পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য X \eS করিব। এই পামর আজ দৃষ্টিবিষ ভীষণ সৰ্পের দৃষ্টিতে পড়িয়াছে, কিছুতেই ইহার নিস্তার নাই। সৈন্যগণ, এক্ষণে তোমরা শৈলশিখরে উপবিষ্ট হইয়া আমাদের এই তুমুল সংগ্রাম প্রত্যক্ষ করো। আমি আজ এমন ভীষণ কাৰ্য করিব যে, আদ্যকার যুদ্ধে গন্ধর্বেরা, কিন্নরেরা, দেবরাজ ইন্দ্ৰ, চরাচর সমস্ত লোক, স্বর্গের সমস্ত দেবতারা রামের রামত্ব প্রত্যক্ষ করিয়া যতকাল পৃথিবী রহিবে। ততকাল তাহ ঘোষণা করিতে থাকিবে। এই বলিয়া মহাবীর রাম মেঘ হইতে জলধারার ন্যায় শরাসন হইতে অনবরত শার নিক্ষেপ করিতে লাগিলেন। উভয়পক্ষের নিক্ষিপ্ত শার গতিপথে সংঘর্ষপ্রাপ্ত হওয়াতে একটি তুমুলশব্দ শ্রতিগোচর হইতে লাগিল। এই তো রামায়ণ হইতে লক্ষ্মণের পতনদৃষ্টে রামের অবস্থা বর্ণনা উদধূত করা গেল। এক্ষণে রামায়ণের অনুকরণ করিলে ভালো হইত। কিনা, আমরা তৎসম্বন্ধে কিছু বলিতে চাহি না, ভারতী পৌষ ১২৮৪ রামের নিকট বিদায় লইয়া লক্ষ্মণ এবার যুদ্ধ করিতে যাইতেছেন, মায়ার প্রসাদে অদৃশ্য হইয়া লক্ষ্মণ লঙ্কাপুরীতে প্রবেশ করিয়া— হেরিলা সভয়ে বলী সর্বভুকররূপী বিরূপক্ষ মহার্যক্ষঃ, প্ৰক্ষেড়নধারী। ইত্যাদি। কবি কাব্যের স্থানে স্থানে অযত্ন সহকারে, নিশ্চিন্তভাবে দুই-একটি কথা ব্যবহার করিয়াছেন, কিন্তু তাহার ফল বড়ো ভালো হয় নাই। 'সভয়ে” কথাটি এখানে না ব্যবহার করিয়াও তিনি সমস্ত বর্ণনাটি সর্বাঙ্গসুন্দরীরূপে শেষ করিতে পারিতেন। প্ৰবল পবন-বলে বিলীন্দ্ৰ পাবনি হনু, অগ্রসরি শূর, দেখিলা সভয়ে - বীরাঙ্গনা মাঝে রঙ্গে প্ৰমীলা দানবী। হনুমানের প্রমীলাকে দেখিয়া এত ভয় কেন হইল তাহা জানেন ? হনুমান রাবণের প্রণয়িনীদের দেখিয়াছেন, ‘রক্ষঃকুলবধু ও রক্ষঃকুলবালাদের’ দেখিয়াছেন, শোকাকুলা রঘুকুলকমলকে দেখিয়াছেন, “কিন্তু এহেন রূপ-মাধুরী কভু এ ভুবনে’ দেখেন নাই বলিয়াই এত সভয়! '-কুম্ভকৰ্ণ বলী ভাই মম, তায় আমি জাগানু অকালে ভয়ে।” যাহা হউক এরূপ সভয়ে, সত্ৰাসে, সজল নয়নে প্রভৃতি অনেক কথা কাব্যের অনেক স্থানে অযথারূপে ব্যবহৃত হইয়াছে। এরূপ দুটি-একটি ক্ষুদ্র কথার ব্যবহার লইয়া এতটা আড়ম্বর করিতেছি কেন? তাহার অনেক কারণ আছে। তুলিকার একটি সামান্য স্পর্শ মাত্রেই চিত্রের অনেকটা এদিক-ওদিক হইয়া যায়। কবি লিখিবার সময় লক্ষ্মণের চিত্রটি সমগ্রভাবে মনের মধ্যে অঙ্কিত করিয়া লইতে পারেন নাই; নহিলে যে লক্ষ্মণ দৰ্শন-ভীষণ মূর্তি’ মহাদেবকে দেখিয়া অস্ত্ৰ উদ্যত করিয়াছিলেন, তিনি প্ৰক্ষেড়নধারী বিরূপক্ষ রাক্ষসের প্রতি সভয়ে দৃষ্টিপাত করিলেন কেন? সভয়ে” এই কথাটির ব্যবহারে আমরা লক্ষ্মণের ভয়গ্ৰস্ত মুখশ্ৰী স্পষ্ট দেখিতেছি, ইহাতে রঘুজ-আজ-অঙ্গজ দশরথতনয় সৌমিত্রির প্রতি যে আমাদের ভক্তি বাড়িতেছে তাহা নহে। ' ইহার পরে লক্ষ্মণের সহিত ইন্দ্ৰজিতের যে যুদ্ধবর্ণনা করা হইয়াছে, তাহাতে যে লক্ষ্মণের নীচতা, কাপুরুষতা, অক্ষত্ৰোচিত ব্যবহার স্পষ্ট প্রকাশ পাইয়াছে— তাহা কে অস্বীকার করিবেন? কবি তাহা ভ্ৰমক্ৰমে করেন নাই, ইচ্ছাপূর্বক করিয়াছেন, তিনি একস্থলে ইন্দ্ৰজিতের মুখ দিয়াই । কহিয়াছেন, S - || S. S