পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@S 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী তপস্যা ভাঙতে হবে এই প্যাশনে, স্থাণুকে করতে হবে বিচলিত। নিস্ক্রিয় নির্বিচলতার মধ্যেও এক রকমের মহিমা আছে মানি, সে মহান। কিন্তু, সৃষ্টির গতি থাকলে তবেই এ স্থিতির নিস্ক্রিয়তার বৃত্ত হয় পূর্ণ। প্রকৃতি বিনা পুরুষকে চাইলে পরিণাম নির্বাণী- কৈবল্য। সে পথে, অন্তত, শিল্পের মুক্তি নেই। সাগরপারের ঢেউও আমাদের প্রাণে জােগাক এই প্যাশন-সংরাগ। তাতে ভুলচুক হবে- হােক-না-নির্ভুলতম ঘুমের চেয়েও ভুলে-ভরা জাগার দাম ঢের বেশি নয় কি ? ? ‘শেষ কথা সুরবিহারের সম্বন্ধে। ইংরেজি ইম্প্রভাইজেশন কথাটির তুমি বাংলা করেছ। সুরবিহার (বেশ তর্জমা হয়েছে)-এও আমি ভালোবাসি। এতে যে গুণী ছাড়া পায় তাও মানি । আমার অনেক গান আছে যাতে গুণী এ রকম ছাড়া পেতে পারেন অনেকখানি। আমার আপত্তি এখানে মূলনীতি নিয়ে নয়, তার প্রয়োগ নিয়ে। ‘কতখানি ছাড়া দেব? আর, কাকে ? বড়ো প্রতিভা যে বেশি স্বাধীনতা দাবি করতে পারে এ কথা কে অস্বীকার করবে ? কিন্তু, এ ক্ষেত্রে ছোটো বড়োর তফাত আছেই, যে কথা সেদিন বলেছিলাম। : “আর-একটা কথা। গানের গতি অনেকখানি তরল, কাজেই তাতে গায়ককে খানিকটা স্বাধীনতা তো দিতেই হবে, না দিয়ে গতি কী? ঠেকােব কী করে ? তাই, আদর্শের দিক দিয়েও আমি বলি নে যে, আমি যা ভেবে অমুক সুর দিয়েছি তোমাকে গাইবার সময়ে সেই ভাবেই ভাবিত হতে হবে। তা যে হতেই পারে না। কারণ, গলা তো তোমার এবং তোমার গলায় তুমি তো গোচর হবেই। তাই একসপ্রেশনের ভেদ থাকবেই যাকে তুমি বলছ ইন্টারপ্রোটেশনের স্বাধীনতা। বলছিলে বিলেতেও গায়ক-বাদকের এ স্বাধীনতা মঞ্জর। মঞ্জর হতে বাধা। সাহানার মুখে যখন আমার গান শুনতাম তখন কি আমি শুধু আপনাকেই শুনতাম ? না তো। সাহানাকেও শুনতাম ; বলতে হত ; আমার গান সাহােনা গাইছে। তোমার ঢঙের সম্বন্ধে আমার বক্তব্য এই-যে তোমার একটা নিজস্ব ঢঙ গড়ে উঠেছে, এটা তো খুবই বাঞ্ছনীয়। তাই তোমার স্বকীয় ঢঙে তুমি “হে ক্ষণিকের অতিথি' গাইলে যে ভাবে, আমার সুরের গঠনভঙ্গি রেখে একসপ্রেশনের যে স্বাধীনতা তুমি নিলে, তাতে আমি সত্যিই খুশি হয়েছি। এ গান তুমি গ্রামোফোনে দিতে চাইছ, দিয়ো- আমার আপত্তি নেই। কারণ, এতে আমার সূরারূপের (TTArt (structures) Sira, হয় নি। তোমার এ কথা আমিও স্বীকার করি যে, সুরকারের সুর বজায় রেখেও একসপ্রেশনে কম-বেশি স্বাধীনতা চাইবার এক্তিয়ার গায়কের আছে। কেবল প্রতিভা অনুসারে কম ও বেশির মধ্যে তফাত আছে। এ কথাটি ভুলো না। প্রতিভাবানকে যে স্বাধীনতা দেব অকুঠে গড়পড়তা গায়ক ততখনি স্বাধীনতা চাইলে না’ করতেই হবে।” কবির বলা কথাগুলি লিখলাম দ্বিপ্রহরে ও বিকেলে তঁকে পড়ে শোনালাম। কবি খুশি হয়ে বললেন, "কথাগুলি আমারই এ কথা স্বচ্ছন্দে বলতে পারি, লেখাও খুব ভালো হয়েছে, তুমি ছাপতে পারে।” ੪ কালিম্পঙ। ৯ জুন ১৯৩৮ .'ললিত সৃষ্টিতে যখন প্রথম দিকে মানুষ খানিকটা চলে আধোছায়া আধাে-আলোর রাজ্যে তখন অপরে যদি উৎসাহ দেয় তা হলে দেখা যায়— ছায়া কাটে, আলো বাড়ে। সে সময়ে তাই বড়ো