পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা শব্দতত্ত্ব, ©ዔ¢ ; সংস্রবে। তাহারা তির্যকরূপ গ্রহণ করে। যেমন, “তোমরা- দুই বন্ধুতে “সেই দুটাে কুকুরে’ অনেকের মধ্যে বিশেষ একাংশ যখন এমন কিছু করে অপরাংশ যাহা করে না তখন কর্তৃপদে তির্যকরূপ ব্যবহার হয়। যথা ‘তাদের মধ্যে দুজনে গেল দক্ষিণে- এরূপ বাক্যের মধ্যে একটি অসমাপ্তি আছে। অর্থাৎ আর কেহ আর কোনো দিকে গিয়াছে বা বাকি কেহ যায় নাই এরূপ বুঝাইতেছে। যখন বলি একজনে বললে হাঁ” আর “আর-একজন বললে না।’ এমন আর-একটা কিছু শুনিবার অপেক্ষা থাকে। কিন্তু যদি বলা যায় “একজন বললে, হাঁ” তবে সেই সংবাদই পৰ্যাপ্ত। তির্যকরূপে হলন্ত শব্দে একার যোজনা সহজ, যেমন বানর বানরে। (বাংলায় বানর শব্দ হলন্ত)। অকারান্ত, আকারান্ত এরং ওকারান্ত শব্দের সঙ্গেও ‘এ’ যোজনায় বাধা নাই- ‘ঘোড়া এ’ (ঘোড়ায়) পেচোএ' (পেচোয়) ইত্যাদি। এতদব্যতীত অন্য স্বরান্ত শব্দে 'এ' যোগ করিতে হইলে 'ত' ব্যঞ্জনবৰ্ণকে মধ্যস্থ করিতে হয়। যেমন ‘গোরুতে’, ইত্যাদি। কিন্তু শব্দের শেষে যখন ব্যঞ্জনকে আশ্রয় না করিয়া শুদ্ধ স্বর থাকে তখন তাঁকে মধ্যস্থরূপে প্রয়োজন হয় না। যেমন উই, উইএ (উইয়ে), বউ, বউএ (বউয়ে) ইত্যাদি। এ কথা মনে রাখা আবশ্যক বাংলায় বিভক্তিরূপে যেখানে একার প্রয়োগ হয়। সেখানে প্রায় সর্বত্রই বিকল্পে “তে” প্রয়োগ হইতে পারে। এইজন্য ‘ঘোড়ায় লাথি মেরেছে, এবং ‘ঘোড়াতে লাথি মেরেছে। দুইই হয়। “উইয়ে নষ্ট করেছে, এবং ‘উইন্তে’ বা “উইয়েতো নষ্ট করেছে। হলন্ত শব্দে এই “তে’ বিভক্তি গ্রহণকালে তৎপূর্ববর্তী ব্যঞ্জনে পুনশ্চ একার যোগ করিতে হয়। যেমন বানরেতে”, “ছাগলোতে’’। "ט צסצ טואוזס বাংলা ব্যাকরণে বিশেষ বিশেষ্য ১ আমরা পূর্বে এক প্রবন্ধে দেখাইয়াছি, বাংলায় নামসংজ্ঞা ছাড়া বিশেষ্যপদবাচক শব্দ মাত্ৰই সহজ অবস্থায় সামান্য বিশেষ্য। অর্থাৎ তাহা জাতিবাচক। যেমন শুধু কাগজ’ বলিলে বিশেষভাবে একটি বা অনেকগুলি কাগজ বোঝায় না, তাহার দ্বারা সমস্ত কাগজকেই বোঝায়। এমন স্থলে যদি কোনো বিশেষ কাগজকে আমরা নির্দেশ করিতে চাই। তবে সেজন্য বিশেষ চিহ্ন ব্যবহার করা আবশ্যক হয়। ] vi ... . ১ বাংলা ব্যাকরণে তির্যকরূপ নামক প্রবন্ধে, বাংলায় বিশেষ বিশেষ স্থলে কর্তৃকারকে একারযোগে যে রূপ হয় তাহাকে তির্যকরূপ নাম দিয়াছিলাম। তাহাতে কোনো পাঠক আপত্তি প্রকাশ করিয়াছেন। তিনি বলেন ইহাকে বলা উচিত কর্তৃকারকে সপ্তমী বিভক্তি। নাম লইয়া তর্ক নিস্ফল। নাহয় নাই বলিলাম তির্যকরূপ'– নাহয় আর-কোনো নাম দেওয়া গেল। আমার বক্তব্য এই ছিল যে, কোনো কোনো স্থলে বাংলা বিশেষ্যপদ তাহার সহজরােপ পরিত্যাগ করে। তাহার এই রূপের বিকারকেই অন্যান্য গৌড়ীয় ভাষার সহিত তুলনা করিয়া "তির্ষিকরূপ’ নাম দিয়াছিলাম। ঘোড়ে, কুত্তেপ্রভৃতি হিন্দি শব্দই হিন্দ্রি তির্যকরূপের দৃষ্টিান্ত ঘোড়ওয়া কাহারওয়া । প্রভৃতি শব্দ নহে- অনন্ত তুলনামূলক ব্যাকরণবিদগ্ৰাণ শেষোক্তগুলিকে তির্যকরূপের দৃষ্টান্ত, বলিয়া ব্যবহার করেন নাই। দ্বিতীয় কথা এই— বাংলা কর্তৃকারকের একার-সংযুক্ত রূপকে যদি সংস্কৃত কোনাে বিভক্তির নাম । দিতেই হয় তবে আমার মতে তাহা সপ্তমী নহে তৃতীয়া। বাংলা বাঘে খাইল বাক্যটি সংস্কৃত ব্যান্ত্রেণ খাদিতঃ' বাক্য হইতে উৎপন্ন এমন অনুমান করা যাইতেও পারে। যাহাই হউক। এ সকল অনুমানের কথা। আমার সে প্রবন্ধে আসল কথাটা ব্যাকরণের নাম নহে, ব্যাকরণের নিয়ম ৷ ।