পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংগীতচিন্তা SSV অধিকারগত হত তা হলে আমার ধর্মবিশ্বাস যাই হােক আমার পক্ষে তাতে সংকোচের কারণ থাকত না ; কিন্তু ভক্তির ক্ষেত্রে, পূজার ক্ষেত্রে, অনধিকার প্রবেশ গৰ্হণীয়। আমার বন্ধুরা সন্তুষ্ট হন নি। আমি রচনা করেছিলুম ভুবনমনোমোহিনী, এ গান পূজামণ্ডপের যোগ্য নয়। সে কথা বলা বাহুল্য। অপর পক্ষে এ কথাও স্বীকার করতে হবে যে, এ গান সর্বজনীন ভারতরাষ্ট্রসভায় গাবার উপযুক্ত নয়, কেননা এ কবিতাটি একান্তভাবে হিন্দুসংস্কৃতি আশ্রয় করে রচিত। অহিন্দুর এটা সুপরিচিত ভাবে মর্মািঙ্গম হবে না। আমার ভাগ্যে অনুরূপ ঘটনা আর-একবার ঘটেছে। সে বৎসর ভারত সম্রাটের আগমনের আয়োজন চলছিল। রাজসরকারের প্রতিষ্ঠাবান আমার কোনো বন্ধু সম্রাটের জয়গান রচনার জন্যে আমাকে বিশেষ করে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। শুনে বিস্মিত হয়েছিলুম, সেই বিস্ময়ের সঙ্গে মনে উত্তাপেরও সঞ্চার হয়েছিল। তারই প্রবল প্ৰতিক্রিয়ার ধাক্কায় আমি জনগণমনঅধিনায়ক গানে সেই ভারতভাগ্যবিধাতার জয়ঘোষণা করেছি, পতন-অভু্যদায়বন্ধুর পন্থায় যুগযুগ ধাবিত যাত্রীদের যিনি চিরসারথি, যিনি জনগণের অন্তর্যামী পথপরিচায়ক- সেই যুগ যুগান্তরের মানবভােগ্যরথচালক যে পঞ্চম বা ষষ্ঠ বা কোনো জর্জই কোনোক্রমেই হতে পারেন না সে কথা রাজভক্ত বন্ধুও অনুভব করেছিলেন। কেননা তীর ভক্তি যতই প্ৰবল থাক, বুদ্ধির অভাব ছিল না। আজ মতভেদবশত আমার প্রতি ক্রুদ্ধ ভাবটা দুশ্চিন্তার বিষয় নয়, কিন্তু বুদ্ধিভ্রংশটা দুর্লক্ষণ। এই প্রসঙ্গে আর-এক দিনের ঘটনা মনে পড়ছে, সে বহুদিন পূর্বের কথা। তখনকার দিনে আমাদের রাষ্ট্রনায়কদের অঞ্জলি তোলা ছিল রাজপ্রাসাদের দুৰ্গম উচ্চ শিখর থেকে প্ৰসাদকণাবর্ষণের প্রত্যাশায়। একদা কোনো জায়গায় তাদের কয়েকজনের সান্ধ্য বৈঠক বসবার কথা ছিল। তাদের দূত ছিলেন আমার পরিচিত এক ব্যক্তি। আমার প্রবল অসম্মতি সত্ত্বেও তিনি বারবার করে বলতে লাগলেন। আমি না গেলে আসার জমবে না। শেষ পর্যন্ত ন্যায্য অসম্মতিকেও বলবৎ রাখবার শক্তি বিধাতা আমাকে দেন নি। যেতে হল। ঠিক যাবার পূর্বক্ষণেই আমি নিম্নোদধূত গানটি রচনা করেছিলেম- “আমায় বোলো না গাহিতে’ ইত্যাদি। এই গান গাবার পরে আর আসর। জমল না। সভাস্থগণ খুশি হন নি। সুধারানী সেনকে লিখিত শান্তিনিকেতন। [২৯ মার্চ ১৯৩৯] ઉં কল্যাণীয়াসু তুমি যে প্রশ্ন করেছ এ রকম অদ্ভুত প্রশ্ন পূর্বেও শুনেছি। পতন অভু্যদয় বন্ধুর পন্থ / যুগ যুগ ধাবিত যাত্রী, হে চিরসারথি, তব রথচক্রে / মুখরিত পথ দিনরাত্ৰি— শাশ্বত মানব-ইতিহাসের যুগযুগ ধাবিত পথিকদের রথযাত্রায় চিরসারথি বলে আমি চতুর্থ বা পঞ্চম জর্জের স্তব করতে পারি, এরকম অপরিমিত মুঢ়তা আমার সম্বন্ধে যাঁরা সন্দেহ করতে পারেন। তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আত্মাবমাননা। ऊिँ २३० । ७ । २०(१)