পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ংলাভাষা ও বাঙালি চরিত্র : ১ । অনেক সময় দেখা যায় সংস্কৃত শব্দ বাংলায় রূপান্তরিত হয়ে এক প্রকার বিকৃত ভােব প্রকাশ করে। কেমন একরকম ইতর বর্বর আকার ধারণ করে। ঘূণা’ শব্দের মধ্যে একটা মানসিক ভাব আছে। Aversion, indignation, contempt fêifer fifts স্থল অনুসারে ঘূণার প্রতিশব্দ স্বরূপে ব্যবহৃত হইতে পারে। কিন্তু ‘ঘেন্না’ বললেই নাকের কাছে একটা দুৰ্গন্ধ, চোখের সামনে একটা বীভৎস দৃশ্য, গায়ের কাছাকাছি একটা মলিন অস্পৃশ্য বস্তু কল্পনায় উদিত হয়। সংস্কৃত গ্ৰীতি' শব্দের মধ্যে একটা বিমল উদার মানসিক ভােব নিহিত আছে। কিন্তু বাংলা পিরতি' শব্দের মধ্যে সেই বিশুদ্ধ ভাবটুকু নাই। বাংলায় ‘স্বামী’ ‘স্ত্রীর সাধারণ প্রচলিত প্রতিশব্দ ভদ্রসমাজে উচ্চারণ করিতে লজ্জা বোধ হয়। ভর্তা’ এবং তাহার বাংলা রূপান্তর তুলনা করিয়া দেখিলেই এ কথা স্পষ্ট হইবে। আমার বোধ হয় সংস্কৃত ভাষায় ‘লজ্জা’ বলিলে যতটা ভােব প্রকাশ করে, বাংলায় ‘লজ্জা’ ততটা করে না। বাংলায় ‘লজ্জা’ এক প্রকার প্রথাগত বাহ্য লজ্জা, তাহ modesty নহে। তাহ হী নহে। লজ্জার সহিত শ্ৰীীর সহিত একটা যোগ আছে, বাংলা ভাষায় তাহা নাই। সৌন্দর্যের প্রতি স্বাভাবিক লক্ষ্য থাকিলে আচারে ব্যবহারে, ভাবভঙ্গিতে ভাষায় কণ্ঠস্বরে সাজসজ্জায় একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সংযম আসিয়া পড়ে। বাংলায় লজ্জা বলিতে যাহা বুঝায় তাহা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, তাহাতে বরঞ্চ আচার-ব্যবহারের সামঞ্জস্য নষ্ট করে, একটা বাড়াবাড়ি আসিয়া সৌন্দর্যের ব্যাঘাত করে। তাহা শরীর-মনের সুশোভন সংযম নহে, তাহার অনেকটা কেবলমাত্র শারীরিক অভিভূতি। | , গল্প আছে- বিদ্যাসাগর মহাশয় বলেন উলোয় শিব গড়িতে বােদর হইয়া দাঁড়ায়, তেমনি বাংলার মাটির বাঁদর গড়িবার দিকে একটু বিশেষ প্রবণতা আছে। লক্ষ্য শিব এবং পরিণাম বঁােদর ইহা অনেক স্থলেই দেখা যায়। উদার প্রেমের ধর্ম বৈষ্ণব ধর্ম বাংলা দেশে দেখিতে দেখিতে কেমন হইয়া দাঁড়াইল। একটা বৃহৎ ভাবকে জন্ম দিতে যেমন প্রবল মানসিক বীর্ষের আবশ্যক, তাহাকে পোষণ করিয়া রাখিতেও সেইরূপ বীর্যের আবশ্যক। আলস্য এবং জড়তা যেখানে জাতীয় স্বভাব, সেখানে বৃহৎ ভাব দেখিতে দেখিতে বিকৃত হইয়া যায়। তাহাকে বুঝিবার, তাহাকে রক্ষা করিবার এবং তােহর মধ্যে প্রাণসঞ্চার করিয়া দিবার উদ্যম নাই। আমাদের দেশে সকল জিনিসই। যেমন এক প্রকার slang হইয়া আসে। আমার তাই একএকবার ভয় হয় পাছে ইংরাজদের বড়ো ভাব বড়ো কথা আমাদের দেশে ক্রমে সেইরূপ অনার্য ভাব ধারণ করে। দেখিয়াছি বাংলায় অনেকগুলি গানের সুর কেমন দেখিতে দেখিতে ইতর হইয়া। যায়। আমার বোধ হয় সভ্যদেশে যে যে সুর সর্বসাধারণের মধ্যে প্রচলিত, তাহার মধ্যে একটা । গভীরতা আছে, তাহা তাঁহাদের national air, তাহাতে তাঁহাদের জাতীয় আবেগ পরিপূর্ণভাবে 416 R8 | * Qi Home Sweet Home, Auld lang Syne—<TReriT (Cor QPisio *is* (<STR3I ? এখানকার সাধারণ-প্রচলিত সুরের মধ্যে গাম্ভীৰ্য নাই, স্থায়িত্ব নাই, ব্যাপকতা নাই। সেইজন্য তাহার কোনােটাকেই national air বলা যায় না। হিন্দুস্থানীতে যে-সকল খাম্বাজ বিঝিটি কাফি । প্রভৃতি রাগিণীতে শোভন ভদ্রভাব লক্ষিত হয়, বাংলায় সেই রাগিণীই কেমন কুৎসিত আকার ধারণ করিয়া বড় লজ্জা করে পাড়ায় যেতে ‘কেন বল সখি বিধুমুখী' একে অবলা সরলা’ প্রভৃতি গানে পরিণত হইয়াছে। কেরল, তাহাঁই নহে, আমাদের এক-একরার মনে হয়। হিন্দুস্থানী এবং বাংলার উচ্চারণের মধ্যে এই ভদ্র এবং বর্বর ভাবের প্রভেদ লক্ষিত হয়। হিন্দুস্থানী গান বাংলায় ভাঙিতে গেলেই তাঁহা ।