পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vo NRSR রবীন্দ্র-রচনাবলী গলা যায় ভেঙে। মূল্যের কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না ; কিন্তু সে মূল্য যক্ষরাজের খাতাঞ্চিখানার। সে মূল্যের গাণিতিক অঙ্কে আরো আরো” “আরো” চাপিয়ে যাওয়া চলে। সরস্বতীর কমলবনে সোনার পদ্ম আছে ; সেখানে লোভীর মতো 'encorc', 'encore" করে চীৎকার চলে না। বেনের দল যতই দুঃখিত হােক, শতদলের উপর আর-একটা পাপড়ি চাপানো চলবে না। সে আপন সম্পূর্ণতার মধ্যে থেমেছে বলেই সে অপরিসীম। ভাণ্ডারের ধনে আরোর ফরমাশ চলে। কিন্তু আনন্দের ধনের দিকে তাকিয়ে বলে থাকি— ‘নিমেযে শতেক যুগ বাসি’। রামচন্দ্ৰ সোনার সীতা বানিয়েছিলেন। সোনার প্রাচুর্য নিয়ে যদি তার গৌরব হত তা হলে দশটা খনি উজাড় করে যে পিণ্ডটা তৈরি হত তার মতো সীতার শোকাবহ নির্বাসন আর-কিছু হতে পারত না। রামচন্দ্ৰকে "থামো’ বলতে হয়েছে। কিন্তু ছায়ানটের অক্লান্ত প্ৰগলভ্যতার মুখে থামো" বলবার সাহস আমাদের জোগায় না, তাতে ভুজবলের প্রয়োজন হয়। এইবার এই তর্ক সম্বন্ধে "থামো’ বলবার সময় হয়েছে, অন্তত আমার তরফে। ইতি ১৬ই চৈত্র ১৩৪১ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আপনি লিখেছিলেন—“আমি বারবার দেখেছি। বর-ঠকানে প্রশ্ন তুলে আমাকে আক্রমণ করতে তোমার যেন একটা সিনিসটির আনন্দ আছে ”। কিন্তু সে রাতের আসরের পর আমাকে আপনি যে, দুটি সাংঘাতিক প্রশ্ন করেছিলেন তাদের এবং এই চিঠি-দুটির যথাযথ উত্তর দেবার অক্ষমতা লক্ষ্য করে আপনার ভাষাই আপনার ওপর নিক্ষেপ করতে ইচ্ছে হচ্ছে। এখন আমি বুঝলাম আপনি যে ব্যারিস্টার হন নি সেটা কেবল নৃপেন্দ্র সরকারের ভাগ্য-জোরে, আপনার নিজের কৃতিত্ব তাতে বেশি নেই। আজ তিন-চার সপ্তাহ ধরে কী উত্তর দেব ভাবছি। যা জুটেছে তাই গুছিয়ে লিখছি। qA S S S S মনে হয়- কোথায় আমরা একমত প্রথমে জেনে রাখলে কোথায় এবং কতটুকু আমাদের পার্থক্য সহজেই ধরা পড়বে। আর্টের প্রকৃতি revelation 9K revelation-3 গৌরব তার পরিপূর্ণ ঐক্যে এই মন্তব্যের পর আপনি লিখেছেন, “সেই ঐক্যে থামা বলে একটা পদার্থ আছে, চলার চেয়ে তার কম মূল্য নয়।” এই বাক্য থেকে আপনি সংগীতে গতির আনন্দ বাদ দিতে চান না, উপভোগই করতে চান পরিষ্কার বোঝা যায়। সেদিনকার এবং আরো অন্য দিনের কথোপকথনে, উচ্চসংগীত শেনিবার সময় আপনার আনন্দময় একাগ্রতায় এবং বিশেষত প্রথম চিঠির মারফত ধ্রুবপদ্ধতি সম্বন্ধে মতপ্রকাশে— উচ্চসংগীতের প্রতি আপনার প্রগাঢ় শ্রদ্ধা- তার মহিমা গাম্ভীৰ্য ও মাধুর্য ভোগ করবার আগ্রহ ও ক্ষমতাই প্রমাণিত হয়। অতএব আমার সিদ্ধান্তই ঠিক। যে পথচলাতেই আনন্দ পায় সে কখনো গতিকে উপেক্ষা করতে পারে না। যে চিরজীবন গতানুগত্বিকের স্থাণুতার বিপক্ষে বিদ্রোহ করে এল। তার পক্ষে রাগিণীর চলিষ্ণু রূপ-উদঘাটনে অসহিষ্ণু হওয়া অসম্ভব। থামতে আপনার ধর্মে বাধে- তাই এই সেদিনও পুনশ্চ’ ও ‘চার অধ্যায় লিখলেন। আমিও আপনার সমধর্মী, এইখানেই আমাদের যথার্থ মিল। মিলের জোরে আমরা উভয়েই হিন্দুস্থানী সংগীতের একান্ত ভক্ত হয়েও তার চিরাচরিত পদ্ধতির মুক্তি চাই। মুক্তি, মৃত্যু নয়কারণ, বাঁচা মানেই চলা। অনুকৃতির শিকল পরে বন্দীরাই খুঁড়িয়ে হঁটে। স্বাধীন দেশের উপযুক্ত