পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংগীতচিন্তা ○ ●" হয়তো আমার অজ্ঞতাবশত আমি ভুল করেও থাকতে পারি- কোনো কোনো হিন্দিগান আমি শুনেছি। যাতে আশ্চর্য গভীরতা ও কাব্যকলা আছে, কিন্তু আমার বিশ্বাস আমাদের বৈষ্ণব কবিরা ছন্দ ও ভাব সম্বন্ধে খুব দুঃসাহসিকতা দেখিয়েছেন। প্রচলিত শব্দ ভেঙে চুরে বা একেবারে অগ্রাহ্য করে- যাতে তাদের সংগীত ধ্বনিত হয়, ভাবের স্রোত উদবোল হয়ে ওঠে, তেমনি শব্দ তারা তৈরি করেছেন। আমি তুলনা করে কিছু বলব না, কেননা আমি সকল প্রদেশের সাহিত্যের কথা জানি নে। কিন্তু গান সম্বন্ধে আমার কোনো সন্দেহ নেই যে, বাংলা দেশ আপনার গান আপনি গেয়েছে। ভারতবর্ষের অন্যত্র যা সম্পদ আছে তা আমরা নিশ্চয়ই গ্রহণ করব, কিন্তু তুলনা-দ্বারা মূল্যবানের যথার্থ মূলা যাচাই করে নেব। সুতরাং হিন্দুস্থানী সংগীত শিক্ষা দেবার আমি পক্ষপাতী, কিন্তু এ কথা আমি বলব না যে—“যা হয়ে গেছে তা আর হবে না’। হয়তো সেটাই উৎকৃষ্ট মনে স্রোতের কলধ্বনির সঙ্গে সুর বেঁধে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে- নইলে তা টিকবে না। আগেও হিন্দুস্থানী গানের চর্চা হয়েছে বটে, কিন্তু তেমন করে নেয় নি। আমাদের দেশের শৌখিন ধনী লোকেরা হিন্দুস্থানী গায়কদের আহবান করে আনতেন, কিন্তু বাংলার হৃদয়ের অন্তঃপুরে সে গান প্রবেশ করে নি- যেমন বাউল আর কীর্তন এ দেশকে প্লাবিত করে দিয়েছিল। আশ্বিন ১৩৩১ নিখিলবঙ্গসংগীতসম্মেলন ২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৪, ১১ পৌষ ১৩৪১ তারিখে কলিকাতা সিনেট হাউসে অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেলের উদবোধন-বক্ততা • - আজ এখানে এসে আমি শুধু এই কথাই বলব যে, এখানে আমার বলার কী যোগ্যতা আছে। বস্তুত যাকে ধ্রুবপদ্ধতি-সংগীত বলা হয় সে সম্বন্ধে স্বীকার করতেই হবে যে, আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সংকীর্ণ- সেইজনা আজকের দিনে এই সভায় অবতরণিকার কর্তব্যের ভার যে আমি নিয়েছি তার দায়িত্ব তাদের যাঁরা এই ভার দিয়েছেন। এখানে প্রবেশ করবার প্রারম্ভে আমার কোনো তরুণ বন্ধ অনুরোধ করেছেন সংগীত সম্বন্ধে আমার যা মত তা দীর্ঘ করে এই সুযোগে যেন ব্যাখ্যা করি। তীর অনুরোধ পালন করা নানা কারণে আমার অসাধ্য হবে। আজ সকালেই আমি আর-একটি কর্তব্য পালন করে এসেছি- প্রবাসীবঙ্গসাহিত্যসম্মেলনের উদবোধন করে ; সেখানে তেমন কুষ্ঠা বোধ করি নি, কেননা তাতে আমি অভ্যস্ত। সেখানের যত সুখ, যত দুঃখ, যত খ্যাতি, যত অখ্যাতি, তা আজ পঞ্চাশ বৎসর ধরে বরণ করে এসেছি। সেখানে গিয়ে আমাকে পড়তে হয়েছে, তাতে দুর্বল শ্বাস্যযন্ত্রের প্রতি অত্যাচার হয়েছে। আর অত্যাচার করলে ধর্মঘটের আশঙ্কা আছে। ۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔ ਕਾ ১ অনুলেখন নিখুঁত মনে হয় না। সংকলনকালে কয়েক ক্ষেত্রে নিরর্থক শব্দ ত্যাগ করিতে হইয়াছে বা বন্ধনীমধ্যে আনুমানিক এরূপ শব্দ বসাইতে হইয়াছে যাহা কবির বক্তব্য ও বাচনভঙ্গি সম্মত। পরিশ্রমের স্থলে পারিপাশ্বিকের যে স্থলে সে, পারিপার্শ্বিক স্থলে পারিপাশ্বিকের, বর্ধনের স্থলে সর্জনের (সুজনের) কপে স্থলে রূপে এবং দৃষ্টি স্থলে সৃষ্টি-সম্ভবপর পাঠ ঘলিয়া মনে হওয়া আশ্চর্য নয়। ' ' .. .. ' ' .