পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տ Գ8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী আনিয়াছিল। স্যাকসনদের বুদ্ধি তখন তীব্র নহে। তাঁহাদের মধ্যে প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তি অতি অল্পই। জন্মিয়াছে। তাঁহাদের কবিতার উপাখ্যানসমূহের ভালোরূপ ধারাবাহিক যোগ নাই, তাহাদের কবিদের ঔপন্যাসিক ক্ষমতা তেমন ছিল না। স্যাকসনদের মধ্যে বিদ্যা-প্রচার করিবার জন্য অনেকবার চেষ্টা করা হইয়াছিল, কিন্তু সে বিষয়ে কেহই কৃতকার্য হয় নাই। স্যাকসন ধর্মচার্যদের মধ্যে যে বিদ্যাচর্চার আরম্ভ হয় তাহা কয়েক শতাব্দী মাত্র থাকে, তাহার পরেই আবার সমস্ত অন্তৰ্হিত হইয়া যায়। নর্মানরা আসিয়া স্যাকসন খৃস্ট-পুরোহিতদিগের অজ্ঞতা দেখিয়া অতিশয় বিরক্ত হয়। অ্যাংলো স্যাকসন সাহিত্য অতি সামান্য। অ্যালফ্রেডের গদ্যগ্রন্থ ও বােউলফ এবং অন্যান্য দুই-একটি কবিতা লইয়াই তাঁহাদের সাহিত্যের যথা-সর্বস্ব। স্বাধীনতা-প্রিয়তা ও বীরত্ব স্যাকসন জাতীয়দিগের প্রধান গুণ। তাঁহাদের সমস্ত স্বভাব পৌরুযেই গঠিত। সকলেই আপনার আপনার প্রভু। রাজার সহিত প্রজার তেমন প্রভেদ ছিল না- স্যাকসন রাজ্যের শেষাশেষি সেই প্ৰভেদ জন্মে। জর্মনিতে ভীরুদিগকে পন্ধে পুতিয়া বিনষ্ট করিত। স্যাকসনেরা যাহাকে প্রধান বলিয়া মানে তাহার জন্য সকলই করিতে পারে। যে তাহার প্রধানকে না লইয়া যুদ্ধক্ষেত্র হইতে প্রত্যাবর্তন করে, তাহার বড়ো আখ্যাতি। যে প্রধানের গৃহে জন্য প্ৰাণদান করিতে তাহারা কাতর নহে-- এ ভাব তাহদের কবিতার যেখানে-সেখানে প্ৰকাশ পাইয়াছে। স্যাকসন জাতিদের কল্পনা ও সৌন্দৰ্য-প্রীতি ছিল না, তাহাদের চরিত্রে কার্যকরী বুদ্ধি ও পৌরুষ অতিমাত্র ছিল। ভারতী শ্রাবণ ১২৮৫ বিয়াত্ৰিচে, দান্তে ও তাহার কাব্য ইতালিয়ার এই স্বপ্নময় কবির জীবন গ্রন্থের প্রথম অধ্যায় হইতে শেষ পর্যন্ত বিয়াত্ৰিচে (Beatrice)। বিয়াত্রিচেই তঁহার সমুদয় কাব্যের নায়িকা, বিয়াত্রিচেই তঁহার জীবন-কাব্যের নায়িকা! বিয়াত্ৰিচেকে বাদ দিয়া তাহার কাব্য পাঠ করা বৃথা, বিয়াত্ৰিচেকে বাদ দিলে তাহার বিয়াত্ৰিচের স্তোত্র। বিয়াত্ৰিচের প্রতি প্রেমই তাহার প্রথম কবিতার উৎস উৎসারিত করিয়া দেয়। র্তাহার প্রথম গীতিকাব্য ভিটা নুওভা’র (Vita Nuova) প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত বিয়াত্ৰিচেরই আরাধনা, ইহার কিয়দ্দূর লিখিয়াই তাহার বিরক্তি বােধ হইল— তাহার মনঃপূত হইল না; পাঠকের চক্ষে বিয়াত্ৰিচেকে দূর-স্বর্গের অলৌকিক দেবতার ন্যায় চিত্রিত করিয়াও তিনি পরিতৃপ্ত হইলেন না। এই কাব্যের শেষ ভাগে তিনি লিখিতেছেন— ‘এই পর্যন্ত লিখিয়াই আমি এক অতিশয় আশ্চর্য স্বপ্ন দেখিলাম- সেই স্বপ্নে যাহা দেখিলাম তাহাতে এই স্থির করিলাম যে, আমি সেই প্রিয় দেবীর বিষয় যাহা লিখিতেছি তাহা তাহার যোগ্য নহে- যে পর্যন্ত ইহা অপেক্ষা যোগ্যতার কবিতা না লিখিতে পারিব সে পর্যন্ত আর লিখিব না। ইহা নিশ্চয়ই যে, তিনি (বিয়াত্রিচে) জানিতেছেন, আমি তাহার বিষয়ে যোগ্যতার কবিতা লিখিবার ক্ষমতা প্ৰাপ্তির জন্য প্ৰাণপণে চেষ্টা করিতেছি। সমুদয় জীবের প্রাণদাতা ঈশ্বর-প্ৰসাদে আর কিছুদিন যদি বাঁচিয়া থাকি, তবে তাহার বিষয়ে এমন লিখিব, যাহা এ পর্যন্ত কোনো মহিলার সম্বন্ধে কেহ কখনো লেখে নাই।” এই স্থির করিয়াই তিনি র্তাহার মহাকাব্য ‘ডিভাইনা কমেডিয়া’ (Divina Commedia) fGCor G বিয়াত্রিচে সম্বন্ধে এমন কথা বলেন, যাহা কোনো মহিলা