পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S)Գ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আসা এবং যাওয়া ক্রিয়াটি যদিও সাধারণত সচেষ্টক, তবু তাহদের সম্বন্ধে পূর্বোক্ত নিয়মটি ভালোরূপে খাটে না। আমরা বলি সাপে কামড়ায়’ বা “কুকুরে আঁচড়ায়’ কিন্তু সাপে আসে বা ‘কুকুরে যায়’ বলি না। অথচ 'যাতায়াত করা’ ক্রিয়ার অর্থ যদিচ যাওয়া আসা করা, সেখানে এ নিয়মের ব্যতিক্রম নাই। আমরা বলি এ পথ দিয়ে মানুষে যাতায়াত করে, বা “যাওয়া আসা করে।’ বা "আনাগােনা করে’। কারণ, ‘করে ক্রিয়াযোগে আসা যাওয়াটা নিশ্চিতভাবেই সচেষ্টক হইয়াছে। ‘খেতে যায়’ বা ‘খেতে আসে” প্রভৃতি সংযুক্ত ক্রিয়াপদেও এ নিয়ম অব্যাহত থাকে— যেমন, “এই পথ দিয়ে বাঘে জল খেতে যায়” । " ` - . সকল’ ও ‘সব’ শব্দ সচেষ্টক অচেষ্টক উভয় শ্রেণীর ক্রিয়া-সহযোগেই তির্যকরূপ লাভ করে। যথা, এ ঘরে সকলেই আছেন বা সবাই আছে। རྒ་ ইহার কারণ এই যে, সকল’ ও ‘সব’ শব্দ দুটি বিশেষণপদ। ইহারা তির্যকরূপ ধারণ করিলে তবেই বিশেষ্যপদ হয়। সকল’ ও ‘সব' শব্দটি হয় বিশেষণ, নয়। অন্য শব্দের যোগে বহুবচনের চিহ্ন-কিন্তু সকলে’ বা সবে” বিশেষ্য। কথিত বাংলায় সব' শব্দটি বিশেষ্যরূপ গ্ৰহণকালে দ্বিগুণভাবে তির্যকরূপ প্রাপ্ত হয়- প্রথমত সব হইতে হয় ‘সবা” তাহার পরে পুনশ্চ তাহাতে এ যোগ হইয়া হয় ‘সবাএ’। এই সবাএ’ শব্দকে আমরা সবাই উচ্চারণ করিয়া থাকি। . জিন' শব্দ সব’ শব্দের ন্যায়। বাংলায় সাধারণত 'জন' শব্দ বিশেষণরূপেই ব্যবহৃত হয়। একজন লোক, দুজন মানুষ ইত্যাদি। বস্তুত মানুষের পূর্বে সংখ্যা যোগ করিবার সময় আমরা তাহার সঙ্গে 'জন' শব্দ যোজনা করিয়া দিই। পাঁচ মানুষ কখনোই বলি না, পাঁচজন মানুষ বলি। কিন্তু এই জন’ শব্দকে যদি বিশেষ্য করিতে হয় তবে ইহাকে তির্যকরূপ দিয়া থাকি। দুজনে, পাঁচজনে ইত্যাদি। ‘সবাএ’ শব্দের ন্যায় জনাএ’ শব্দ বাংলায় প্রচলিত আছে- এক্ষণে ইহা বাংলায় অনেক’ শব্দটি বিশেষণ। ইহাও বিশেষ্যরূপ গ্রহণকালে "অনেকে’ হয়। সর্বত্রই এ নিয়ম খাটে। “কালোএ’ (কালোয়) যার মন ভুলেছে “শাদা এ' (শাদায়) তার কি করবে। এখানে কালো ও শাদা বিশেষণপদ তির্যকরূপ ধরিয়া বিশেষ্য হইয়াছে। ‘অপর’ ‘অন্য’ শব্দ বিশেষণ কিন্তু “অপরে’ ‘অন্যে’ বিশেষ্য। “দশ” শব্দ বিশেষণ, দেশে’ বিশেষ্য (দশে যা বলে)। -- ** ** নামসংজ্ঞা সম্বন্ধে এ-প্রকার তির্যকরূপ ব্যবহার হয় না-কখনো বলি না, “ষাদাবে ভাত খাচ্ছে”। তাহার কারণ পূর্বেই নির্দেশ করা হইয়াছে, বিশেষ নাম কখনো সামান্য বিশেষ্যপদ হইতে পারে না। বাংলায় একটি প্রবাদবাক্য আছে রামে মারলেও মরব রাবণে মারলেও মরব।” বস্তুত এখানে ‘রাম’ ও ‘রাবণ” সামান্য বিশেষ্যপদ- এখানে উক্ত দুই শব্দের দ্বারা দুই প্রতিপক্ষকে তির্যকরূপের মধ্যে প্রায়ই একটি সমষ্টিবাচকতা থাকে। যথা ‘আয়ীয়ে তাকে ভাত দেয় না।” এখানে আত্মীয় সমষ্টিই বুঝাইতেছে। এইরূপ ‘লোকে বলে।” এখানে ‘লোকে’ অর্থ সর্বসাধারণে। “লোক বলে’ কোনোমতেই হয় না। সমষ্টি যখন বুঝায়। তখন “বানরে বাগান নষ্ট করিয়াছে’ ইহাই ংখ্যা-সহযোগে বিশেষ্যপদ যদিচ সামান্যতা পরিহার করে তথাপি সকর্মক রূপে তাহাদের প্রতিও একার প্রয়োগ হয়, যেমন ‘তিন শেয়ালে যুক্তি করে গর্তে ঢুকলা, এমনকি “আমরা “তোমরা’, ‘তারা’ ইত্যাদি সর্বনাম বিশেষণের দ্বারা বিশেষ্যপদ বিশেষভাবে নির্দিষ্ট হইলেও সংখ্যার