পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

अ६औीठष्टि GS কবি বললেন, “সারাজীবন ভরে একটা নির্দিষ্ট মতের অনুবর্তন করে চলাটা মনের স্বধর্মের পরিচায়ক নয়। আমার মত যদি বদলেই থাকে তাতে আমি ক্ষোভ করি নে। একটা কথা আমি পথ যদি খোলা নাই রইল। তবে তা কিছুতেই শিল্পের পাঙক্তেয় হতে পারে না। শিল্পী নিজের পথ নিজে করে নেবে, প্রাচীন সংগীতের কণ্ঠে ঝুলে থাকাটা তার সইবে কেন? পুরাতনকে বর্জন করতে বলি নে, কিন্তু নতুন সৃষ্টির পথে যদি তাতে কঁাটার বেড়া দেখা দেয়। তবে তা নৈৰ নৈব চ। আকবর শার দরবারে তানসেন মস্ত বড়ো গাইয়ে ছিলেন, কেননা তঁর শিল্পপ্রতিভা নিতা নতুন সৃষ্টির খাতে রসের বান ডাকিয়েছিল— আকবর শার যুগে ছিল সে ঘটনা অভিনব। কিন্তু, এ কালের মানুষ আমরা, আমরা কেন এখনো তানসেনের গানের জাবর কেটে চলব। অন্ধ অনুকরণের মোহে ? এই যে সমস্ত হিন্দুস্থানী ওস্তাদ দেখতে পাও এদের হয়তো কারো কারো প্রতিভা আছে, কিন্তু এদের যেটুকু প্ৰতিভা সেটা নিঃশেষিত হয়ে যায় বাধা পথের অনুবর্তন করতে করতেই। সুতরাং নতুন সৃষ্টির কোনো জায়গা সেখানে থাকে না। কিন্তু, বাংলা গানের কথা স্বতন্ত্র, এর অপূর্ব সম্ভাবনার কথা ভাবতেই আমার রোমাঞ্চ হয়। বাংলা গানে নিত্য নতুন স্বকীয়তার পথ তোমরা সৃষ্টি করতে থাকে, তাতেই বাংলা গান খুজে পাবে সার্থকতা। তুমি তো অনেক দিন যুরোপে ছিলে তাদের সংগীতের ভালো ভালো জিনিস দিয়ে যদি বাংলা গানের সাজি ভরাতে পারো। তবে সেটা একটা সত্যিকারের কাজ করা হবে। অন্ধ অনুকরণ দোষের, কিন্তু স্বীকরণ নয়।’ দিলীপদা প্রশ্ন করলেন, “আপনি নতুন সৃষ্টির কথা এত বললেন, স্বকীয়তাকে নানা দিক থেকে সমর্থনও করলেন, অথচ এতদিন আপনি আপনার স্বরচিত গানের ব্যাপারে। একটু রক্ষণশীল ছিলেন না কি ? আমার তো মনে হয় আপনি কিছুদিন আগে পর্যন্তও গায়কের সুরবিহারের timprovisation) স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন নি।” w কবি বললেন, 'এখনো আমি সমান রক্ষণশীল আছি। তবে একটা কথা আছে। তোমাদের মতো প্রতিভাবান শিল্পীদের দিয়ে আমার ভয় নেই, কিন্তু এ পথ সবারই জনো নয় জেনো। যাকে৩াকে যাদৃচ্ছিা পক্ষাবিজ্ঞার করার স্বাধীনতা দিলে তাতে সুফলের পরিবর্তে অপফলটাই ফলবে বেশি করে। সেটা বাঞ্ছনীয় নয়। খুব মুষ্টিমেয় সংখ্যক শিল্পীগায়কের পরে থাকবে এর দায়িত্ব।” কথায় কথায় নানা ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ এসে পড়ল। চণ্ডালিকার কথাও উঠল। আমাদের মধ্যে একজন বললেন, ‘চণ্ডালিকা খুব চমৎকার হয়েছে।” তাতে কবি বললেন, “তোমরা হয়তো জানো না। এর জন্যে আমাকে কী অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়েছে। দিন নেই, রাত নেই, এদেরকে অসীম ধৈর্যের সঙ্গে গড়ে পিটে নিতে হয়েছে- সে যে কী কষ্ট তোমরা বুঝবে না।” তার পর একটু থেমে বললেন, অথচ গানের ভিতর দিয়ে আমি যে জিনিসটি ফুটিয়ে তুলতে চাই সেটা আমি কারো গলায় মূর্ত হয়ে ফুটে উঠতে দেখলুম না। আমার যদি গলা থাকত। তা হলে হয়তো বা বোঝাতে পারতুম কী জিনিস আমার মনে আছে। আমার গান অনেকেই গায়, কিন্তু নিরাশ হই। শুনে। একটিমাত্র মেয়েকে জানতুম যে আমার গানের মূল সুরটিকে ধরতে পেরেছিল- সে হচ্ছে ঝুনু, সাহানা। আমি গানের প্রেরণা পেয়েছি আমার ভিতর থেকে, তাই আপন লীলায় আপন ছন্দে ভিতর থেকে যে সুর ভেসে ওঠে তাই আমার গান হয়ে দাঁড়ায়। ওস্তাদের কাছে নাড়া’ বেঁধে সংগীতশিক্ষার দাহরাম-মহরম করা, সে আমাকে দিয়ে কোনোকালেই । হ’ল না। ভালোই হয়েছে যে, ওস্তাদের কাছে হাতে খড়ি দিতে হয় নি। আমাদের বাড়িতে উচ্চাঙ্গ । সংগীতের খুব চর্চা হত। সে কথা তোমরা সবাই জানো! অথচ আশ্চৰ্য্য, এ বাড়ির ছেলে হয়েও