পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী পড়িয়া বিশেষ আনন্দ লাভ করিলাম। বাংলা ভাষার সোদরা ভাষাগুলির সহিত পরিচয় না থাকাতে এ সকল বিষয়ে অনেক কথাই আন্দাজে বলিয়া থাকি। কিন্তু আন্দাজে বলারও একটা গুণ এই যে তাঁহাতে আলোচনার ও সংশোধনের অবকাশ দেওয়া হয়। চাণক্যের উপদেশ (যাবৎ কিঞ্চিৎ ন ভাষাতে)। যদি শিরোধাৰ্য করিয়া লইতোম। তবে তাহা শোভন হইত। কিন্তু কল্যাণকর হইত নাআমার তরফে এইমাত্র কৈফিয়ৎ। দুই অক্ষরের বিশেষণ বাংলা ভাষার স্বরান্ত হইয়া থাকে। এই নিয়ম সম্বন্ধে আমাদের কোনো পাঠকের নিকট হইতে প্রতিবাদ পাইয়াছি এবং এবারকার “শান্তিনিকেতন' পত্রে এই নিয়মের কচিৎ অন্যথা সম্ভাবনা স্বীকার করিয়া লইয়াছি। এই সম্ভাবনা আমার পূর্বেও জানা ছিল কিন্তু উক্ত নিয়মের উল্লেখ নিতান্ত প্রসঙ্গক্রমে ঘটাতে ভাষাপ্রয়োগে সতর্ক হইতে ভুলিয়াছিলাম। যাহা হউক আপনার মন্তব্য সম্বন্ধে আমার যাহা প্রশ্ন আছে তাহা পৌষের শান্তিনিকেতনে প্রকাশ করিব এবং আপনাকে পাঠাইয়া দিব। বাংলা ভাষাতত্ত্ব সম্বন্ধে আলোচনা করিতে ইচ্ছা হয়- কারণ ইহাতে আমার বিশেষ ঔৎসুক্য আছে কিন্তু আমার সম্বল বেশি নাই, তাই আন্দাজ লইয়া আমার কারবার। আমার মত ইস্কুলপলাতক ছেলের এই দুৰ্গতি । .৭ আগ্রহায়ণ ১৩২৬ এই পত্রে উল্লিখিত বিজয়চন্দ্র মজুমদারের মন্তব্য সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের প্রশ্ন’ যাহা পৌষের শান্তিনিকেতন পত্র-তে প্রকাশিত হয় তাহা বর্তমান খণ্ডে “বাদানুবাদ ২’ (পু ৪১৬-৪১৭ ) নামে সংকলিত। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে “বাদানুবাদ ২’-এ রবীন্দ্রনাথ “কবিরাজ মহাশয়ের নির্দেশমত' সংশোধনে রাজি হইয়াছিলেন, বর্তমান খণ্ডে ‘বাংলা কথ্যভাষা। [১]” প্রবন্ধটিতে তাহা গৃহীত হয় নাই। সাময়িক পত্রে প্রকাশিত রূপই মুদ্রিত হইয়াছে। ১৯ প্রবাসীতে প্রকাশিত এই প্রবন্ধের সূত্রে আশুতোষ ভট্টাচার্য ও বিজনবিহারী ভট্টাচার্য যে মন্তব্য করেন, সেগুলি প্রবাসী-র ফাঙ্গুনি-সংখ্যায় (পৃ ৭১১-১৩) প্রকাশিত হয়। ২২ চলিত ভাষার বানান সম্বন্ধে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের যে প্রসঙ্গ এই প্রবন্ধে আছে তাহার উল্লেখ মণীন্দ্ৰকুমার ঘোষকে লিখিত পত্রেও দেখা যায় ; চলতি বাংলার বানান সম্বন্ধে প্রশাস্ত বিধান নিয়েছিলেন সুনীতির কাছ থেকে। নিয়মগুলো মনে রাখতে পারি নে, অন্যমনস্ক হয়ে হাজারবার লঙ্ঘন করি। সেইজন্য অসঙ্গতি সৰ্ব্বদাই দেখা যায় { যে হেতু বাংলা অক্ষরে বিদেশী কথা সর্বদাই লিখতে হচ্চে সেইজন্যে অনেক নূতন ধ্বনির জন্যে নূতন অক্ষর রচনা করা আবশ্যক— আমাদের মনটা অত্যন্ত সাবেক কেলে বলে শাস্ত্র এর কোনো কিনারা হবে বলে বোধ হয় না। কৃতী বাংলার প্রভাব বাংলা সাহিত্যে বেড়ে চলেচে কিন্তু ভাষার এই যুগান্তরের সময় হাওয়াটা এলোমেলে। [এলোমেলো}} ভাবেই বইচে । এ সময়কার কর্ণধারের কাজ সুনীতির নেওয়া উচিত- আমার বয়স হয়ে গেছে। প্রাকৃত বানানের বিধিবিধান মনে রেখে প্রাফ সংশোধনের দায়িত্ব নেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব বলেই অন্যদের হাতে সে ভার পড়েচে- সেই অন্যরাও নানাবিধ মানুষের মধ্যে বিভক্ত সেই কারণেই উচ্ছঙ্খলতার অন্ত নেই। ইতি ১৯ ভাদ্র ১৩৩৮ ‘কেবল প্রাকৃত বাংলার অভিধানই নয়। নূতন অক্ষর রচনা' সম্বন্ধেও তিনি সুনীতিকুমারের মত ‘প্রত্যাশা করিয়াছিলেন - ১৩৩৪ সালের ৯ অগ্রহায়ণ তারিখে তিনি সুনীতিকুমারকে লিখিয়াছিলেন “নৃতন অক্ষর রচনা সম্বন্ধে যে আলোচনা হয়েছিল সেটাকে কাজে খাটাবার সময় এল।