পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য । ধরে, দেবি, ভাবি দেখো বিশুদ্ধ কাঞ্চন কাতি কত মনোহর! “বাছা’র সহিত মাতা’র কী চমৎকার মিষ্টালাপ হইতেছে দেখিয়াছেন? মলম্বা অম্বরের (গিলটি) উদাহরণ দিয়া, মদন কথাটি আরও কেমন রসময় করিয়া তুলিয়াছে দেখিয়াছেন ? মোহিত মোহিনী রূপে; কহিলা হরযে পশুপতি, “কোন হেথা একাকিনী দেখি, এ বিজন স্থলে তোমা, গণেন্দ্ৰ জননি ? কোথায় মৃগেন্দ্ৰ তব কিঙ্কর, শঙ্কারি ? কোথায় বিজয়া, জয়া ?” হাসি উত্তরিলা সুচারু। হাসিনী উমা; এ দাসীরে ভুলি, হে যোগীন্দ্ৰ বহু দিন আছ এ বিরলে তেঁই আসিয়াছি নাথ, দরশন আশে পা দুখানি। যে রমণী পতিপরায়ণা, সহচরী সহ সে কি যায় পতিপাশে ?” পতিপরায়ণা নারীর সহচরীর সহিত পতিসমীপে যাইতে যে নিষেধ আছে, এমন কথা আমরা কোনো ধর্মশাস্ত্ৰে পড়ি নাই। পুনশ্চ মহাদেবের নিকট দাসীভাবে আত্মনিবেদন করা পার্বতীর পৌরাণিক চরিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত। উচ্চ দেব-ভাবের সহিত দম্পতির একাত্মভাবে যেরূপ সংলগ্ন হয়, উচ্চ-নীচ ভাব সেরাপ নহে। রাবণের সহিত যখন কার্তিকেয়ের যুদ্ধ হইতেছে, তখন দুৰ্গা কাতর হইয়া সখী বিজয়াকে কহিতেছেন যা লো সৌদামিনী গতি, বাছার কোমল দেহে । ইত্যাদি। অসুরমর্দিনী শক্তিবৃপিণী ভগবতীকে ‘বাছার কোমল দেহে রক্তধারা” দেখিয়া এরূপ অধীর করা বড়ো সুকল্পনা নহে; পৃথিবীতে এমন নারী আছেন, যাহারা পুত্ৰকে যুদ্ধ হইতে নিরত করিবার জন্য সহচরী প্রেরণ করেন না; তবে মহাদেবী, পার্বতীকে এত ক্ষুদ্র করা কতদূর অসংগত হইয়াছে, সুরুচি পাঠকদের তাহা বুঝিবার জন্য অধিক আড়ম্বর করিতে হইবে না। ভারতী কার্তিক ১২৮৪ বাল্মীকি রামের চরিত্র-বর্ণনাকালে বলিয়াছেন, যম ও ইন্দ্রের ন্যায় তাহার বল, বৃহস্পতির ন্যায় তাহার বুদ্ধি, পর্বতের ন্যায় তাহার ধৈর্য।*... ক্ষোভের কারণ উপস্থিত হলেও তিনি ক্ষুব্ধ হন না। যখন কৈকয়ী রামকে বনে যাত্রা করিতে আদেশ করিলেন, তখন মহানুভব রাম কৈকেয়ীর এইরূপ কঠোর বাক্য শুনিয়া কিছুমাত্র ব্যথিত ও শোকাবিষ্ট হইলেন না।. চন্দ্রের যেমন হ্রাস, , সেইরূপ রাজ্যনাশ তাহার স্বাভাবিক শোভাকে কিছুমাত্র মলিন করিতে পারিল না! জীবন্মুক্ত যেমন সুখে দুঃখে একই ভাবে থাকেন, তিনি তদুপই রহিলেন; ফলতঃ ঐ সময়ে তাহার চিত্তবিকার কাহারই অণুমাত্র লক্ষিত হইল না।... ঐ সময় দেবী কৌশল্যার অন্তঃপুরে অভিষেক

  • উদধূতিগুলি হেমচন্দ্ৰ ভট্টাচার্য -কৃত রামায়ণ হইতে।

-