পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা শব্দতত্ত্ব 8» Sዕ কর্ম-আমাকে আমাদের, তোমাকে তোমাদের (দিগকে), আপনাকে আপনাদের, তাকে তাদের, তাকে তঁদের, একে এদের, একে এঁদের, ওঁকে ওঁদের, কাকে কাদের, কোনটাকে কোনগুলোকে, যাকে যাদের, যেটাকে যেগুলোকে, সেটাকে সেগুলোকে। করণ- আমাকে দিয়ে, তাকে দিয়ে, কোনটাকে দিয়ে, ইত্যাদি। কেন, কিসে, কিসে কোরে, किं नििश ; याऊ, याउ কোরে, যা দিয়ে ; তাতে, তাতে কোরে, তা দিয়ে ইত্যাদি। অপাদান- আমার চেয়ে এটা ভালো, আমা হতে এ হবে না, আমার থেকে ও বড়ো, এটার চেয়ে, ওটা থেকে ইত্যাদি। সম্বন্ধ- আমার তোমার তার এগুলোর ওগুলোর ইত্যাদি। অধিকরণ- আমাতে তোমাতে, এটাতে ওটাতে, আমায় তোমায়, আমাদের মধ্যে, এগুলোতে ইত্যাদি। এখন তখন যখন কখন, এমন তেমন কেমন যেমন অমন, অত তত যত, এখানে যেখানে Gate | ग्रांत्रि-कार्डिरल ७७८२७ ܔ ংলায় কথার ভাষা আর লেখার ভাষা নিয়ে যে তর্ক কিছুকাল চলছে আপনি আমাকে সেই তর্কে যোগ দিতে ডেকেছেন। আমার শরীর অত্যন্ত ক্লান্ত বলে এ কাজে আমি উৎসাহ বোধ করছি নে। সংক্ষেপে দুই-একটা কথা বলব। কৰ্ণ অৰ্জ্জুন উভয়ে সহােদর ভাই হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে যখন জাতিভেদ ঘটেছিল, একজন রইল ক্ষত্ৰিয় আর-একজন হ’ল সূত, তখনি দুই পক্ষে ঘোর বিরোধ বেধে গেল। বাংলা লেখায় আর কথায় আজ সেই দ্বন্দ্ব বেধে গেছে। এরা সহোদর অথচ এদের মধ্যে ঘটেছে শ্রেণীভেদ, একটি হলেন সাধু, আর-একটি হলেন অসাধু। এই শ্রেণীভেদের কারণ ছিলেন ব্ৰাহ্মণ পণ্ডিত। সে কথাটা খুলে বলি। " এক সময়ে বাংলায় পদ্য সাহিত্যই একা ছিল ; গদ্য ছিল মুখে ; লেখায় স্থান পায় নি। পদ্যের ভাষা কোনো এক সময়কার মুখের ভাষার কাছ ঘেঁষা ছিল সন্দেহ নেই- তার মধ্যে করিতেছিলাম” বা ‘আমারদিগোর’ ‘এবং” “কিম্বা’ অথবা” অথচ’ ‘পরস্তুর ভিড় ছিল না। এমন-কি, মুই" করলু হৈনু ‘মোসবার’ প্রভৃতি শব্দ পদ্য ভাষায় অপভাষা বলে গণ্য হয় নি। বলা বাহুল্য, এ-সকল কথা কোনো এক সময়ের চলিত কথা ছিল। হিন্দি সাহিত্যেও দেখি কবীর প্রভৃতি কবিদের ভাষা মুখের কথায় গাঁথা। হিন্দিতে আর-একদল কবি আছেন, যাঁরা ছন্দে ভাষায় অলংকারে সংস্কৃত ছাদকেই আশ্রয় করেচেন। পণ্ডিতদের কাছে এঁরাই বেশি বাহবা পান। ইংরেজিতে যাকে Snobbishness বলে এ জিনিসটা তাই। হিন্দি প্রাকৃত যথাসম্ভব সংস্কৃত ছদ্মবেশে আপন প্রাকৃতরূপ ঢাকা দিয়ে সাধুত্বের বড়াই করতে গিয়েচে। তাতে তার যতই মান বাড়ুক-না কেন, মথুরার রাজদণ্ডের ভিতর ফু দিয়ে সে বৃন্দাবনের বাঁশি বাজাতে পারে নি। যা হােক, যখন বাংলা ভাষায় গদ্যসাহিত্যের অবতারণা হল তার ভার নিলেন সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত। দেশের ছেলেমেয়েদের মুখে মুখে প্রতিদিন যে গদ্য বাণী প্রবাহিত হচ্চে তাকে বহুদূরে রেখে সংস্কৃত সরোবর থেকে তঁরা নালা কেটে যে ভাষার ধারা আনলেন তাকেই নাম দিলেন