পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S88 রবীন্দ্র-রচনাবলী ইন্দ্ৰজিতের তেজস্বিতা উত্তম বর্ণিত হইয়াছে। রাবণ যখন ইন্দ্ৰজিৎকে রণে পাঠাইতে কাতর হইতেছেন তখন কি ছার সে নর, তারে ডরাও আপনি, রাজেন্দ্র ? থাকিতে দাস, যদি যাও রণে তুমি, এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে। হাসিবে মেঘ বাহন, রুষিবেন দেব অগ্নি। ইহাতেও ইন্দ্ৰজিতের তেজ প্রকাশিত হইতেছে, এইরূপে কবি ইন্দ্ৰজিতের বর্ণনা যেরূপ আরম্ভ করিয়াছেন, তাহা ভালো লাগিল। সাজিলা রবীন্দ্ৰৰ্যােভ বীর আভারণে, 率 মেঘবর্ণ রথ, চক্র বিজলীর ছটা; ধ্বজ ইন্দ্র চাপবৃণী; তুরঙ্গম বেগে আশুগতি। পূর্বে কবি রোদনের সহিত ঝড়ের যেরূপ অদ্ভুত তুলনা ঘটাইয়াছিলেন। এখানে সেইরূপ রথের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সহিত মেঘবিদ্যুৎ ইন্দ্ৰধনু বায়ুর তুলনা করিয়াছেন, কাব্যের মধ্যে এরূপ তুলনার অভাব নাই। কিন্তু একটিও আমাদের ভালো লাগে না। বর্ণনীয় বিষয়কে অধিকতর পরিস্ফুট করাই তো তুলনার উদ্দেশ্য কিন্তু এই মেঘ বিজলী ইন্দ্রচাপে আমাদের রথের যে কী বিশেষ ভাবোদয় হইল বলিতে পারি না। মেঘনাদবধের অধিকাংশ রচনাই কৌশলময়, কিন্তু কবিতা যতই সরল হয় ততই উৎকৃষ্ট। রামায়ণ হােমার প্রভৃতি মহাকাব্যের অন্যান্য গুণের সহিত সমালোচকেরা তাহাদিগের সরলতারও ব্যাখ্যা করিয়া থাকেন। মানস সকাশে শোভে কৈলাশ-শিখরী শিখি-পুচ্ছ চুড়া যেন মাধবের শিরে! সুশ্যামাঙ্গ শৃঙ্গাধর, স্বর্ণফুল শ্রেণী শোভে তাহে, আহা মারি পীতধরা যেন! নিবার-বারিত বারিরাশি স্থানে স্থানে বিশদ চন্দনে যেন চর্চিত সে বপুঃ! যে কৈলাস-শিখরী চূড়ায় বসিয়া মহাদেব ধ্যান করিতেছেন কোথায় তাহা উচ্চ হইতেও উচ্চ হইবে, কোথায় তাহার বর্ণনা শুনিলে আমাদের গাত্র রোমাঞ্চিত হইয়া উঠিবে, নেত্ৰ বিস্ফারিত হইবে, না শিখি-পুচ্ছ চুড়া যথা মাধবের শিরে!” মাইকেল ভালো এক মাধব শিখিয়াছেন, এক শিখিপুচ্ছ, পীতধরা, বংশীধ্বনি আর রাধাকৃষ্ণ কাব্যময় ছড়াইয়াছেন। কৈলাস-শিখরের ইহা অপেক্ষা আর নীচ বৰ্ণনা হইতে পারে না। কোনো কবি ইহা অপেক্ষা কৈলাস-শিখরের নীচ বৰ্ণনা করিতে পারেন না। এই সকল টানিয়া বুনিয়া বর্ণনা আমাদের কর্ণে অসম-ভূমি-পথে বাধা-প্রাপ্ত রথচক্রের ঘর্ঘর শব্দের ন্যায় কর্কশ লাগে।