়, রাজকীয় ক্ষেত্রেও নয়। তার সর্বোৎকৃষ্ট স্থান বিদ্যাদানের ক্ষেত্র। জ্ঞানের আদানপ্রদানের ব্যাপারটি সাত্ত্বিক। তাহা প্রাণকে উদবােধিত করে। সেইজন্য এইখানেই প্ৰাণের নাগাল পাওয়া সহজ। এইখানেই গুরুর সঙ্গে শিয্যের সম্বন্ধ যদি সত্য হয় তবে ইহজীবনে তার বিচ্ছেদ নাই। ৩াহা পিতার সঙ্গে পুত্রের সম্বন্ধের চেয়েও গভীরতর। আমাদের য়ুনিভার্সিটিতে এই সুযোগ ঘটিয়াছিল। এইখানে ইংরেজ এমন একটি স্থান পাইতে পরিত যাহা সে রাজসিংহাসনে বসিয়াও পায় না। এই সুযোগ যখন ব্যর্থ হইতে দেখা যায়। তখন আক্ষেপের সীমা থাকে না। ব্যর্থতার কারণ আমাদের ছাত্ররাই, এ কথা আমি কিছুতেই মানিতে পারি না। আমাদের দেশের ছাত্রদের আমি ভালো করিয়াই জানি। ইংরেজ ছেলের সঙ্গে একটা বিষয়ে ইহাদের প্রভেদ আছে । ইহারা ভক্তি করিতে পাইলে আর কিছু চায় না। অধ্যাপকের কােছ হইতে একটুমাত্রও যদি h. স্নেহ পায় তবে তার কাছে হৃদয় উৎসর্গ করিয়া দিয়া যেন হাঁফ ছাড়িয়া বাঁচে । {ামাদের ছেলেদের হৃদয় নিতান্তই সজ্ঞা দামে পাওয়া যায়। এইজন্যই আমার যে-একটি বিদ্যালয় আছে সেখানে ইংরেজ অধ্যাপক আনিবার জন্য অনেকদিন হইতে উদ্যোগ করিয়াছি। বহুকাল পূর্বে একজনকে আনিয়াছিলাম। তিনি সুদীর্ঘকাল ভারতবর্যের আবহাওয়ায় পাকিয়াছিলেন। তাহাতে তেঁর অন্তঃকরণে পিত্তাধিক্য ঘটিয়াছিল। তিনি ক্লাসে ছেলেদের জাতি তুলিয়া গালি দিতেন ; তারা বাঙালির ঘরে জন্মিয়াছে এই অপরাধ جان ዖ~ তিনি সহিতে পারিতেন না। সেই ছেলেরা যদিচ প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র নয়, তাদের বয়স নয়দশ বৎসর হইবে, তবু তারা তীর ক্লাসে যাওয়া ছাড়িল। হেড়মাস্টারের তাড়নাতেও কোনো ফল হইল না। দেখিলাম হিতে বিপরীত ঘটিল। এই মাস্টারটিকে white man's burden হইতে সে ধাত্রায় নিস্কৃতি দিলাম। কিন্তু, আশা ছাড়ি নাই এবং আমার কামনাও সফল হইয়াছে। আজ ইংরেজ শুরুর সঙ্গে বাঙালি ছাত্রের জীবনের গভীর মিলন ঘটিয়া আশ্রম পবিত্র হইয়াছে। এই পুণ্য মিলনটি সমস্ত ভারতক্ষেত্রে দেখিবার জন্য বিধাতা অপেক্ষা করিতেছেন। যে-দুটি ইংরেজ তাপস সেখানে আছেন তঁরা নিজের ধর্ম প্রচার করিতে যান নাই, তারা পতিত-উদ্ধারের দুঃসহ কর্তব্যভার গ্রহণ করেন করিয়াছেন এমন অভিমান মনে রাখেন না। তারা তাদের পরমগুরুর মতো করিয়াই দুই হাত を憂図 al 命 s