পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংগীতচিন্ত । Ve SRG আমার নিজের বক্তব্য হল এই ; আলাপে যখন রচনার মতো কোনো সৌষ্ঠবসম্পন্ন কথাবস্তুর দাবি স্বীকার করবার পূর্বোক্ত ধরনের বিশেষ ও জরুরি দায়িত্ব নেই, তখন আলাপের রীতিনীতি রচনার গায়কি-পদ্ধতি থেকে ভিন্ন হবেই হবে। রচনা হল কথা ও সুরের মিশ্রণে এক নতুন রসসামগ্ৰী। আলাপ কিন্তু প্ৰাথমিক, রাগিণীর রূপবিকাশই তার একমাত্র কাজ ; এখানে না আছে অর্থবাহী কথা, না আছে কথাবাহী অর্থ। আলাপের গন্তব্য নেই, অথচ উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্য বিকাশের মধ্যেই নিহিত। উদ্দেশ্য রাগিণীকে reveal করা- উদ্দেশ্যসাধনের উপায় বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যস্থাপনা। ঐশ্বৰ্য দেখানো কোনো আটিস্টেরই কাম্য হতে পারে না, কিন্তু বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যস্থাপন নিশ্চয়ই ন্যায়সংগত। রচনায় পূর্ব হতেই ঐক্য দেওয়া আছে, সেটি রচয়িতার দান ; আলাপে তাকে স্থাপনা করতে হবে, এটি হবে গায়কের সৃষ্টি। সেজন্য তার একটি অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন। আলাপিয়ার সুবিধাও রয়েছে- রচনার, বিশেষত কথার, বাঁধন তাকে মানতে হচ্ছে না। ঐশ্বৰ্য দেখানোতে শক্তির অপচয় ঘটে, সেইজন্য নির্বাচন তাকে করতেই হবে। বন্দেশী গানে শক্তির ব্যবহার রচনার সৌষ্ঠবরক্ষায় ; আলাপে শক্তির ব্যবহার রাগিণীর ক্রমিক বিকাশে, তার জ্ঞানকৃত বিবর্তনে। আলাপই আমাদের pure music ; আপনি চিঠিতে আলাপকে বাদ দিয়েছেন। সংগীত বলতে আমি আলােপকেও বুঝি। আর্টের দিক থেকে বন্দেশী বড়ো কি আলাপ বড়ো এই প্রশ্নের উত্তর আর্টিস্টের কৃতিত্ব-সাপেক্ষ এবং শ্রোতার রুচি-সাপেক্ষ। অর্থাৎ, এ বিচার বিশেষের ওপর নির্ভর করে বলেই তাকে কোনো সামান্য বাক্যে পরিণত করা চলে না। কিন্তু আধিমৌলিক বিচারে, ontologically, আলাপকে প্রাধান্য দিতে হয়। সংগীতও একপ্রকার জ্ঞান ; প্রথমে কোনো জ্ঞানই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না- অথচ স্বাধীন না হলে তার বৃদ্ধি নেই। বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের জন্য জ্ঞানকে আশ্রয় পরিত্যাগ করতে হয়, তবেই তার মূলতত্ত্ব আবিষ্কৃত হয়। তত্ত্বমূলের পাট করলে পরগাছা যায় মরে, গাছ তখন নিজের ফলফুলে শোভিত। হয়ে স্বকীয়তার গৌরব অনুভব করে। জ্ঞান চর্চার এই হল স্বকীয়তাসাধন। পরের অধ্যায়ও অবশ্য আছে, কিন্তু সেটা গাছে অর্কিড কোলানোর মতনই। অতএব, আলাপের রীতিনীতি বাদ দেওয়া যায় না। সংগীত-আলোচনা থেকে। ধরুন, ছায়ানটের আলাপ হচ্ছে। ছায়ানটের আরোহী অবরোহী, তার বাদী সম্বাদী, তার বিশেষ ‘পকড়া” দেখিয়ে ছায়ানটের ঘটস্থাপনা হল। কিন্তু সেইখানে থামলেই কি ছায়ানটের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হল- তার প্রকৃতি ফুটল ? এ যে সেই ভক্তের কথা যিনি প্রতিমার মুণ্ড পরাবার পূর্বেই বলেছিলেন, “আহা! মা যেন হাসছেন!' অন্য ভাষায় বলি-আমার আমিত্ব প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য নেতিবিচারের দ্বারা পার্থক্য-অনুভূতির কি কোনো প্রয়োজনই নেই? যে-সব যোগীর পূর্ণ সমাধি হয় তাদের বেলা তারা আছেন এই যথেষ্ট। সাহিত্যে যেমন, আপনার লেখায়, পরেশবাবু ও মাস্টার মশাই। তাঁরা সৎ, এর বেশি তাদের সম্বন্ধে জানিবার প্রয়োজনই হয় না। এঁরা পূর্ণ, এঁরা রুদ্ধগতি, আত্মসমাহিত, আত্মস্থ, আমাদের নমস্য। এরা হলেন শেষের কবিতা। কিন্তু অন্যের পক্ষে “বিহুৰ্ভবমি।” অভিত্ত্বের বিকাশে ছা নয় কি? আমি হব- বহু হব- এইটাই আটিস্টের প্রাণের কথা। আমি আছি-যেমন যোগীর। বহু হওয়াই যখন আটিস্টের ধর্ম, যখন সে যে-বস্তুর অন্তর উদঘাটিত (reveal) করতে চায় তার প্রকৃতি বুঝতে কোনাে substance কি OTTEST (KITIGR R1, processR GRIGIR, VORR revelation-AS VERTR mere statement FG নীরব থাকলে তার চলে না। অতিরিক্ত কর্তব্যের মধ্যে একটি হল-ক-বস্তু খ-বস্তুর নয় প্রমাণ করা। যেটুকু না হলে নয়। তারই আভাস দিয়ে মুখবন্ধ করলে আর্টিস্টের বহু হবার প্রবৃত্তিকে বঞ্চিত St 8o