পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় *4 oළු পণ্ডিতেরা যাই বলুন, নব-নবোম্মেষের পথে প্রতিভার মুক্তি কামনা এর মধ্যে যা দেখা যাচ্ছে তার থেকেই বাংলা দেশের যথার্থ প্রকৃতির নিরূপণ হতে পারে। প্রাণের স্পর্শশক্তি যেখানে প্রবল সেখানে প্রাণের সাড়া পেতে দেরি হয় না। --মহাজ্ঞাতি সদন । ২ ভাদ্র ১৩৪৬ ‘সুর ও সংগতি' অংশে রবীন্দ্রনাথের চিঠির সঙ্গে ধূর্জটিপ্ৰসাদের চিঠিও যুক্ত আছে বলিয়া “সংযোজন' বিভাগে তাহা মুদ্রিত হইল। এই চিঠিগুলি ‘সুর ও সঙ্গতি' নামে ১৯৩৫ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ধূর্জটিপ্ৰসাদকে লেখা রবীন্দ্রনাথের নিম্নোদধূত পত্রাংশগুলিও এই প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য : A ...আমাদের শাস্ত্রে বলে “দুহিতা কৃপণঃ পরং” গান জিনিসটা তেমনি। কথায় কথায় ওর কপাল ভাঙে ৷ কবিতা রেখে যাওয়া গেল ছাপার অক্ষরে- তার যদি গুণ থাকে, তবে আজ হোক কাল হোক সে নিজ গুণেই তরে” যেতে পারে। গান পরের কণ্ঠ নির্ভর করে। যে মানুষ রচনা করে সে তাকে জন্ম দেয় মাত্র, যে মানুষ গায় সেই তাকে হয় বাঁচায়, নয় মারে। জামাতা বাবাজির মতো আর কি। এমন দুর্ঘটনা প্রায় ঘটে যে, কাপড়ে কেরোসিন জ্বলিয়ে মরা তার পক্ষে কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। I এই কারণবশতই আমার স্নেহটা বেশি আমার গানের পরেই। স্বভাবের প্রবর্তনায় নিজের সব রচনার পরেই মানুষের মমতা থাকে। কিন্তু গানের সম্বন্ধে আমার দরদ কিছু অতিরিক্ত হবার কারণ এই যে ও পর্দােনশন, ওর প্রকাশ অবরুদ্ধ ; কণ্ঠাগত করে তবে তার পরিচয় সাধন করতে হয়, সে পরিচয় অধিকাংশ স্থলেই বিকৃত। আর-একটা কারণ এই যে, ও তার সহােদরার পিছনে পড়ে গেছে-- বাণী পেয়ে থাকেন প্ৰথম অৰ্ঘা- পরিশিষ্ট কিছু ও পেয়ে থাকে, সব সময়ে পায় না। এই অনাদর পূরণ করি নিজের মন থেকে । কাব্য রচনা করি যে মন নিয়ে ভাষায় তার সঙ্গে বোঝাপড়া চলে। বুদ্ধি নামক একটা চশমাধারী প্রবীণের কাছে তার জবাবদিহি আছে, সম্পূৰ্ণ না হোক তবু অনেকটা পরিমাণে । কাব্যরসের দিকে যদি খদ্দেরের ঝোক না থাকে, তত্ত্বব্যাখ্যা বের করতে কতক্ষণ! সুর থাকেন সম্পূর্ণভাবে অনির্বচনীয়ের মহলে। তত্ত্বের দাবি করলে তার মুখ বন্ধ-তিনি সাজিয়ে বসেছেন রসের পসরা। বুদ্ধি তীব্র হয়ে যে ওকালতি করবে। সে ওকালৎনামা তার নেই। রসের বিচার অব্যবহিত আনন্দবোধে। খাটি বুদ্ধি মানবলোকে দুর্লভ, খাটি আনন্দবোধ বোধ করি বা তার চেয়েও দুর্লভ। এইজন্যে অনির্বচনীয়কে নিয়ে যার কারবার, নালিশের কারণ ঘটলে তার পক্ষে আপিল-আদালত নেই- অপ্রমেয়কে প্রমাণ করবে। কী দিয়ে ? এই কারণেই রসের ব্যাভারে বেদনাটা বড় বেশি। কাব্যের চেয়ে সুরের ব্যথা আরো অধিক। কেননা কাবোর আছে অর্থ, সুরের আছে ধ্বনিমাত্র। ওর জটায় আছে কলকল্লোলিনী গঙ্গা, কিন্তু ঐ অকিঞ্চনের অর্থ নেই। গান নিয়ে যারা বাচসা করে তারা আর কিছু ধরবার পায় না, ধরে গিয়ে রাগরাগিণীর বাঁধা নিয়মকে। এই নিয়ম নিয়ে পাণ্ডিত্য। এই পণ্ডিতো সম্ভোগ নেই, অহংকার আছে। অহংকার আছে বললেও অবিচার করা হয়। অভ্যাসের যথাযথ পুনরাবৃত্তিতে মানুষ একশ্রেণীর সুখ পায়। যেটা প্রত্যাশা করতে সে অভ্যন্ত ঠিক সেইটিই যদি ঠিক জায়গায় এসে জোটে, তার মন মাথা ঝাকানি