পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

भिश्वका . SèvS)(: লজ্জাকর এ কথাটা তখন মনে ছিল। উপকরণবানের জীবনকে ঈর্ষা করা বা বিশেষভাবে সম্মান করাই যে কুশিক্ষা, এ কথাটা আমি তখনকার শিক্ষকদের স্মরণ করিয়ে রেখেছিলুম। বলা বাহুল্য, যে দারিদ্র্য শক্তিহীনতা থেকে উদভুত সে কুৎসিত। কথা আছে : শক্তস্য ভূষণং ক্ষমা। তেমনি বলা যায়, সামর্থ্যবানেরই ভুষণ অকিঞ্চনত। অতএব সামর্থ্য শিক্ষা করাই চাই ভোগের অভ্যাস বর্জন করে। সামর্থ্যহীন দারিদ্র্যেই ভারতবর্ষের মাথা হােঁট হয়ে গেছে, অকিঞ্চানতায় নয়। অক্ষমকে দেবতা ক্ষমা করেন না। ‘আমি সব পারি, সব পারব” এই আত্মবিশ্বাসের বাণী আমাদের শরীর মন যেন তৎপরতার সঙ্গে বলতে পারে। আমি সব জানি” এই কথা বলবার জন্যে আমাদের ইন্দ্ৰিয় মন উৎসুক হয় তো হােক, কিন্তু তার পরেও চরমের কথা “আমি সব পারি’। আজ এই বাণী সমস্ত য়ুরোপের। সে বলে, “আমি সব পারি, সব পারব।’ তার আপনি ক্ষমতাকে শ্রদ্ধা করার অন্ত নেই। এই শ্রদ্ধার দ্বারা সে নিভীক হয়েছে, জলে স্থলে আকাশে সে জয়ী হয়েছে। আমরা দৈবের দিকে তাকিয়ে আছি, সেইজন্যে বহু শতাব্দী ধরে আমরা দৈবকর্তৃক প্রবঞ্চিত। সুইডেনের বিখ্যাত ভূপৰ্যটক স্বেন হেডিনের ভ্রমণবৃত্তান্ত অনেক দিন পরে আবার আমি পড়েছিলুম। এশিয়ার দুৰ্গম মরুপ্রদেশে আবহতত্ত্ব পর্যবেক্ষণের উপায় করবার জন্যে তিনি দুঃসাধ্য অধ্যবসায়ে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। এই অধ্যবসায়ের মূলমন্ত্র হচ্ছে, “আমি সব জািনব, সব পারব।” এই পারবার শক্তি বলতে কী বোঝায় সে। তঁর বই পড়লে বোঝা যায়। আমরা কথায় কথায় ওদের বলে থাকি বস্তুতান্ত্রিক। আত্মার শক্তি যার এত প্রবল, যে জ্ঞান-অর্জনের জন্যে সে প্রাণকে তুচ্ছ করে, যার কিছুতে ভয় নেই, সাংঘাতিক বাধাকে যে স্বীকার করে না, দুঃসহ কৃচ্ছসাধনে যাকে পরাহত করতে পারে না-প্রাণপণ সাধনা এমন-কিছুর জন্যে যা আর্থিক নয়, জীবিকার পক্ষে যা অত্যাবশ্যক নয়, বরঞ্চ বিপরীত- তাকে বলব বস্তুতান্ত্রিক! আর, সে কথা বলবে আমাদের মতো ठूर्वक्-ख्रांद्म! “আমরা সব-কিছু পারব” এই কথা সত্য করে বলবার শিক্ষাই আত্মবিমাননা থেকে আমাদের দেশকে পরিত্রাণ করতে পারে, এ কথা ভুললে চলবে না। আমাদের বিদ্যালয়ে সকল কর্মে সকল ইন্দ্ৰিয়মনের তৎপরতা প্রথম হতেই অনুশীলিত হােক, এইটেই শিক্ষা সাধনার গুরুতর কর্তব্য বলে মনে করতে হবে। জানি এর প্রধান অন্তরায় অভিভাবক ; পড়া মুখস্থ করতে করতে জীবনীশক্তি মননশক্তি কর্মশক্তি সমস্ত যতই কৃশ হতে থাকে তাতে বাধা দিতে গেলে তঁরা উদবিগ্ন হয়ে ওঠেন। কিন্তু মুখস্থ বিদ্যার চাপে এই-সব চির-পঙ্গু মানুষের অকৰ্মণ্যতার বোঝা দেশ বহন করবে: কী করে? উদ্যোগিনং পুরুষসিংহমুপৈতি লক্ষ্মীঃ । আমাদের শিক্ষালয়ে নবীন প্ৰাণের মধ্যে অক্লান্ত উদ্যোগিতার হাওয়া বয়েছে যদি দেখতে পাই তা হলেই বুঝব, দেশে লক্ষ্মীর আমন্ত্রণ সফল হতে চলল। এই আমন্ত্রণ ইকনমিক্‌সে ডিগ্রি নেওয়ায় নয় ; চরিত্রকে বলিষ্ঠ কমিষ্ঠ করায়, সকল অবস্থার জন্যে নিজেকে নিপুণভাবে প্রস্তুত করায়, নিরলস আত্মশক্তির উপর নির্ভর করে কর্মানুষ্ঠানের দায়িত্ব সাধনা করায়। অর্থাৎ কেবল পাণ্ডিত্যচর্চায় নয়, পৌরুষচর্চায়। সাধারণ ইস্কুলে এই সাধনার সুযোগ নেই, আমাদের আশ্রমে আছে। এখানে নানা বিভাগে নানা কর্মচলছে, তার মধ্যে শক্তি প্রয়োগ করাতে পারে এমন অবস্থা থাকা চাই। . ܂ ܗ এই কৃতিত্বশিক্ষা অত্যাবশ্যক হলেও এই-যে যথেষ্ট নয়। সে কথা মনতে হবে। আমেরিকান লেখক এই কথাটারই আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, আধুনিক শিক্ষা থেকে একটা জিনিস কেমন করে স্বলিত হয়ে পড়েছে, সে হচ্ছে সংস্কৃতি। চিত্তের ঐশ্বৰ্যকে অবজ্ঞা করে আমরা