পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VP3 রবীন্দ্র-রচনাবলী হাড়িনি, সাপ সাপিনি, পাগল পাগলিনি, উড়ে উড়েনি, কায়েত কায়েতনি, খোট্টা খোট্টানি, চৌধুরী এই প্ৰত্যয়যোগের নিয়ম কী তাহা বলিবার কোনো প্রয়োজন নাই কারণ এ প্রত্যয়টি কেবলমাত্র কয়েকটি শব্দেই আবদ্ধ, তাহার বাহিরে প্রয়ােজন হইলেও ব্যবহার হয় না। পাঞ্জাবি সম্বন্ধে পাঞ্জাবিনি, মারাঠা সম্বন্ধে মারাঠনি, গুজরাটি সম্বন্ধে গুজরাটুনি প্রয়োগ নাই। উড়েনি আছে কিন্তু শিখনি মগনি মাদ্রাজিনী নাই। : ময়ূর জাতির স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে দৃশ্যত বিশেষ পার্থক্য থাকাতে ভাষায় ময়ুর ময়ূরী ব্যবহৃত হয়। কিন্তু চিল সম্বন্ধে এরূপ ব্যবহার নাই। - পুরুষ মেয়ে, অথবা পুরুষ মানুষ, মেয়ে মানুষ, স্বামী স্ত্রী, ভাই বোন, বাপ মা, ছেলে মেয়ে, মন্দা মাদী, ষাঁড় গাই, বর কনে, জামাই বউ (বউ শব্দটি পুত্রবধু ও স্ত্রী উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়)। সাহেব বিবি বা মেম, কর্তা গিন্নি (গৃহিণী), ভূত পেত্নী প্রভৃতি কয়েকটি শব্দ আছে যাহার স্ত্রীলিঙ্গবাচক ও পুংলিঙ্গবাচক রূপ স্বতন্ত্র। . ' í সংস্কৃত ভাষার মতো বাংলা ভাষায় স্ত্রীলিঙ্গ শব্দের বিশেষণ স্ত্রীলিঙ্গ হয় না। বাংলায় লিখিত বা কথিত ভাষায় সংস্কৃত শব্দ ব্যবহারকালে স্ত্রীলিঙ্গ শব্দের বিশেষণে কখনো কখনাে স্ত্রীলিঙ্গ রূপ ব্যবহার হয়- কিন্তু ক্রমশ ভাষা যতই সহজ হইতেছে ততই ইহা কমিয়া আসিতেছে। বিষম বিপদ, পরম সম্পদ, বা মধুরা ভাষা পরম পণ্ডিতেও বাংলা ভাষায় ব্যবহার করেন না। বিশেষত বিশেষণ যখন বিশেয্যের পরে ক্রিয়ার সহিত যুক্ত হয় তখন তাহা বর্তমান বাংলায় কখনোই স্ত্রীলিঙ্গ হয় না- অতিক্রান্তা রজনী বলা যাইতে পারে। কিন্তু রজনী অতিক্রান্ত হইল, আজকালকার দিনে কেহই লিখে না। সংস্কৃত ব্যাকরণের উচ্চারণমতে কতকগুলি শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ, সে স্থলে সংস্কৃত শব্দ ব্যবহারকালে আমরা সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম মানি কিন্তু আধুনিক ভাষায় দেশ সম্বন্ধে তাহা খাটে না! ভারতবর্ষ বা ভারত, সংস্কৃত ভাষায় কখনোই স্ত্রী শ্ৰেণীয় শব্দ হইতে পারে না, কিন্তু আধুনিক বঙ্গ সাহিত্যে তাহাকে ভারতমাতা বলিয়া অভিহিত করা হয়। বঙ্গও সেইরূপ বঙ্গমাতা। দেশকে মাতৃভাবে চিন্তা করাই প্রচলিত হওয়াতে দেশের নামকে সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসারে মানা হয় না। কতকগুলি সংস্কৃত শব্দ বাংলায় স্ত্রী প্রত্যয় গ্রহণকালে সংস্কৃত নিয়ম রক্ষা করে না। যেমন, সিংহিনী (সিংহী), গৃধিনী (গুগ্ৰী, গৃধ্রু শব্দ সচরাচর ব্যবহৃত হয় না), অধীনী (অধীনা), হংসিনী (হংসী), সুকেশিনী (সুকেশী), মাতঙ্গিনী (মাতঙ্গ), কুরঙ্গিনী (কুরঙ্গী), বিহঙ্গিনী (বিহঙ্গী), ভুজঙ্গিনী (ভুজঙ্গী), হেমাঙ্গিনী (হেমাঙ্গী)। . . . * , বিশেষণ শব্দ বাংলায় স্ত্রী প্ৰত্যয় প্রাপ্ত হয় না। কিন্তু বিদে এ নিয়ম সর্বত্র খাটে না। খেদী, নেকী। . ইয়া প্রত্যয়ান্ত শব্দ স্ত্রীলিঙ্গে ইয়া প্ৰত্যয় ত্যাগ করিয়া ই প্রত্যয় গ্ৰহণ করে। ঘর-ভাঙানিয়া (ভাঙানে)। ঘরভাঙানী, মনমাতানিয়া মনমাতনী, পাড়াকুদুলিয়া পাড়াকুদুলি, কীর্তনীয়া কীর্তনী। হিন্দিতে ক্ষুদ্রতা ও সৌকুমাৰ্য-বোধক ই প্রত্যয়যুক্ত শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ বলিয়া গণ্য হয়- পুং গাড়া, স্ত্রীং গাড়ি, পুং রসসা, স্ত্রীং রসসী। { " + বাংলায় বৃহত্ত্ব অর্থে আ ও ক্ষুদ্রত্ব অর্থেই প্রত্যয় প্রয়ােগ হইয়া থাকে, অন্যান্য গৌড়ীয় ভাষার দৃষ্টান্ত অনুসারে ইহাদিগকে পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ বলিয়া গণ্য করা যাইতে পারে। - । পদ বিশেষ্য অর্থ গ্রহণ করিলে