পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 . Ο রবীন্দ্র-রচনাবলী কালাপাহাড়ের বৃত্তি অবলম্বন করিয়াছেন। তঁহারা সংস্কৃত বানানকে বাংলা বানানের আদর্শ কল্পনা করিয়া যথার্থ বাংলা বানান নির্বিচারে নষ্ট করিয়াছেন ; ইহাতে ভাষাতত্ত্বজিজ্ঞাসুদিগের বিশেষ অসুবিধা ঘটিয়াছে। বর্তমান সাহিত্যের বাংলা বহুলপরিমাণে সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতদিগের উদ্ভাবিত বলিয়া বাংলা বানান, এমন-কি, বাংলাপদবিন্যাস প্ৰণালী তাহার স্বাভাবিক পথভ্ৰষ্ট হইয়া গিয়াছে, এখন তাহাকে স্বপথে ফিরাইয়া লইয়া যাওয়া সম্ভবপর নহে। কিন্তু আধুনিক বাংলার আদর্শে যাহারা প্রাচীন পুথি সংশোধন করিতে থাকেন তাহারা পরম অনিষ্ট করেন।” S 90 SR বানান লইয়া কয়েকটি কথা বলিতে ইচ্ছা করি। রাঙা ভাঙা ডাঙা আঙুল প্রভৃতি শব্দ ঈঅক্ষরযোগে লেখা নিতান্তই ধ্বনিসংগতিবিরুদ্ধ। গঙ্গা শব্দের সহিত রাঙা, তুঙ্গ শব্দের সহিত ঢা"ঙ তুলনা করিলে এ কথা স্পষ্ট হইবে। মূল শব্দটিকে স্মরণ করাইবার জন্য ধ্বনির সহিত বানানের বিরোধ ঘটানো কর্তব্য নহে। সে নিয়ম মানিতে হইলে চাদকে চান্দ, পাককে পঙ্ক, কুমারকে কুম্ভর লিখিতে হয়। অনেকে মূলশব্দের সাদৃশ্যরক্ষার জন্য সেনাকে সোণা, কানকে কাণ বানান করেন, অথচ শ্রবণশব্দজ শোনাকে শোণিা লেখেন না। যে-সকল সংস্কৃত শব্দ অপভ্রংশের নিয়মে পুরা বাংলা হইয়া গেছে সেগুলির ধ্বনি অনুযায়িক বানান হওয়া উচিত। প্রাকৃতভাষার বানান ইহার উদাহরণস্থল। জোড়া, জোয়ান, জাতা, কাজ প্রভৃতি শব্দে আমরা স্বাভাবিক বানান গ্রহণ করিয়ছি, অথচ অন্য অনেক স্থলে করি নাই। [সাহিত্য-পরিষৎ] পত্রিকা-সম্পাদকমহাশয় বাংলা বানানের নিয়ম সম্বন্ধে আলোচনা উত্থাপন করিলে আমরা কৃতজ্ঞ হইব।। ২ >○○br টেকসটবুক কমিটি ক্ষকারকে বাংলা বর্ণমালা হইতে নির্বািসন দিয়াছেন। শ্ৰীযুক্ত সতীশচন্দ্র বিদ্যাভূষণ অনেক পুরাতন নজির দেখাইয়া ক্ষকারের পক্ষে ওকালতি করিয়াছেন। অসংযুও ব্যঞ্জনবর্ণের দলে ক্ষ কেমন করিয়া প্ৰথমে প্রবেশ করিয়াছিল জানি না। কিন্তু সে সময়ে দ্বাররক্ষার্ক যে সতর্ক ছিল, তাহা বলিতে পারি না। আধুনিক ভারতবষীয় আর্যভাষায় মূর্ধন্য ষ-এর উচ্চারণ খ হইয়া গিয়াছিল, সুতরাং ক্ষকারে মূর্ধন্য ষ-এর বিশুদ্ধ উচ্চারণ ছিল না। না থাকিলেও উহা যুঞ্জ অক্ষর এবং উহার উচ্চারণ কখ। শব্দের আরম্ভে অনেক যুক্ত অক্ষরের যুক্ত উচ্চারণ থাকে না, যেমন জ্ঞান শব্দের জ্ঞ ; কিন্তু অজ্ঞ শব্দে উহার যুক্ত উচ্চারণ সম্বন্ধে সন্দেহ থাকে না। ক্ষকারও সেইরূপ— ক্ষয় এবং অক্ষয় শব্দের উচ্চারণে তাহা প্রমাণ হইবে। অতএব অসংযুক্ত বর্ণমালায় ক্ষকার দলভ্ৰষ্ট একঘরে ; তাহাতে সন্দেহ নাই। সেই ব্যঞ্জনপঙক্তির মধ্যে উহার অনুরূপ ১. সাময়িক সাহিত্য, ভারতী, অগ্রহায়ণ ১৩০৫, পৃ ৭৬২ ৷৷ ২. মাসিক-সাহিত্য-সমালোচনা, বঙ্গদর্শন, বৈশাখ ১৩০৮, পৃ. ৬৪ ।