পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(ሱ % 8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী সংগীতকার জন্মাতেই পারে না। আমাদের দেশে ধরুন যদুভট্ট, অঘোর চক্রবর্তী, রাধিক গোস্বামী, সুরেন্দ্র মজুমদার প্রমুখ বড়ো বড়ো গায়কও তো জন্মেছেন ? তবে ?” । । রবীন্দ্রনাথ বললেন, "জন্মেছেন বটে, কিন্তু তারা কেবলমাত্র গাইয়ে, অর্থাৎ সুর-আবৃত্তিকার, হিন্দুস্থানীর কাছ থেকে শিখে। হিন্দুস্থানীদের মধ্যে বিশুদ্ধ সংগীতে একটা স্বাভাবিক স্মৃর্তি আছে, যেটা তাদের একটা সত্যকার সম্পদ, ধার-করা জিনিস নয়। কাজেই এ উৎসব তাদের মধ্যে সহজে শুকিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু, আমাদের দেশে বিশুদ্ধ সংগীতে, অর্থাৎ হিন্দুস্থানী সংগীতে, বড়ো গায়ক মানে কী জান ? যেন খাল কেটে জল আনা, যা একটু দৃষ্টি না রাখলেই গুকিয়ে যেতে বাধ্য। ওদের দেশে কিন্তু বিশুদ্ধ সংগীতের বিকাশ খালি কেটে টেনে আনা নয়, নদীর স্রোতের মতনই স্বচ্ছন্দগতি— চলার চালেই মাতোয়ারা।'...' রবীন্দ্রনাথ একটু থেমে আবার বলতে আরম্ভ করলেন, ‘বাংলার বৈশিষ্ট্য যে অবিমিশ্র ংগীতে নয়। তার একটা প্রমাণ যন্ত্রসংগীতের ক্ষেত্রে মেলে। সংগীতের বিশুদ্ধতম রূপ কিসে? না, যন্ত্রসংগীতে। এ কথা তো অস্বীকার করা চলে না ? কিন্তু, দেখো, বাংলা দেশ। কখনো হিন্দুস্থানীদের মতো যন্ত্রীর জন্ম দিয়েছে কি ? আরো দেখো ওরা কেমন অকিঞ্চিৎকর কথা গানের মধ্যে অমানবদনে চালিয়ে দেয়। অক্ষমতাবশত নয়, সুরের তুলনায় তাদের কাছে কথার খাতির কম বলে। বাঙালি ভাগ্যদোষে কুকাব্য লিখতে পারে, কিন্তু অকাব্য লিখতে কিছুতেই তার কলম সরবে না। “সামলিয়নে মোরি এদোরিয়া চেরিরে!” এদোরিয়া মানে বুঝি জলের ঘাড়ার বিড়ে ; শ্যামচাঁদ সেটি চুরি করেছেন, কাজেই তার অভাবে শ্ৰীীরাধার জল আনার মহা অসুবিধা ঘটছে! এইটেই হল সংগীতের বাক্যাংশ। অপর পক্ষে বাঙালি কবি এদোরিয়া চুরি নিয়ে পুলিস-কেসের আলোচনা করতে পারে, কিন্তু গান লিখতে পারে না।” ...আমি বললাম, “এ কথা আমি মানি। কিন্তু তাই ব’লে কি আপনি বলতে চান যে ওদের গান শেখ আমাদের পণ্ডশ্রম মাত্ৰ ?” w কবিবর জোরের সঙ্গে বলে উঠলেন, "কখনোই নয়। আমরা কি ইংরেজি শিখি না? শিখি তো? কেন শিখি ? ইংরেজি সাহিত্যকে আমাদের সাহিত্যে হুবহু নকল করবার জন্য নয়। তার রসপনে আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের অন্তরগুঢ় স্বকীয় শক্তিকেই নূতন উদ্যমে ফলবান করে তোেলবার জন্যে। রেনেসঁস-যুগে ইংরেজি সাহিত্য ধাক্কা পেয়েছিল ইটালি থেকে, কিন্তু তার জাগরণটা তার নিজেরই। শেকসপিয়রের অধিকাংশ নাটাবস্তুই বিদেশের আমদানি, কিন্তু তাই ব’লেই শেকসপিয়রের রচনা ইংরেজি সাহিত্যে চোরাই মাল এমন কথা তো বলা চলে না। গানের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই, হিন্দুস্থানী সংগীত ভালো করে শিখলে তা থেকে আমরা লাভ না করেই পারব না। তবে এ লাভটা হবে তখনি যখন আমরা তাদের দানটা যথার্থ "আত্মসাৎ করে তাকে আপন রূপ দিতে পারব। তৰ্জমা করে বা ধার করে সত্যিকার রসসৃষ্টি হয় না ; সাহিত্যেও না, সংগীতেও ai i' . . . আমি বললাম, তা তো বটেই। তবে কোনো সভ্যতার দানই তো অনড় অচল থাকতে পারে না ! তাই, বাঙালির গান কেন হিন্দুস্থানী সংগীত থেকে লাভ করবে না! এ লাভ করাই তো স্বাভাবিক, কারণ সত্য লাভে তো মৌলিকতা নষ্ট হয় না, অনুকরণেই হয়। আমরা আমাদের নিত্য-নতুন বিচিত্র অভিজ্ঞতা দিয়েই তো শিল্পজগতে নতুন সৃষ্টি করে থাকি ? এবং এতেই তো ১ সে সময়ে কবির সঙ্গে এ ক্ষেত্রে সায় দিতে পারি নি- আজ বুঝেছি যে, কবিই ঠিক বলেছিলেন, আমার ধারণাই ছিল কঁচা। এ * به -नाठिी ($३०४), * >*>