পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা শব্দতত্ত্ব 8br ভিন্ন প্রকারের অর্থ করেন, এরূপ পাঠক বা লেখক-সংখ্যা বঙ্গদেশে অল্প-সাধারণত বঙ্গবাসী এ প্রকার কষ্টকর কার্যে হস্তক্ষেপ করিতে অগ্রসর হয়েন না। সেইজন্য ভারতীর প্রাচীন কাব্য সম্বন্ধীয় প্রস্তাব পাঠ করিয়া আমাদের এত হর্ষ হইয়াছে। আমাদিগের বিষাদের কারণ এই, যে, প্রস্তাব-লেখক মহাশয় নিরপেক্ষভাবে প্রাচীন কাব্য সংগ্রহের সমালোচনা করেন নাই। তিনি অনেক স্থানে সম্পাদকের অযথা নিন্দা করিয়াছেন। এ সম্বন্ধে আমাদের কিছু বক্তব্য আছে। কোনো ব্যক্তি কোনো পুস্তকের টীকা করিবার পূর্বে এরূপ প্রতিজ্ঞা করিতে পারেন না, যে, তিনি যাহা লিখিবেন তাঁহাই নির্ভুল হইবে। আমরা যত দূর কাব্যসংগ্ৰহ পাঠ করিয়াছি তাহার কোনো স্থানেই সম্পাদক শ্ৰীযুক্ত অক্ষয়চন্দ্র সরকার এ প্রকার প্রতিজ্ঞা করেন নাই, সুতরাং চুক্তিভঙ্গের নালিশ তঁহার উপর চলে না। কবিদিগের প্রতি অবিচার করার দাবিও করা যাইতে পারে না। কারণ কবিদিগের প্রতি আকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভক্তি না থাকিলে সম্পাদক এ কার্যে হস্তক্ষেপ করিতেন কি না সন্দেহ। আমাদের বােধ হয়। সাধারণ পাঠকবর্গ সম্পাদক যাহা-কিছু লিখিয়াছেন, তাহাই ভুল-শূন্য এ প্রত্যাশা করিয়া প্রাচীন কাব্য সংগ্ৰহ পাঠ করিতে আরম্ভ করেন না ; সুতরাং তাহারা উক্ত পুস্তকমধ্যে স্থানে স্থানে ভুল ব্যাখ্যা দেখিলে বোধ হয়, বিস্মিত হয়েন না। শ্ৰীযুক্ত অক্ষয়চন্দ্র সরকার অকাতরে পরিশ্রম করিয়া, মহাজন পদাবলী সংগ্ৰহ করিয়াছেন। দুরূহ শব্দের অর্থ করিয়াছেন ; এমন-কি, লুপ্তপ্রায় পদাবলী সমূহকে মনোহর বেশভূষায় ভূষিত প্রবন্ধে লেখক-মহাশয় লিখিয়াছেন, যে, তিনি তজ্জন্য সম্পাদককে উৎসাহ দিলেন। কিন্তু কিরূপে যে তিনি উৎসাহ দিলেন, তাহা আমাদিগের বোধগম্য হইল না। বরং তিনি প্রকারান্তরে সম্পাদককে অলস অমনোযোগী প্রভৃতি বলিয়াছেন। তঁহার লেখার ভাবে বোধ হইল, যে, সম্পাদকের নিন্দা করিবার অভিপ্ৰায়েই তিনি লেখনী ধারণ করিয়াছিলেন। ১ তৎকর্তৃক-সম্পাদিত পদাবলীর গুণাগুণ ব্যাখ্যা করা তাহার অভিপ্রায় ছিল না। নতুবা সম্পাদককে লজ্জিত করিবার জন্য এত চেষ্টা কেন? তাহার প্রতি এত তীব্র বিদ্রুপ নিক্ষেপ কেন ? আমরা বলিয়াছি প্ৰবন্ধ-লেখক অনেক স্থানে সম্পাদকের অযথা নিন্দা করিয়াছেন, যাহা স্পষ্ট ভুল নহে তাহাকে ভুল প্রমাণ করিতে চেষ্টা করিয়াছেন, এক্ষণে দৃষ্টান্ত দ্বারা দেখাইব যে আমাদের কথা সত্য। তিনি লিখিয়াছেন- “ - অলখিতে মোহে হেরি বিহসিতে থোরি।‘ علم কুটিল কটাক্ষ ছটা পড়ি গেল। মধুকর ডম্বর অম্বর ভেল||” এই শ্লোকের শেষ ছত্রে সম্পাদক যেন” শব্দ কোথা হইতে পাইলেন এবং ‘আচ্ছন্ন’ শব্দই বা কোথা হইতে জুটিল ? কোনো পদের অনুবাদ করা এক কথা, আর ব্যাখ্যা করা আর-এক কথা। অনুবাদ করিতে হইলে নিজ হইতে শব্দ দেওয়ার সকল সময়ে প্রয়োজন না হইতে পারে, কিন্তু ব্যাখ্যা করিতে হইলে অনেক সময়ে নূতন শব্দ প্রয়োগ করিতে হয় ; অন্যথা সকল স্থানে ব্যাখ্যা সরল হয় না। পাঠকেরাও উত্তম রূপ বুঝিতে পারেন না। উপরে উদধূত পদটিতে একটি উৎপ্রেক্ষা ংকার আছে। সুতরাং যেন” শব্দ প্রয়োগ করিয়া সম্পাদক কোনো দোষ করেন নাই। অনেক ১ সুরুচি-সম্পন্ন পাঠকদিগের নিকট এ কথাটার উত্তর দিবার আবশ্যক বিবেচনা করিতেছি না। লেঃ olo S