পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য SVV) আপনার শুণ্ড বিক্ষেপ করিয়া থাকে, তদুপ তিনি হস্তাগ্র বিক্ষিপ্ত এবং নানাপ্রকার গ্ৰীবাভঙ্গি করিয়া বক্রভাবে কটাক্ষ নিক্ষেপপূর্বক কহিতে লাগিলেন, আর্য! ধর্মদোষ পরিহার এবং স্বৰ্দষ্টাস্তে লোকদিগকে মর্যাদায় স্থাপন এই দুই কারণে বনগমনে আপনার যে আবেগ উপস্থিত হইয়াছে, তাহা নিতান্ত ভ্ৰাস্তিমূলক।. আপনি অনায়াসেই দেবকে প্রত্যাখ্যান করিতে পারেন, তবে কি নিমিত্ত একান্ত শোচনীয় অকিঞ্চিৎকর দৈবের প্রশংসা করিতেছেন ?... বীর! এই জঘন্য ব্যাপার আমার কিছুতেই সহ্য হইতেছে না! এক্ষণে আমি মনের দুঃখে যাহা কিছু কহিতেছি, আপনি ক্ষমা করবেন। আরও আপনি যে ধর্মের মর্ম অনুধাবন করিয়৷ মুগ্ধ হইতেছেন, যাহার প্রভাবে আপনার মতদ্বৈধ উপস্থিত হইয়াছে আমি সেই ধমকেই দ্বেষ করি। আপনি কর্মক্ষম, তবে কি কারণে সেই ন্ত্রৈণ রাজার ঘূণিত অধৰ্মপূর্ণ বাক্যের বশীভূত হইবেন? এই যে রােজ্যাভিষেকের বিঘ্ন উপস্থিত হইল, বরদান ছলই ইহার কারণ; কিন্তু আপনি যে তাহা স্বীকার করিতেছেন না, ইহাই আমার দুঃখ; ফলতঃ আপনার এই ধর্মবুদ্ধি নিতান্তই নিন্দনীয় সন্দেহ নাই।... তাহারা আপনার রােজ্যাভিষেকে বিয়াচরণ করিলেন, আপনিও তাঁহা দৈবকৃত বিবেচনা করিতেছেন, অনুরোধ করি, এখনই এইরূপ দুবুদ্ধি পরিত্যাগ করুন, এই প্রকার দৈব কিছুতেই আমার গ্ৰীতিকর হইতেছে না। বল-বিক্রমের শ্লাঘা করিয়া থাকে, তঁাহারা কদাচই দৈবের মুখাপেক্ষা করেন না। যিনি স্বীয় পৌরুষপ্রভাবে দৈবকে নিরস্ত করিতে সমর্থ হন, দৈববালে তঁহার স্বার্থহানি হইলেও অবসন্ন হন না। আর্য! আজি লোকে দৈববাল এবং পুরুযের পৌরুষ উভয়ই প্ৰত্যক্ষ করিবে। অদ্য দৈব ও - পুরুষকার উভয়েরই বলাবল পরীক্ষা হইবে। যাহারা আপনার রােজ্যাভিষেক দৈবপ্রভাবে প্রতিহত দেখিয়াছে, আজ তাহারাই আমার পৌরুষের হস্তে তাহাকে পরাস্ত দেখিবো। আজ আমি উচ্ছঙ্খল দুৰ্দান্ত মদম্রাবী মত্ত কুঞ্জরের ন্যায় দৈবকে স্বীয় পরাক্রমে প্রতিনিবৃত্ত করিব। পিতা দশরথের কথা দূরে থাকুক, সমস্ত লোকপাল, অধিক কি ত্ৰিজগতের সমস্ত লোকও আপনার রােজ্যাভিষেকে ব্যাঘাত দিতে পরিবে না। যাহারা পরস্পর একবাক্য হইয়া আপনার অরণ্যবাস সিদ্ধান্ত করিয়াছে, আজ তাহাদিগকেই চতুর্দশ বৎসরের নিমিত্ত নির্বাসিত হইতে হইবে। আপনার অনিষ্ট সাধন করিয়া ভরতকে রাজ্য দিবার নিমিত্ত রাজা ও কৈকেয়ীর যে আশা উপস্থিত হইয়াছে, আজ আমি তাহাই দগ্ধ করিব। যে আমার বিরোধী, আমার দুর্বিষহ পৌরুষ যেমন তাহার দুঃখের কারণ হইবে, তদুপ দৈববল কদাচই সুখের নিমিত্ত হইবেক না। ...প্ৰতিজ্ঞা করিতেছি, আমিই আপনকার রাজ্য রক্ষা করিব, নতুবা চরমে যেন আমার বীরলোক লাভ না হয়। তীরভূমি যেমন মহাসাগরকে রক্ষা করিতেছে, তদুপ। আমি আপনার রাজ্য রক্ষা করিব। এক্ষণে আপনি স্বয়ংই যত্নবান হইয়া মাঙ্গলিক দ্রব্যে অভিষিক্ত হউন। ভূপালগণ যদি কোনো প্রকার বিরোধাচরণ করেন, আমি একাকীই তাহাদিগকে নিবারণ করিতে সমর্থ হইব। আর্য! আমার যে এই ভুজদণ্ড দেখিতেছেন, ইহা কি শরীরের সৌন্দর্য সম্পাদনার্থ? যে কোদণ্ড দেখিতেছেন, ইহা কি কেবল শোভার্থ? এই খড়েগ কি কাষ্ঠবন্ধন, এই শরে কি কাষ্ঠভার অবতরণ করা হয় ?- মনেও করিবেন না; এই চারিটি পদার্থ শত্রুবিনাশার্থই ব্যবহৃত হইয়া থাকে। এক্ষণে বজধারী ইন্দ্ৰই কেন আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হউন-না, বিদ্যুতের ন্যায় ভাস্বর তীক্ষ্মধার অসি দ্বারা তঁহাকেও খণ্ড খণ্ড করিয়া ফেলিব। হস্তীর শুণ্ড অশ্বের উরুদেশ এবং পদাতিক মস্তক আমার খড়েগ চূর্ণ হইয়া সমর্যাঙ্গন একান্ত গহন ও দুরবগাহ করিয়া তুলিবে। অদ্য বিপক্ষেরা আমার অসিধারায় ছিন্নমস্তক হইয়া শোণিতলিপ্ত দেহে প্ৰদীপ্ত পাবকের ন্যায় বিদ্যুদামশোভিত মেঘের ন্যায় রণক্ষেত্রে নিপতিত হইবে।... যে হস্ত চন্দন লেপন, অঙ্গদ ধারণ, ধন দান ও সুহৃদবর্গের প্রতিপালনের সম্যক উপযুক্ত, অদ্য সেই হস্ত আপনার অভিষেক-বিঘাতকদিগের নিবারণ বিষয়ে স্বীয় অনুরূপ কাৰ্য সাধন করিবে। এক্ষণে আজ্ঞা করুন আপনার কোন শক্রকে ধন প্রাণ ও সুহৃদগণ হইতে বিযুক্ত করিতে হইবে। আমি আপনার