পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©१२ রবীন্দ্র-রচনাবলী সম্ভবত প্রাচীন বাংলায় এই তির্যকরূপের প্রচলন অধিক ছিল। তাহা নিম্নে উদধূত প্রাচীন ‘গণ’ শব্দের তির্যকরূপ ‘গণ’ কেবলমাত্র ‘গণাগুষ্ঠি’ শব্দেই টিকিয়া আছে। মুড়া’ শব্দের সহজরীপ মুড়া” মাথা-মোড় খোঁড়া” “ঘাড়-মুড় ভাঙা' ইত্যাদি শব্দেই বর্তমান। যেখানে আমরা বলি ‘গড়গড়া ঘুমাচ্চে"। সেখানে এই ‘গড়’ শব্দকে ‘গড়’ শব্দের তির্যকরূপ বলিয়া গণ্য করিতে হইবে। গড় হইয়া প্ৰণাম করা’ ও ‘গড়ানো’ ক্রিয়াপদে ‘গড়’ শব্দের পরিচয় পাই। “দেব’ শব্দের তির্যকরূপ ‘দেবা’ ও ‘’দেয়া'। মেঘ ডাকা ও ভূতে পাওয়া সম্বন্ধে “দেয়া’ শব্দের ব্যবহার আছে। যেমন দেবা তেমনি দেবী’ বাক্যে 'দেবা” শব্দের পরিচয় পাওয়া যায়। বাংলায় কাব্যভাষায় সব শব্দের তির্যকরূপ সবা' এখনো ব্যবহৃত হয়। যেমন আমাসাবা, তোমাসবা, সবারে, সবাই। কাব্যভাষায় জিন' শব্দের তির্যকরূপ জনা’। সংখ্যাবাচক বিশেষণের সঙ্গে 'জন' শব্দের যোগ হইলে চলিত ভাষায় তাহা অনেক স্থলেই জনা’ হয়। একজনা, দুইজনা ইত্যাদি। জনাজনা' শব্দের অর্থ প্ৰত্যেক জন। আমরা বলিয়া থাকি “একো জনা একে রকম”। তির্যকরূপে সহজরীপ হইতে অর্থের কিঞ্চিৎ ভিন্নতা ঘটে এরূপ দৃষ্টান্তও আছে। ‘হাত’ শব্দকে নিজীব পদার্থ সম্বন্ধে ব্যবহার কালে তাঁহাকে তির্যক করিয়ালওয়া হইয়াছে, যেমন জামার হাতা, অথবা পাকশালার উপকরণ হতো। “পা” শব্দের সম্বন্ধেও সেইরূপ ‘চৌকির পায়া”। “পায়া সম্বন্ধে যাহা খুর, খাট প্রভৃতি সম্বন্ধে তাঁহাই খুরা। কান শব্দ কলস প্রভৃতির সংস্রবে। প্রয়োগ করিবার বেলা ‘কানা’ হইয়াছে। “কাধা’ শব্দও সেইরূপ। । খাঁটি বাংলা ভাষার বিশেষণপদগুলি প্রায়ই হলন্ত নহে। এ কথা রামমোহন রায় তাহার বাংলা ব্যাকরণে প্রথম নির্দেশ করিয়া গিয়াছেন। সংস্কৃত শব্দ ‘কাপ” বাংলায় তাহা ‘কানা’। সংস্কৃত ‘খঞ্জ বাংলায় ‘খোঁড়া”। সংস্কৃত অর্ধ” বাংলা আধা’। শাদা, রাঙা, বঁকা, কালা, খাদা, পাকা, কঁচা, মিঠা ইত্যাদি বহুতর দৃষ্টান্ত আছে। ‘আলো’ বিশেষ্য, “আল বিশেষণ। “ফাক’ বিশেষ্য ফাঁকা’ বিশেষণ। “মা” বিশেষ্য, মায়্যা (মায়্যা মানুষ) বিশেষণ। এই আকার প্রয়োগের দ্বারা বিশেষণ নিম্পন্ন করা ইহাও বাংলা ভাষায় তির্যকরূপের দৃষ্টান্ত বলিয়া গণ্য হইতে পারে। মারাঠিতে তির্যকরূপে আকার ও একার দুই স্বরবর্ণের যেমন ব্যবহার দেখা যায় বাংলাতেও সেইরূপ দেখিতে পাই। তন্মধ্যে আকারের ব্যবহার বিশেষ কয়েকটি মাত্র শব্দে বদ্ধ হইয়া আছে; তাহ সজীব ভাবে নাই, কিন্তু একারের ব্যবহার এখনো গতিবিশিষ্ট। ‘পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়’ এই বাক্যে ‘পাগলে” ও “ছাগলে’ শব্দে যে একার দেখিতেছি তাহা উক্ত প্রকার তির্যকরূপের একার। বাংলা ভাষায় এই শ্রেণীর তির্যকরূপ কোন কোন স্থলে ব্যবহৃত হয় আমরা তাহার আলোচনা করিব। সামান্য বিশেষ্য : বাংলার নাম সংজ্ঞা (Proper names) ছাড়া অন্যান্য বিশেষ্যপদে যখন কোনো চিহ্ন থাকে না, তখন তাহাদিগকে সামান্য বিশেষ্য বলিয়া গণ্য করিতে হইবে। যেমন, वानल, (विल, कलभ, छूलेि छेऊ।ि উল্লিখিত বিশেষ্যপদগুলির দ্বারা সাধারণভাবে সমস্ত বানর, টেবিল, চৌকি, ছুরি বুঝাইতেছে, কোনো বিশেষ এক বা একাধিক বানর, টেবিল, চৌকি, ছুরি বুঝাইতেছে না। বলিয়াই ইহাদিগকে