পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(ሱ % O রবীন্দ্র-রচনাবলী গীতালি ৩০ জুন ১৯৪০, ১৬ আষাঢ় ১৩৪৭ তারিখে কথিত বক্তৃতার অনুলেখন । আজ আমার উপর ভার পড়েছে এই অনুষ্ঠানে তোমাদের কাছে গান সম্বন্ধে কিছু বুঝিয়ে দেওয়া। গান শেখা ভালো এ কথা বলা সহজ, যেমন সহজ বলা যে, চুরি করা ভালো নয়। মেয়েদের গলার গান কানে ভালো শুনায়- এ তো সাদা কথা, ধরা কথা— তাতে আবহাওয়া বেশ একটু সুমধুর হয়। - গানের কথা আমি বলি গানেতেই, গানের কথা আমাকে ফের যদি বলতে হয় ভাষাতে, তবে আমার উপর কি জুলুম হয় না? পুরানো পুঁথিপত্র খুঁজলে দেখবে গান সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ কী? বলেছে- যথেষ্ট বলেছে। আজ বাংলাদেশে গানে একটা খেলো ভাব এসে পড়েছে। কারণ, গান নিয়ে দোকানদারি প্রবল হয়ে পড়েছে। আমি তো ভীত হয়ে পড়েছি। দোকানের মাপেতে দর অনুসারে বাঁকাচোরা করে তার রস-টস চেপেচুপে চলেছে আমারই গান। এক সময় ছিল যখন, যাঁরা ওস্তাদ তাদেরই ছিল গানের ব্যবসায়। তখন গানের যা মূল্য ৩ তারাই বুঝতেন। তখন টেকনিক্যাল গান ছিল চলতি এবং তার ঠিকমতো সুর ৩ান মান হল কি না তীরাই বুঝতেন । কিন্তু যারা খেটে খায়, অফিসে যায়, তাদের পক্ষে এ-সব গান হয়ে ওঠে না ; তাদের পক্ষে ওস্তাদের মতো গলা সাধা শক্ত ! সেইজনা এখনকার গান ব্যবসাদারির বাইরে থাকাই ভালো আমার গান আপন মনের গান- তাতে আনন্দ পাই, শুনলে আনন্দ হয়। গান হবে যাতে, যারা' আশেপাশে থাকে তারা খুশি হয় ; আত্মীয়স্বজন যারা অফিস থেকে আসছে, দূর থেকে শুনতে পেলেও, এটা তাদের জন্যও ভালো। ঘরে মাঝে মাঝে ঝগড়াও তো হয়- গান ঘরের মধে। মাধুরী পাওয়ার জন্যে, বাইরের মধ্যে হাততালি পাবার জন্যে নয়। ওস্তাদ যাঁরা তাদের জনে। ভাবনা নেই ; ভাবনা হচ্ছে যারা গানকে সাদাসিধেরূপে মনের আনন্দের জন্য পেতে চায় তাদের জন্যে। যেমন তোমাদের টি-পাটি যাকে বলে, সেখানে যারা সাহেবী মেজাজের লোক তাদের কানে কি ভালো লাগবে ? এখানে রবীন্দ্রনাথের হালকা গান, সহজ সুর, হয়তো ভালো লাগ<ে তাই বলি আমার গান যদি শিখতে চাও, নিরালায়, স্বাগত, নাওয়ার ঘরে কিংবা এমনি সব জায়গায়, গলা ছেড়ে গাবে। আমার আকাঙ্ক্ষার দৌড় এই পর্যস্ত- এর...বেশি ambition মনে নাই রাখলে । বাল্যকালে আমাদের ঘরে ওস্তাদের অভাব ছিল না ; সুদূর থেকে, অযোধ্যা গোয়ালিয়র ও মোরাদাবাদ থেকে, ওস্তাদ আসত। তা ছাড়া বড়ো বড়ো ওস্তাদ ঘরেও বাঁধা ছিল। কিন্তু আমার একটা গুণ আছে- তখনো কিছু শিখি নি, মাস্টারির ভঙ্গি দেখালেই দৌড় দিয়েছি। যদুভট্ট আমাদের গানের মাস্টার আমায় ধরবার চেষ্টা করতেন। আমি তার ঘরের সামনে দিয়ে দেী৬ দিতাম। তিনি আমাদের কানাড়া গান শিখাতে চাইতেন। বাংলাদেশে এরকম ওস্তাদ জন্মায় নি । তঁর প্রত্যেক গানে একটা originality ছিল, যাকে আমি বলি স্বকীয়তা। আমি অত্যন্ত 'পলাতক' ছিলুম বলে কিছু শিখি নি, নইলে কি তোমাদের কাছে আজকে খাতির কম হত ? এ ভুল যদি */ করতুম, পালিয়ে না বেড়াতুম, তা হলে আজকে তোমাদের মহলে কি নাম হত না ? সেটা হ': উঠল না, তাই আমি এক কৌশল করেছি— কবিতার-কাছঘেঁষা সুর লাগিয়ে দিয়েছি। লোকের ১ “যাঁরা বুঝত” “তঁরা খুশি হয়’ এরূপ কতকগুলি ‘পাঠ" বর্তমান সংকলনে সংশোধিত।