পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা শব্দতত্ত্ব 896 creep, sweep, totter, waddle, এমন আরো অনেক শব্দ আছে। উহারা প্রত্যেকে বিভিন্ন ছবি রচনা করে, কেবলমাত্র ঘটনার উল্লেখ করে না। ইহা ছাড়া গঠন-বৈচিত্র্য, বর্ণ-বৈচিত্ৰ্য সম্বন্ধে ইংরাজিতে বিচিত্র শব্দ আছে। আমরা কখনো প্রকৃতিকে স্পষ্ট করিয়া লক্ষ্য করি নাই। আমাদের চিত্রশিল্প নাই ; আমাদের চিত্রে এবং কবিতায় প্রকৃতির অতি-বর্ণনাই অধিক। আমরা যেন চক্ষে কিছুই দেখি না- অলস কল্পনার মধ্যে প্রকৃতি বিকৃতকার ধারণ করিয়া উদিত হয়। আমাদের শরীর-বর্ণনা তাহার দৃষ্টান্তস্থল। মানবদেহের এরূপ সামঞ্জস্যহীন অনৈসৰ্গিক বৰ্ণনা আর কোথাও দৃষ্ট হয় না। আমরা মোটমুটি একটা তুলনার দ্রব্য-পাইলেই অমনি তাহার সাহায্যে বর্ণনা করিতে চেষ্টা করি। পরিষ্কার ছবি ব্যক্ত করিবার ঔদাসীন্য থাকতে আমাদের ছবির ভাষা নাই। বিরহিনীর বিরহাবস্থা বর্ণনায় আমাদের অতি-কল্পনা ও স্বভাবের প্রতি মনোযোগহীনতা প্রকাশ পায়। আমরা আলস্যবশত চোখে যেটুকু কম দেখি, কোণে বসিয়া মনে মনে একটা চার্ট গড়িয়া সেটুকু পূরণ করিয়া লই। আমরা অল্প স্বল্প দেখি অথচ খুব বিস্তুত করিয়া generalize করি। তাড়াতাড়ি একটা প্ৰকাণ্ড system বঁধিয়া লই, কিন্তু অগাধ কল্পনার ভাণ্ডার হইতে তাহার সরঞ্জাম সঞ্চয় করি। আমাদের অপরিমিত কল্পনা আমাদের নিরীক্ষণ-শক্তির আগে আগে ছুটিয়া চলে, একটু দেখিবা মাত্র তাহার কল্পনা মস্ত হইয়া উঠে। এইজন্য জগৎ স্পষ্ট দেখা হইল না- অথচ সকল বিষয়ে মস্ত মস্ত তন্ত্র বাঁধা হইল। পৃথিবীর একটুখানি দেখিয়াই অমনি সমস্ত পৃথিবীর একটি বিস্তৃত ভূগোল বিবরণ রচনা করা হইয়াছে, এমন আরো দৃষ্টান্ত আছে। . Vg { Y Y brbr জাতীয় সাহিত্য আমরা বাংলা জাতীয় সাহিত্য’ প্রবন্ধের নামকরণে ইংরাজি ন্যাশনাল’ শব্দের স্থলে "জাতীয়’ শব্দ ব্যবহার করিয়াছি বলিয়া সাহিতা’-সম্পাদক মহাশয় আমাদের প্রতি কিঞ্চিৎ শ্লেষকটাক্ষপাত প্রথমত, অনুবাদটি আমাদের কৃত নহে; এই শব্দ বহুকাল হইতে বাংলা সাহিতে্যু ন্যাশনাল-শব্দের প্রতিশব্দরূপে ব্যবহৃত হইয়া আসিতেছে। দ্বিতীয়ত, ভাষার পরিণতি সহকারে স্বাভাবিক নিয়মে অনেকগুলি শব্দের অর্থ বিস্তৃতি লাভ করে। সাহিত্য' শব্দটি তাহার উদাহরণস্থল। সাহিত্য-সম্পাদক মহাশয়ও ‘সাহিত্য’ শব্দটিকে ইংরাজি লিটারেচার’ অর্থে প্রয়ােগ করিয়া থাকেন। সম্পাদক মহাশয় সংস্কৃতজ্ঞ, ইহা তাঁহার অবিদিত নাই যে, লিটারেচর’ শব্দের অর্থ যতদূর ব্যাপক, সাহিত্য শব্দের অর্থ ততদূর পৌঁছে না। শব্দকল্পদ্রুম। অভিধানে সাহিত্য' শব্দের অর্থ এইরূপ নির্দিষ্ট হইয়াছে মনুষ্যকৃতশ্লোকময়গ্রন্থবিশেষঃ। স তু ভট্টিরঘুকুমারসম্ভবমাঘভারবিমেঘদূতবিদ ন্ধমুখ্যম শুনশান্তিশতকপ্রভৃতয়ঃ।’ এমন-কি, রামায়ণ মহাভারতও সাহিত্যের মধ্যে গণ্য হয় নাই, তাহা ইতিহাসরূপে খ্যাত ছিল। এইজন্য মহারাষ্ট্ৰীয় ভাষায় ‘সাহিত্য’ শব্দের পরিবর্তে ‘বাত্ময়' শব্দ ব্যবহৃত হইয়া থাকে। রঘুবংশের তৃতীয় সর্গে ২৭শ লিপের্যথাবিদগ্রহণেন বাত্ময়ং | নদীমুখেনেব সমুদ্রমবিশৎ। অর্থাৎ রঘু লিপিরূপ নদীপথ দিয়া বাত্ময়ারূপ সমুদ্রে প্রবেশ করিলেন। ” » Vevebo