পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংগীতচিন্তা (ሱ “እ6 সমৃদ্ধতার হার্মানি গড়ে ওঠে ?” · কবিবর বললেন, “ওঠেই তো। দেখো, য়ুরোপীয় সভ্যতার সংস্পর্শে কি আমরা একটা নতুন সমৃদ্ধি লাভ করি নি? না, যদি না করতাম। তবে সেটাই বাঞ্ছনীয় হতা?” আমি বললাম, “অবাস্তর হলেও এখানে আপনাকে একটা প্রশ্ন করি। অনেকে বলেন যে, অমুক বাঙালি নাট্যকারই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি সাহিত্যিক। যুক্তি জিজ্ঞাসা করলে তঁরা উত্তর দেন যে, বর্তমান বাংলা সাহিত্যিকদের মধ্যে এক তঁর মধ্যেই যুরোপের বিন্দুমাত্রও প্রভাব প্রতিফলিত হয় নি। আমার সত্যিই আশ্চর্য মনে হয় যখন আমি বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমান লোকের মুখেও অম্লানবদনে এরূপ যুক্তি প্ৰযুক্ত হতে শুনি। এরূপ কুপমণ্ডুকতা বােধ হয় আমাদের দেশে যে রকম নির্বিচারে হাততালি পায় অন্য কোনো সভ্যদেশে সেভাবে গৃহীত হতে পারে না— নয় কি? আমার তো ব্যক্তিগতভাবে পিতৃদেবের ভাষা, refinement. সমৃদ্ধ রসিকতা, আপনার অপূর্ব লিখনভঙ্গি বা শরৎবাবুর লেখাও- সে খাঁটি বাঙালি সাহিত্যিকের লেখার চেয়ে ঢের উচ্চশ্রেণীর লেখা মনে হয়। আপনার কি মনে হয় না যে, এ রকম নিয়ত “খাটি বাঙালি হও” “খাটি বাঙালি হও” করে চীৎকার করা শুধু Yif&offfff chauvinismo zatia, ?" কবিবর বললেন, “তা তো বটেই। দুৰ্গম গিরিশিখরের উৎস থেকে যে আদি নির্বরটি ক্ষীণ ধারায় বইছে তাকেই বিশুদ্ধ গঙ্গা বলে মানব আর যে ভাগীরথী উদার ধারায় সমুদ্রে এসে মিলেছে, তার সঙ্গে পথে বহু উপনদীর মিশ্রণ ঘটেছে ব’লে তাকেই অশুদ্ধ ও অপবিত্র বলব।-- এমন কথা নিশ্চয়ই অশ্রদ্ধয়। প্রাণের একটা শক্তি হচ্ছে গ্রহণ করার শক্তি, আর-একটা শক্তি হচ্ছে দান করার। যে মন গ্রহণ করতে জানে না সে ফসল ফলাতেও জানে না, সে তো মরুভূমি। যদি বাঙালির বিরুদ্ধে কেউ এ অভিযোগ আনে যে, তার মনের উপর যুরোপীয় সভ্যতা সব আগে প্রভাব বিস্তার করেছে, তা হলে আমি তো অন্তত তাতে বিন্দুমাত্রও লজ্জা পাই না, বরং গৌরব বোধ করি। কারণ, এই ই জীবনের লক্ষ্য।’ আমি বললাম, "আপনার কথাগুলি আমার ভারি ভালো লাগল। আর্টজগতে চিন্তা রাজ্যের একটু খবর রাখলেই তো দেখা যায় যে, এক সভ্যতা নিত্য অপর সভ্যতা থেকে নূতন সম্পদের খোরাক জুগিয়ে নিয়েছে- নয় কি ? তাই যে দু-চার জন লোক থেকে থেকে তারস্বরে রোদন করে ওঠেন যে ‘গোল গেল-যুরোপীয় সভ্যতার সংস্পর্শে এসে বাঙালির বাঙালিত্ব ঘুচে গেল, তাদের সে আর্তনাদে অন্তত আমার মন তো সাড়া দিতে চায় না।” কবিবর বললেন, “তা তো বটেই। তা ছাড়া কোনটা বাঙালির আর কোনটা বাঙালির নয়, তার বিচার শোনবার জন্য আমরা কি কোনো স্পেশাল ট্রিবিউনালের মুখ তাকিয়ে থাকব ? বাঙালি গ্রহণ-বর্জনের দ্বারাই আপনি তার বিচার করছে। হাজার প্রমাণ দাও-না যে, বিজয়বসন্ত বাংলার বিশুদ্ধ কথাসাহিত্য, বঙ্কিমের নভেল বিশুদ্ধ বঙ্গীয় বস্তু নয়, তবু বাংলার আবালবৃদ্ধবনিতা বিজয়বসন্তকে ত্যাগ করে বিষবৃক্ষকে গ্ৰহণ করার দ্বারাই প্রমাণ করছে যে, ইংরাজি-সাহিত্যবিশারদ বঙ্কিমের নভেল বাংলার নিজস্ব জিনিস। আমি তো একবার তোমার পিতার গানের সম্বন্ধে লিখেছিলাম যে, তার গানের মধ্যেও য়ুরোপীয় আমেজ যদি কিছু এসে থাকে। তবে তাতে দোষের কিছু থাকতে পারে না, যদি তার মধ্য দিয়ে একটা নূতন রস ফুটে উঠে বাঙালির রূপ গ্রহণ করে।” আর দেখো যুরোপীয় সভ্যতা আমাদের দুয়ারে এসেছে ও আমাদের পাশে শতবর্ষ। عتيبيتسيهلكك" ১ স্রষ্টব্য ; “সোনার কাঠি' প্ৰবন্ধ, রচনাবলী ১৮, পৃ. ৫২১ (সুলভ সং ৯ খণ্ড, পূ: ৬৩৫) {