পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য S 8ve কার। সাধ্য, বিশ্বধ্যেয়া অবহেলে তব আজ্ঞা ? কিন্তু প্ৰাণ মন কাদে গো স্মরিলে এ-সকল কথা! হায় কত যে আদরে কী আর কহিব তার ? ইহাতে লক্ষ্মীকে অত্যন্ত ভক্তবৎসলা বলিয়া মনে হয়, তবে যেন মায়ার আজ্ঞায় ভক্তগৃহ ছাড়িতে বাধ্য হইয়াছেন। আবার সপ্তম সর্গে তিনিই রাবণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করিতেছেন। লক্ষ্মী যে কীরূপ দেবতা তাহা আমরা বুঝিতে পারিলাম না এবং কখনো যে তঁাহাকে পূজা করিতে আমাদের সাহসী হইবে, তাহারও কোনো সম্ভাবনা দেখিলাম না। মেঘনাদবধে দেবতা ও সাধারণ মনুষ্যের মধ্যে কিছুমাত্র বিভিন্নতা রক্ষিত হয় নাই। ইন্দ্রাদির চরিত্র সমালোচনা-কালে পাঠকেরা তাহার প্রমাণ পাইবেন। ভারতী マiF > ミbr8 গত সংখ্যার সমালোচনা পড়িয়া কেহ কেহ কহিতেছেন, পুরাণে লক্ষ্মী চপলা, বলিয়াই বৰ্ণিত আছেন। কবি যদি পুরাণেরই অনুসরণ করিয়া থাকেন তাহাতে হানি কী হইয়াছে ? তাহাদের সহিত একবাক্য হইয়া আমরাও স্বীকার করি যে, লক্ষ্মী পুরাণে চপলাররূপেই বর্ণিত হইয়াছেন; কিন্তু চপলা অর্থে কী বুঝায় ? আজি আছেন, কাল নাই। পুরাণ লক্ষ্মীকে চপলা অর্থে পুরা এরূপ মনে করেন নাই, যে আমারই পূজা গ্রহণ করিবেন। অথচ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করিবেন। এ লুকোচুরি, কেবল দেবতা নহে মানব চরিত্রের পক্ষেও। কতখানি অসম্মানজনক তাহা কি পাঠকেরা বুঝিতে পারিতেছেন না ? কপটতা ও চপলতা দুইটি কথার মধ্যে যে অর্থগত প্ৰভেদ আছে ইহা বোধ হয় আমাদের নূতন করিয়া বুঝাইতে হইবে না। মেঘনাদবধের লক্ষ্মীর চরিত্ৰ-মধ্যে দুইটি দোষ আছে, প্ৰথম কপটতা, দ্বিতীয় পরস্পরবিরোধী ভাব। গুপ্তভাবে রাবণের শত্রুতসাধন করাতে কপটতা এবং কখনো ভক্তবৎসলা দেখানো ও কখনো তাহার বিপরীতাচারণ করাতে পরস্পরবিরোধী ভােব প্রকাশ পাইতেছে। পাঠকেরা কেহ যদি লক্ষ্মীর পূর্বোেক্তরূপ হীনচরিত্র পুরাণ হইতে বাহির করিতে পারেন তবে আমরা আমাদের ভ্ৰম স্বীকার করিব। কিন্তু যদিও বা পুরাণে ওইরূপ থাকে তথাপি কি রুচিবান কবির নিকট হইতে তাহা অপেক্ষা পরিমার্জিত চিত্র আশা করি ब् ? প্ৰথম সর্গে যখন ইন্দিরা ইন্দ্ৰজিৎকে তাহারা ভ্ৰাতার নিধন সংবাদ শুনাইলেন তখন মেঘনাদ, ফেলাইলা কনক বলয় দূরে, পদতলে পড়ি শোভিলা কুণ্ডল যথা অশোকের ফুল অশোকের তলে আভাময়! ধিক মোরে” কহিলা গভীরে স্বৰ্ণলঙ্কা, হেথা আমি বামাদল মাঝে ? : এই কি সাজে৷ আমারে, দশাননাত্মজ। আমি ইন্দ্ৰজিৎ; আন রথ ত্বরা করি; ঘুচাব এ অপবাদ বিধি রিপুন্দলে।