পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী س8b বা উত্তর বঙ্গের উপভাষা ব্যবহার করেন নি- স্বভাবতই কলকাতার চলতি ভাষা তারা গ্ৰহণ করেচেন। এর থেকে বুঝবে সাহিত্য স্বভাবতই কোন প্রণালী অবলম্বন করেচে। ১ । ৬। কার্তিক ১৩৩৮ fift S এ কথা আর অস্বীকার করা চলে না যে বাংলা সাহিত্যের ভাষা কলকাতার চালিত ভাষাকে আশ্রয় করেছে। শিশুকাল হতে বাংলার সকল প্রদেশের লোকেরই এই ভাষা শিক্ষা করা আবশ্যক। নইলে সাহিত্যে ব্যবহারের সময় বাধা পেতে হবে। যুরোপের সকল দেশেই প্রদেশভেদে উপভাষা প্রচলিত আছে কিন্তু তৎসত্ত্বেও সে-সকল দেশে ভদ্রসাধারণের কথিত ভাষায় প্রভেদ নেই। এবং সেই ভদ্রসমাজের কথিত ভাষার সঙ্গে সেসকল দেশের সাহিত্যের ভাষা মোটের উপর অভিন্ন। আমাদের দেশেও ভাষার মধ্যে যথাসম্ভব এইরকম মিল প্রার্থনীয়। বাংলা ভাষা স্বভাবতই দ্রুতবেগে এই মিলের দিকে চলেচে । কলকাতার কথিত ভাষার মধ্যেও সম্পূৰ্ণ ঐক্য নেই। লন্ডনেও ভাষার একটা নিম্নস্বর আছে তাকে বলে ককনি। সেটা সাহিত্যভাষা থেকে দূরবর্তী। আমাদের চলিত ভাষামূলক আধুনিক সাহিত্য ভাষার আদর্শ এখনো পাকা হয় নি বলে লেখকদের রুচি ও অভ্যাস-ভেদাবশত শব্দব্যবহার সম্বন্ধে যথেচ্ছাচার আছে। আরো কিছুকাল পরে তবে এর নির্মাণকাৰ্য সমাধা হবে। তবু আপাতত আমি নিজের মনে একটা নিয়ম অনুসরণ করি। আমার কানে যেটা অপভাষা বলে ঠেকে সেটাকে আমি বর্জন করি। “ভিতর” এবং “ভেতর” “উপর” এবং “ওপর” “ঘুম৩ে” এবং “যুমুতে।” এই দুইরকমেরই ব্যবহার কলকাতায় আছে কিন্তু শেষোক্ত গুলিকে আমি অপভাষা বলি। “দুয়োর” কথার জায়গায় “দোর” কথা ব্যবহার করতে আমার কলমে ঠেকে। কলকাতার “ভাইয়ের বিয়ে” না বলে কেউ কেউ “ভেয়ের বে” কিংবা “করলুম”-এর জায়গায় “কম্বু” বলে, কিন্তু এগুলিকে সাহিত্যে স্বীকার করতে পারি নে। গুছুতে, রেতের বেলা প্রভৃতি ব্যবহার আজকাল দেখি, কিন্তু এগুলিকে স্বীকার করে নিতে পারি নে।। ২ R প্ৰণামের শ্রেণীভেদ আছে। ১ নম্বর সহজ প্ৰণাম হচ্ছে গ্ৰীবা কুঁকিয়ে জোড় হাত কপালে ঠেকানো। যখন বলি গড় করি তোমার পায়ে তখন বােঝায় এমন কোনো ভঙ্গি করা যেটা বিনম্রতার চূড়ান্ত। গড় শব্দে একটা বিশেষ নম্রতার ভঙ্গি বােঝায় তার প্রমাণ তাঁর সঙ্গে করা ১ শ্ৰীচিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিত পত্ৰ। - ২ রবীন্দ্রভবনে রক্ষিত পাণ্ডুলিপির একটি পৃষ্ঠা। দুষ্টব্য : অনুরূপ আলোচনা ‘বাংলাভাষা পরিচয়', অধ্যায় ১০ ও ১২। "