পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(?V)8 রবীন্দ্র-রচনাবলী অর্থাৎ, ‘কালো কালো কম্বল গুরুজি আমাকে কিনে দে'। এটা হল মোটা মশাল, এর চূড়ার উপরে জুলছে পরজরাগিণীর আলো ; মশালটার কথা মনেও থাকে না। কিন্তু কারুখচিত বাণী সমগ্র তো মনে করি নে। এর পরে তর্ক উঠবে, বাক্যের অনুগত হলে সংগীতে তার পুরো পরিমাণ চালচলন তানকর্তবের ব্যাঘাত হবার কথা। এ সম্বন্ধে বক্তব্য এই যে, স্বক্ষেত্রের বাহিরে আর-কিছুরই অনুগত হওয়া সংগীতের পক্ষে দোষের এ কথা মানি। আমরা যে গানের আদর্শ মনে রেখেছি তাতে কথা ও সুরের সাহচৰ্যই শ্ৰদ্ধেয়, কোনো পক্ষেরই আনুগত্য বৈধ নয়। সেখানে সুর যেমন বাক্যকে মানে, তেমনি বাক্যও সুরকে অতিক্রম করে না। কেননা, অতিক্রমণের দ্বারা সমগ্র সৃষ্টির সামঞ্জস্য নষ্ট করা কলারীতিবিরুদ্ধ। যে বিশেষ শ্রেণীর সংগীতে বাক্য ও সুর দুইয়ে মিলে রসসৃষ্টির ভার নিয়েছে সেখানে আপন গৌরব রক্ষা করেও উভয়ের পদক্ষেপ উভয়ের গতি বঁচিয়ে চলতে বাধ্য। এই পন্থার অনুসারী বিশেষ কলানৈপুণ্য এই শ্রেণীর সংগীতেরই অঙ্গ। নিয়ে অন্তত তানসেন অত্যন্ত উদবিগ্ন হন নি। সংগীত মাত্রই সোরি মিঞার পদানুবতী নয়। অধিকাংশ ধ্রুপদ গানের বাক্যের ঠাসবুনানির মধ্যে অলংকারবাহুল্য স্থান পায় না, শোভাও পায় না। এই স্বরসংযমে তার গৌরব বাড়িয়েছে। ধ্রুপদের এই বিশেষত্ব। আধুনিক বাংলাগানও একটি স্বাভাবিক বিশেষত্ব নিয়েছে। এই সংগীতে কথাশিল্প ও সুরশিল্পের মিলনে একটি অপরূপ সৃষ্টিশক্তি রূপ নিতে চাচ্ছে। এই সৃষ্টিতে হিন্দুস্থানী কায়দা আপন পুরো সেলামি পাবে না, যেমন পায় নি বাংলার কীর্তন-গানে। তৎসত্ত্বেও বাংলাগানের নূতন ঠাট বাংলার বাহিরের শ্রোতাদের মনে বিশেষ একটি আনন্দ দিয়ে থাকে এ আমাদের পরীক্ষিত। দেয় না। তাদেরই, সংগীত-ব্যবসায়িকতার বাঁধা বেড়ার মধ্যে যাঁদের মন সঞ্চরণে অভ্যস্ত।। ১ el۹" ، لا لا .8 অভিভাষণ “সংগীতসংঘ” ১৭ মার্চ ১৯২২] তারিখে য়ুনিভার্সিটি ইনন্সটিটিউট হলে সংগীতসংঘের পুরস্কার বিতরণসভায় কথিত । যিনি এই সংগীতসংঘের প্রতিষ্ঠাত্রী সেই প্রতিভা আজ পরলোকে। বাল্যকালে প্রতিভা আর আমি একসঙ্গে মানুষ হয়েছিলুম। তখন আমাদের বাড়িতে সংগীতের উৎস নিরন্তর প্রবাহিত হত। প্রতিভার জীবনারম্ভকাল সেই সংগীতের অভিষেকে অভিষিক্ত হয়েছিল। সেই সংগীত শুধু যে র্তার কণ্ঠে আশ্রয় নিয়েছিল তা নয়, এ তীর প্রাণকে পরিপূর্ণ করেছিল। এরই মাধুর্যপ্রবাহ তীর জীবনের সমস্ত কর্মকে প্লাবিত করেছে। তঁর চরিত্রে যে ধৈর্য ছিল, শান্তি ছিল, নম্রতা ছিল, সংযমের যে গান্তীর্য ছিল, তার সুর লয় ছিল যেন সেই সংগীতের মধ্যে। সেই সংগীতের মাধুর্যই ১। এই প্রসঙ্গে এই গ্রন্থের অন্যত্র মুদ্রিত দুইখানি সমসাময়িক পত্র দ্রষ্টব্য-ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লিখিত ৮, ১০, ১৯৩৭ তারিখের পত্র, দিলীপকুমার রায়কে লিখিত ২৯, ১০, ১৯৩৭ তারিখের পত্র।