পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী وU\88 এখানে courage বটে hope৩ও বটে। সুতরাং এটাকে ইংরেজিতে তরজমা করতে হলে ও দুটোর একটাও চলবে না। তখন বলতে হবে- । Keep firm the faith, my heart, it must come to happen. উলটে বাংলায় তরজমা করতে হলে ‘বিশ্বাস’ শব্দের ব্যবহারে কাজ চলে বটে। কিন্তু ভরসা। শব্দের মধ্যে যে একটা তাল ঠোকার আওয়াজ পাওয়া যায় সেটা থেমে যায়। ইংরেজি শব্দের তরজমায় আমাদের দাসভােব প্রকাশ পায়, যখন একই শব্দের একই প্ৰতিশব্দ খাড়া করি। যথা ‘সিম্প্যাথির প্রতিশব্দে সহানুভূতি ব্যবহার। ইংরেজিতে সিম্প্যাথি কোথাও বা হৃদয়গত কোথাও বা বুদ্ধিগত। কিন্তু সহানুভূতি দিয়েই দুই কাজ চালিয়ে নেওয়া কৃপণতাও বটে। হাস্যকরীতাও বটে। “এই প্রস্তাবের সঙ্গে আমার সহানুভূতি আছে' বললে মানতে হয় যে প্রস্তাবের অনুভূতি আছে। ইংরেজি শব্দটাকে সেলাম করব কিন্তু অতটা দূর পর্যন্ত তার তঁবেদারি করতে পারব না। আমি বলবি “তোমার প্রস্তাবের সমর্থনা করি”। এক কথা থেকে আর-এক কথা উঠে পড়ল। তাতে কী ক্ষতি আছে। যাকে ইংরেজিতে বলে essay, আমরা বলি প্ৰবন্ধ, তাকে এমনতরো অবন্ধ করলে সেটা আরামের হয় বলে আমার ধারণা। নিরামিষ-ভোজীকে গৃহস্থ পরিবেশন করবার সময় ঝোল আর র্কাচকলা দিয়ে মাছটা গোপন করতে চেয়েছিল, হঠাৎ সেটা গড়িয়ে আসবার উপক্রম করতেই তাড়াতাড়ি সেরে নিতে গেল, নিরামিষ পঙক্তি-বাসী ব্যাকুল হয়ে বলে উঠল “যা আপসে আতা উসকো আনে দেও। তোমাদের কোনো কোনো লেখায় এই রকম আপসে আনেওয়ালাদের নির্বিচারে পাতে ডুতে দিয়ো, নিশ্চিত হবে উপাদেয়, অর্থাৎ ইন্টারেস্টিং। এবার পত্র দুটোর প্রতি মন দেও। এইখানে বলে রাখি, ইংরেজিতে, যে-চিহ্নকে অ্যাপসট্রিফির চিহ্ন বলে কেউ কেউ বাংলা পারিভাষিকে তাকে বলে ইলেক’, এ আমার নতুন শিক্ষা। এর যথার্থ্য সম্বন্ধে আমি দায়িক নই ; এই পত্রে উক্ত শব্দের ব্যবহার আছে। ” ৮ ডিসেম্বর ১৯৩২ s একদা আমার মনে তর্ক উঠেছিল যে, চিহ্নগুলো ভাষার বাইরের জিনিস, সেগুলোকে অগত্যার বাইরে ব্যবহার করলে ভাষার অভ্যাস খারাপ হয়ে যায়। যেমন, লাঠিতে ভর করে চললে পায়ের 'পরে নির্ভর কমে। প্রাচীন পুথিতে দাঁড়ি ছাড়া আর-কোনো উপসর্গ ছিল না, ভাষা নিজেরই বাক্যগত ভঙ্গিদ্বারাই নিজের সমস্ত প্রয়োজন সিদ্ধি করত। এখন তার এত বেশি নােকর চাকর কেন। ইংরেজের ছেলে যখন দেশে থাকে তখন একটিমাত্ৰ দাসীতেই তার সব কাজ চলে যায়, ভারতবর্ষে এলেই তার চাপরাসী হরকরা বেহারিা বাটলার চোপদার জমাদার মালী মেথর ইত্যাদি কত কী। আমাদের লিখিত ভাষাকেও এইরকম হাকিমী সাহিবিয়ানায় পেয়ে বসেছে। ‘কে হে তুমি’ বাকাটাই নিজের প্রশ্নড় হাঁকিয়ে চলেছে। তবে কেন ওর পিছনে আবার একটা কুঁজওয়ালা সহিস । সব চেয়ে আমার খারাপ লাগে বিস্ময়ের চিহ্ন। কেননা বিস্ময় হচ্ছে একটা হৃদয়ভােব ১ সুধীন্দ্রনাথ দত্তকে লিখিত পত্র ।