পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տ8Եr রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী বাসষ্ঠী নামেতে সখি বসন্ত সৌরভা, তার গলা ধরি কাদি কহিতে লাগিলা; “ওই দেখো আইল লো তিমির যামিনী, কাল ভুজঙ্গিনীরূপে দংশিতে আমারে, • বাসক্তি! কোথায় সখি, রক্ষঃ কুলপতি, , r অরিন্দম ইন্দ্ৰজিৎ, এ বিপত্তি কালে ?” ইত্যাদি। পূর্বে কি বলি নাই মেঘনাদবধে হৃদয়ের কবিতা নাই, ইহার বর্ণনা সুন্দর হইতে পারে, ইহার দুইএকটি ভাব নূতন হইতে পারে, কিন্তু কবিতার মধ্যে হৃদয়ের উচ্ছাস অতি অল্প। আমরা অনেক করি। অথচ কেন হইল কী হইল কিছুই ভাবিয়া পাই না, কবির অণুবীক্ষণী কল্পনা তাহা আবিষ্কার করিয়া আমাদের দেখাইয়া দেয়। হৃদয়ের প্রত্যেক তরঙ্গ প্রতি-তরঙ্গ যাহার কল্পনার নেত্ৰ এড়াইতে পারে না তাহাকেই কবি বলি। তাহার রচিত হািদয়ের গীতি আমাদের হৃদয়ে চিরপরিচিত সঙ্গ শীর ন্যায় প্রবেশ করে। প্রমীলার বিরহ উচ্ছাস আমাদের হৃদয়ের দুয়ারে তেমন আঘাত করে না তো, কালভুজঙ্গিনী-স্বরূপ তিমিরযামিনীর কাল, চন্দ্ৰমার অগ্নি-কিরণও মলয়ের বিষজ্বালাময় কবিতার সহিত অস্তমিত হইয়াছে। প্ৰমীলা বাসষ্ঠীকে কহিলেন চলো, সখি, লঙ্কাপুরে যাই মোরা সবে। বাসন্তী কহিল কেমনে পশিবে লঙ্কাপুরে আজি তুমি? অলঙঘ্য সাগরসম রাঘবীয় চমূ বেড়িছে তাহায় ? রুষিলা দানববালা প্ৰমীলা রূপসী ! কী কহিলি, বাসস্তি ? পৰ্বতগুহ ছাড়ি কার হেন সাধ্য যে সে রোধে তার গতি ? দানবনন্দিনী আমি, রক্ষঃ কুলবধূ, রাবণ শ্বশুর মম, মেঘনাদ স্বামীআমি কি ডরাই, সখি, ভিখারী রাঘবে? পশিব লঙ্কায় আজি নিজ ভুজবলে, দেখিব কেমনে মোরে নিবারে নৃমণি? এখানটি অতি সুন্দর হইয়াছে, তেজস্বিনী প্ৰমীলা আমাদের চক্ষে অনলের ন্যায় প্রতিভাত হইতেছেন। - তৎপরে প্রমীলার যুদ্ধযাত্রার উপকরণ সজ্জিত হইল। মেঘনাদবধের যুদ্ধসজ্জা বর্ণনা, সকলগুলিই প্রায় একই প্রকার। বর্ণনাগুলিতে বাক্যের ঘনঘটা আছে, কিন্তু বিদ্যুচ্ছটাকৃতি বিশ্বোজ্জ্বল” ভাবচ্ছটা কই? সকলগুলিতেই মন্দুরায় হেষে আশ্ব’ নাদে গজ বারী মাঝে” “কাঞ্চন কাঞ্চক বিভা” ভিন্ন আর কিছুই নাই। চড়িল ঘোড়া একশত চেড়ি ...ভুেষিল অশ্ব মগন হরযে দানব দলনী পদ্ম পদযুগ ধরি বক্ষে, বিরাপাক্ষ সুখে নাদেন যেমতি।