পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী مSام তাহা হইলে জিজ্ঞাস্য এই যে “ঠেলা দিলে টেবিল উল্টে পড়ে” না বলিয়া আমরা কি বলিতে পারি। “টেবিলে উল্টে পড়ে?” “জল পাইলে ধান বাড়ে” না বলিয়া “ধানে বাড়ো” বলা যায় কি ? “গাছে ফুল ধরে।” এই যে দৃষ্টান্ত তিনি দিয়াছেন- এখানে "গাছের এ-বিভক্তি কি সপ্তমী বিভক্তি নহে? অর্থাৎ ফুল ধরা ব্যাপারটা গাছে ঘটে। ইহাই কি বক্তব্য নহে? এ বাক্যে “গাছে” শব্দ কি কর্তৃপদ? Vg “বেদে লেখে” “ইতিহাসে বলে” প্রভৃতি দৃষ্টান্তে বেদ ও ইতিহাস নিঃসন্দেহে অচেতন পদার্থীরাপে ব্যবহৃত হয় নাই। এখানে বেদ ও ইতিহাসকে মানুষরূপে দেখা হইতেছে। “ইংরেজ সৈন্যদলে ভারতবর্ষে আছে” বা “কয়েদীতে জেলে আছে।” এরূপ বাক্য কি বাংলাভাষায় সম্ভব ? “বালকে ঘুমায়।” অচেষ্টক ক্রিয়াবিশিষ্ট এই দৃষ্টান্তটি আমার মনে আসিয়াছিল। কিন্তু এরূপ প্রয়োগ চলে কি না সে সম্বন্ধে আমার দ্বিধা দূর হয় না। “ঘোড়ায় দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া ঘুমায়” বা “কুমীরে চোেখ চাহিয়া ঘুমায়া” বা “হাঁসপাতালের এই ঘরে রোগীতে ঘুমায়া” এরূপ প্রয়োগ প্রচলিত কি না সন্দেহ হইতে লাগিল। মুস্কিল এই যে, যে সব কথা আমরা সহজেই বলিয়া থাকি তাহদের সম্বন্ধে মনে প্রশ্ন উদয় হইলে আর দিশা পাওয়া যায় না। একবার মনে হয় বুঝি। এরূপ চলে, একবার মনে হয় চলে না। “ঘুমায়া” ক্রিয়া সম্বন্ধে যাহাঁই স্থির হউক না কেন, আমি যে লিখিয়াছিলাম সচেষ্টক ক্রিয়ার যোগেই কর্তৃপদে একার বসে- এ নিয়মটিকে গ্রাহ্য করা যায় না। “প্লেগে স্ত্রীলোকেই অধিক মরে” এস্থলে মরা ক্রিয়া অচেষ্টক সন্দেহ নাই। “বেশি আদর পেলে ভালমানুষেও বিগড়ে যায়", “অধ্যবসায়ের দ্বারা মূৰ্থেও পণ্ডিত হতে পারে”, “অকস্মাৎ মৃত্যুর আশঙ্কায় বীরপুরুষেও ভীত হয়” এসকল অচেষ্টক ক্রিয়ার দৃষ্টান্তে আমার নিয়ম খাটে না। কিন্তু “আছে' ক্রিয়ার স্থলে কর্তৃপদে একার বসে না, এ নিয়মের ব্যতিক্রম এখনো ভাবিয়া পাই নাই।” রবীন্দ্রনাথের আবেদনে সাড়া দিয়া যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি মাঘ সংখ্যায় “বাঙ্গালা ব্যাকরণে বিচাৰ্য্য” নামে লিখিয়াছিলেন : “আশ্বিন মাসের প্রবাসীতে শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় বাঙ্গালা বহুবচনের ‘এ’ বিভক্তি সম্বন্ধে আমার সূত্রের অসম্পূর্ণতা দেখাইয়াছেন। তঁহার দৃষ্টান্ত এই, ঠেলা দিলে টেবিল উল্টে পড়ে, আমরা টেবিলে বলি না। এখানে ঠেলা দিলে’ বলতে টেবিলের সামান্য বা স্বাভাবিক ধৰ্ম্ম পতন সিদ্ধ হইল না। ইংরেজ সৈন্যদল ভারতবর্ষে আছে- এখানে সৈন্যদলে হইতে পারে না। কারণ থাকা না থাকা কেবল সৈন্যদলের সামান্য ধৰ্ম্ম নহে। গাছে ফুল ধরে’ এখানে ধর ধাতুর কৰ্ম্ম ফুল বলিতে হইবে। ধর ধাতু অকৰ্ম্মকও হয়। যেমন, জল ধরিয়াছে, মেঘ ধরিয়াছে, এসব স্থলে ধর ধাতুর অর্থ বিরাম। আমার বোধ হয়, সামান্য ধৰ্ম্ম প্রকাশ ব্যতীত কৰ্ত্তার কর্তৃত্ব প্রকাশ উদ্দেশ্য হইলেও বহুবচনে এ লাগে। যেমন টাকায় টাকা করে, নদীতে নামিও না কুমীরে কামড়াবে। কৰ্ত্তা কারক ভিন্ন অন্য কারকেও সে কারক স্পষ্ট নির্দেশ করিতে হইলে বিভক্তি দিতে ठूझ ।" . ১৩১৮ কার্তিক সংখ্যা প্রবাসী-তে (পৃ ৯৫-৯৬) বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়৷ ” “বাংলা নির্দেশক” সম্বন্ধে কয়েকটি কথা” নামে আলোচনা করেন। ১০ ইংরেজি culture শব্দের বাংলা লইয়া” রবীন্দ্রনাথের ভাবনার পরিচয় প্রথম পাওয়া