পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(by S R | ty gෆින් S$ 8.6 সকালবেলা। কবিবরকে একটু শ্ৰান্ত দেখাচ্ছিল, তবে দিন দশেক আগে যতটা শ্ৰান্ত দেখিয়েছিল আমি বললাম, “আমি আপনাকে আজ্ঞ একটা প্রশ্ন করতে চাই। সেটা এই যে, সংগীতের ভাষা fight- the language of music is universal at G gets (E2F Trz (75 it কি না। আমার মনে হয় সত্য নয়। এ ধারণা আমার মন থেকে কিছুতেই যাচ্ছে না। আমার এ সংশয়ের প্রধান কারণ এই যে, আমি বার বার দেখেছি যে যুরোপীয় সংগীত আমাদের মনে বা ভারতীয় সংগীত ওদের মনে কখনোই একটা খুব বড়ো রকম অনুরণন তুলতে পারে না। এ সম্বন্ধে আমার বিখ্যাত সংগীতরসিক রোমা রোলার সঙ্গে প্রায়ই তর্ক হত । তার বার বার বলা সত্ত্বেও আমি আজ অবধি তার কথা বিশ্বাস করতে পারি নি যে, সংগীতের আবেদন দেশ-কালপাত্রের অতিরিক্ত ।” রবীন্দ্রনাথ বললেন, “সকল সৃষ্টির মধ্যেই একটি দ্বৈত আছে; তার একটা দিক হচ্ছে অন্তরের সত্য, আর-একটা দিক হচ্ছে তার বাহিরের বাহন। অর্থাৎ, এক দিকে ভাব, আর-এক দিকে ভাষা। দুইয়ের মধ্যে প্ৰাণগত যোগ আছে, কিন্তু প্রকৃতিগত ভেদ দুইয়ের মধ্যে আছে। ভাষা সার্বজনীন নয়, অথচ এই সত্য সাৰ্বজনীন । এই সর্বজাতীয় সম্পদকে আয়ত্ত করতে গেলে তার বিশেষজাতীয় আধারটিকে আয়ত্ত করতে হয়। কবি শেলির কাব্যের সার্বজনীন রসটি উপভোগ করতে গেলে ইংরেজ নামে একটি বিশেষ জাতির ভাষা শিখে নেওয়া চাই। সেই ভাষার সঙ্গে সেই রসের এমনি নিবিড় মিলন যে, দুইয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ একেবারেই চলে না। গানের ভিতরকার রসটি সর্বজাতির কিন্তু ভাষা, অর্থাৎ তার বাহিরের ঠাটখানা, বিশেষ বিশেষ জাতির। সেই পাত্ৰটি যথার্থ রীতিতে ব্যবহারের অভ্যাস যদি না থাকে। তবে ভোজ ব্যর্থ হয়ে যায়। তাই বলে ভোজের সত্যতা সম্বন্ধে সন্দেহ করা অন্যায়। যুরোপীয়েরা আপন সংগীতের যে প্রভূত মূল্য দেয় এবং তার দ্বারা যে সুগভীরভাবে বিচলিত হয় সেটা আমরা দেখেছি- এই সাক্ষ্যকে শ্রদ্ধা না করা মূঢ়তা। কিন্তু, এ কথাও মানতে হয় যে, এই সংগীতের রসকোষের মধ্যে প্রবেশ করার ক্ষমতা আমার নেই, কেননা এর ভাষা আমি জানি নে। ভাষা যারা নিজে জানে তারা অন্যের না-জােনা সম্বন্ধে অসহিষ্ণু হয়। অনেক সময়ে বুঝতে পারে না না-জানাটাই স্বাভাবিক। ভাষা যখনি বুঝি তখনি রস ও রূপ অখণ্ড এক হয়ে আমাদের কাছে প্রকাশ পায়। কাব্যের ও গানের ভাষা সম্বন্ধে বিশেষ দেশকালের যেমন বিশেষত্ব আছে, ছবির ভাষায় তেমন নেই ; কারণ, ছবির উপকরণ হচ্ছে দৃশ্য পদার্থ-অন্য ভাষার মতন সে তো একটা সংকেত নয় বা প্রতীক নয়। গাছ শব্দটা একটা সংকেত, তার প্রত্যক্ষ পরিচয় শব্দটার মধ্যেই নেই, কিন্তু গাছের রূপরেখা আপন পরিচয় আপনি বহন করে। তৎসত্ত্বেও চিত্রকলার idiom। যতক্ষণ না সুপরিচিত হয় ততক্ষণ তার রসবোধে বাধা ঘটে। এই কারণেই চীন জাপান ভারতের চিত্রকলার আদর বুঝতে য়ুরোপের অনেক বিলম্ব ঘটেছে। কিন্তু যখন বুঝেছে তখন idiom থেকে রসকে ছাড়িয়ে নিয়ে বােঝে নি। উভয়কে এক করে তবেই বুঝেছে। তেমনি সংগীতকেও বোঝবার একান্ত বাধা নেই। কিন্তু তার প্রকাশের যে বাহ্যরীতি বিশেষ দেশে বিশেষভাবে গড়ে উঠেছে, তাকে জোর করে ডিঙিয়ে সংগীতকে পূর্ণভাবে পাওয়া অসম্ভব। কোনো আভাসই পাওয়া যায় না তা বলি নে, কিন্তু সে অশিক্ষিতের আভাস নির্ভরযোগ্য নয়।